অর্ধশতাধিক স্থায়ী ক্যাম্পাসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সনদপ্রাপ্তের সংখ্যা মাত্র ২০ কেন?

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

বর্তমানে দেশে ১১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধশতাধিকের বেশি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পেরেছে। আর স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার জন্য সনদপত্র পেয়েছে মাত্র ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি দেশের সরকারি ও বেসরকারি উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ তালিকা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথমে সাময়িক অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে নির্ধারিত শর্ত পূরণ করা সাপেক্ষে স্থায়ী সনদ দেওয়া হয়। তবে প্রশ্ন উঠছে, অর্ধশতাধিক স্থায়ী ক্যাম্পাসে গেলেও মাত্র ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় কেন স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার জন্য সনদপত্র পেয়েছে।

ইউজিসি বলছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থায়ী সনদ পেতে হলে শুধু স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকলেই হয় না, তাদের আরও বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। যেকোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবেদন করলে ইউজিসির একটি প্রতিনিধি দল সেখানে সরেজমিন পরিদর্শন যায় এবং শর্তগুলো পূরণ করছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করা হয়। সেই আলোকে পরবর্তীতে একটি প্রতিবেদন তৈরি প্রতিনিধি দল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী সনদ প্রদান করা হয়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ১২(১) ধারা অনুসারে, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কেই স্থায়ী সনদ নিতে হবে। প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের দেওয়া সাময়িক অনুমতির মেয়াদ ৭ বছর। এর পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবেদন করলে সরকার তিন দফায় সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দিতে পারে। এ সময়ের মধ্যে আইনে নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করে সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে হবে। তবে এরই মধ্যে ১২ বছরের বেশি সময় পার হওয়ায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আইন অনুসারে আর সময় বাড়ানোর সুযোগ নেই।

বর্তমানে ১১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে ১০৭টিতে। এরমধ্যে ৮৭টির স্থায়ী সনদ নেই। তবে ১২ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অর্ধশতেরও। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থায়ী সনদ অর্জন করতে না পারা এসব বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির চোখে ‘আইন ভঙ্গকারী’।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসারে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সনদ পেতে হলে ৭টি শর্ত পূরণ করতে হয়। সেগুলো হলো- শর্তানুযায়ী ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কমপক্ষে ১ একর এবং অন্যান্য এলাকায় কমপক্ষে ২ একর নিষ্কণ্টক, অখণ্ড ও দায়মুক্ত নিজস্ব জমি থাকতে হবে; নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জমিতে অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী স্থায়ী ভবন নির্মাণ করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি, বন্ধক বা অন্যভাবে হস্তান্তর করা যাবে না।

এছাড়া প্রতি শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া পূর্ণকালীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তত ৬% আসন সংরক্ষণ করতে হবে—যার ৩% থাকবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য এবং ৩% থাকবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য। তাদের টিউশন ফি মাফ থাকবে এবং এ তালিকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে জমা দিতে হবে।

পাশাপাশি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, চলাফেরা ও শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী বার্ষিক বাজেট থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ গবেষণার জন্য বরাদ্দ ও ব্যয় করতে হবে; সাময়িক অনুমতিপ্রাপ্ত প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সনদপত্র প্রাপ্তির জন্য আবেদনের পূর্বে এই আইনের অধীন প্রযোজ্য সকল শর্তাদি প্রতিপালন করতে হবে।

গত ২ জুন ইউজিসি থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ তালিকায় সনদপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি, খাজা ইউনূস আলী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশির ভাগ সাময়িক অনুমতির মেয়াদ পার করলেও এখনও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি। বছরের পর বছর তারা আইন অমান্য করে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান করছে। এমনকি কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর দুই যুগ পার করেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়ার রেকর্ড আছে।

জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, স্থায়ী সনদের আবেদন করলে ইউজিসি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, স্থায়ী সনদ পেতে হলে শুধু স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকলেই হয় না, আরও বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়।

‘‘এই শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে অভিন্ন ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা হচ্ছে কি না, প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম একজন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর রয়েছেন কি না, বিভাগীয় প্রধান হিসেবে অধ্যাপক আছেন কি না, প্রশাসনিক কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না, উপাচার্য (ভিসি) রয়েছেন কি না। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে মেডিকেল সেন্টারের ব্যবস্থা, মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদান, গবেষণায় পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ ইত্যাদি।’’

তিনি আরও বলেন, আমরা এসব বিষয় সরেজমিনে পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করি এবং তা সরকারের কাছে উপস্থাপন করি। পরে সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী সনদ প্রদান করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ