শিক্ষকদের ভাষা ভাবনা

কর্মক্ষেত্রে ভাষার প্রয়োগ আর ব্যক্তি জীবনে অনুশীলন এক নয়

অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন, সহকারী অধ্যাপক শর্মিষ্ঠা দাস ও সহযোগী অধ্যাপক ফজলুল পলাশ
অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন, সহকারী অধ্যাপক শর্মিষ্ঠা দাস ও সহযোগী অধ্যাপক ফজলুল পলাশ   © টিডিসি ফটো

পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের নিকটে প্রিয় মাতৃভাষা। মাতৃভাষায় অভিব্যক্তি প্রকাশ করার মতো তৃপ্তি আর কিছুতেই নেই। ভাষায় লুকায়িত রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি ও সত্ত্বা। বিশ্বে প্রথম জাতি হিসেবে আমরাই যুদ্ধ করেছি ভাষার জন্য। বিশ্বের সকল ভাষাকে সম্মান দিতেই প্রতি বছর বিশ্বদরবারে পালিত হয় ফেব্রুয়ারির ২১তম দিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। ভাষার মাসে ভাষা নিয়ে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের ভাবনা ও প্রত্যাশাগুলো তুলে ধরেছেন সাদিয়া তানজিলা।

ডিআইইউ’র ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন জানান, মাতৃভাষা রক্ষায় যে উদ্দীপনা ও ত্যাগ শিকারের অদম্য শক্তি ছিল, বর্তমান প্রজন্মে তা অনেকটাই বিকৃতি লক্ষণীয়। ভাষা শহীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস জেনেই ভাষার মর্যাদা রক্ষা সম্ভব নয়, বরং ইতিহাসকে নিজের মধ্যে লালন করতে হবে। তবেই ভাষার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকবে।

বর্তমানে অনেকেই ইংরেজিতে অনায়াসে কথা বলতে পারি কিন্তু বাংলায় আটকে যাই। ইংরেজি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ভাষা হিসেবে এর গুরুত্ব অবশ্যই রয়েছে, তবে স্বদেশী ভাষার লালন অধিক প্রয়োজন। ইতিহাস জানতে হবে, নিজস্ব সংস্কৃতিকে ধারণ করতে না পারলে নামেই বাঙালি, মনন থাকবে সারশূন্য।

ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শর্মিষ্ঠা দাস জানান, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অফুরান ঐতিহ্যের ছিটেফোঁটাও যদি কেউ আহরণ করতে চায়, তিনি অনেক সমৃদ্ধ হবে। এজন্য ইচ্ছে শক্তিই যথেষ্ট। ডিজিটাল বিশ্বে সব কিছুই হাতের মুঠোয় পাওয়া যায়, তাই বইয়ের পাশাপাশি মুঠোফোনের ইন্টারনেট থেকেও সমৃদ্ধ হওয়া সম্ভব। এজন্য সবারই প্রমিত বাংলা চর্চা করা উচিত।

আরও পড়ুন: যমজ ভাইদের সঙ্গে যমজ দুই বোনের বিয়ে

তিনি আরও জানান, উচ্চ শিক্ষায় ইংরেজি থাকতেই পারে। ইংরেজি বহুল প্রচলিত ও আন্তর্জাতিক ভাষা। বিশেষ করে চিকিৎসা,ঔষধ, প্রযুক্তিসহ বিজ্ঞানের সকল বিষয় অনেক সময় বাংলাতে তর্জমা করা সম্ভব হয় না। উচ্চশিক্ষা ইংরেজি মাধ্যমে হলেও সকলের উচিত বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে নিজেকে সমৃদ্ধ করা।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ফজলুল পলাশ জানান, বাংলা ভাষাকে এখন আমরা ভালোবাসতে পারিনি। এর বড় কারণ- ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা আমাদের মধ্যে নেই। প্রকৃত ইতিহাস না জানলে ভালোবাসা যায় না। মাতৃভাষা হিসেবে যে আবেগ ও ভালোবাসা নিয়ে এ ভাষার অনুশীলন প্রয়োজন তাও আমাদের নেই।

আক্ষেপ করে তিনি জানান, আমরা মুখে মুখে ক’জন শহীদের নাম বলি,কেউ কিন্তু দিনক্ষণ-তারিখ এমনকি আন্দোলনের শুরুটাও জানি না। শুধু ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জরুরি নয় বরং প্রজন্মের কাছে ভাষার গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরা উচিত। যেদিন মন থেকে চর্চা শুরু হবে, ভাষার মর্যাদাও সেদিন থেকে বাড়তে শুরু করবে।

তিনি আরও জানান, কর্মক্ষেত্রে ভাষার প্রয়োগ আর ব্যক্তি জীবনে অনুশীলন এক নয়। বিশ্বায়নের যুগে আন্তর্জাতিক ভাষাকে গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নিজ ভাষাকে বিসর্জন দিয়ে বিদেশি ভাষায় পুরোপুরি ঢু দেওয়া উদ্বেগজনক।


সর্বশেষ সংবাদ