দেশ সেরা হয়ে জাপান যাচ্ছেন ঢাকা কলেজের তাশরীফ
- হাসান তামিম
- প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৫:২৩ PM , আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:০২ PM
দেশব্যাপী সৃজনশীল মেধা অনুসন্ধানে সরকারের সমন্বিত কর্মসূচি ‘বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ’ প্রতিযোগিতায় বিজ্ঞান শাখায় সেরা স্থান অর্জন করেছেন ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী তাশরীফ আহমেদ তুহিন। সেই সুবাদে সফলতার পুরস্কার হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সফরে সাতদিনের জন্য জাপান সফরের সুযোগ পেয়েছেন এই শিক্ষার্থী।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় জাপানের টোকিওর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার কথা রয়েছে তার।
অনন্যসাধারণ মেধা অন্বেষণের লক্ষ্যে এবং শহর ও গ্রামের শিক্ষা বৈষম্য নিরসনের জন্যই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এই মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতার। উন্মুক্ত প্রতিযােগিতার মাধ্যমে অসাধারণ মেধাসম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রী অন্বেষণ করা এবং তাদের উৎসাহ দিতে এককালীন বিশেষ মেধা বৃত্তি এই কর্মসূচীর আওতায় রয়েছে।
আরও পড়ুন: বিএনপিকে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে মাঠে ছাত্রলীগ
এবছর কলেজ পর্যায়ে বিজ্ঞান বিষয়ে সেরা স্থান অর্জন করা তাশরীফ, ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি কলেজের আবাসিক ব্যবস্থাপনায় থাকেন উত্তর ছাত্রাবাসে। নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার উমার ইউনিয়নের বাসিন্দা এই শিক্ষার্থী প্রথমবারের মতো গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেই করেছেন বাজিমাত। উচ্চ মাধ্যমিকে ঢাকা কলেজে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম বর্ষেই দেশের সব জেলা, উপজেলা, মহানগরের নামি-দামি প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে কলেজ পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তার এমন অর্জনে গর্বিত কলেজ প্রশাসনও।
অদম্য এই শিক্ষার্থী বলেন, বড় একটি স্বপ্ন নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার জন্য বাবা-মাকে ছেড়ে গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছি। এখন ঢাকা কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছি। আমি কলেজ পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতার বিজ্ঞান শাখায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। সেজন্য পর্যায়ক্রমে কলেজ, উপজেলা, মহানগর এবং সবশেষে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হয়েছে। সম্মানিত শিক্ষকদের সহযোগিতা সুপরামর্শ, মা-বাবার দোয়া আর আমার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকার কারণেই সবাইকে পেছনে ফেলে সামনে আসতে পেরেছি।
প্রতিযোগিতায় কি ধরনের প্রজেক্ট উপস্থাপন করে সেরা স্থান অর্জন করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। সরকারি নির্দেশনার পরও মোটরসাইকেল চালক বা আরোহীদের অনেককেই হেলমেট ব্যবহার করানো যাচ্ছেনা। তাই আমি এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করেছি যেখানে চালক বা সঙ্গী আরোহী হেলমেট না পরা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চালু হবেনা। আবার মোটরসাইকেল চলন্ত অবস্থায়ও যদি চালক বা আরোহী মাথা থেকে হেলমেট খুলে ফেলেন তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মোটরসাইকেল বন্ধ হয়ে যাবে। এই প্রজেক্ট তৈরিতে ঢাকা কলেজের বিজ্ঞান ক্লাবের মেন্টর শাহীন স্যার ও রসায়ন বিভাগের মোঃ আব্দুল হামিদ স্যার সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন। স্যারদের প্রতি আমি অনেক বেশি কৃতজ্ঞ। আমি পারবো কিনা এমন দ্বিধা ও সংশয় এর মাঝেই তাঁরা আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে উৎসাহিত করেছেন। প্রত্যাশা করছি ভবিষ্যতেও ঢাকা কলেজ থেকে এমন অর্জন অব্যাহত থাকবে।
তাশরিফের এমন অর্জনে ঢাকা কলেজ পরিবার গর্বিত উল্লেখ করে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, বিজ্ঞানমনস্ক জাতি তৈরিতে ঢাকা কলেজের অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের শিক্ষকদের তত্ত্ববধানে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর তাশরিফ যে প্রযুক্তি দেখিয়েছে নিঃসন্দেহে এটি চমৎকার উদ্ভাবন। এর মাধ্যমে দেশ জাতি তথা সমগ্র পৃথিবী উপকৃত হতে পারে। আমরা চেষ্টা করছি ঢাকা কলেজ বিজ্ঞান ক্লাবের কার্যক্রম আরো বেশি সম্প্রসারিত করার মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন উদ্ভাবনী শক্তি বাড়িয়ে দেওয়ার। একইসাথে অন্যান্য ক্ষেত্রেও যেন মেধার বিকাশ ঘটে সে জন্য বিভিন্ন ফেস্টের আয়োজনসহ শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা মূলক কার্যক্রম আরো বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীরা ভাষা ও সাহিত্য (বাংলা, ইংরেজি), দৈনন্দিন বিজ্ঞান, গণিত ও কম্পিউটার, বাংলাদেশ স্টাডিজ (ইতিহাস, পৌরনীতি, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান) এবং বাংলাদেশ স্টাডিজ ও মুক্তিযুদ্ধ এ পাঁচটি বিষয়ে অংশ নিয়েছেন। এতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া শিক্ষার্থীদের “বছরের সেরা মেধাবী” হিসেবে স্বীকৃতি এবং এককালীন বিশেষ মেধাভিত্তিক বৃত্তি দেওয়া হবে বলেও জানা যায়।