ড্যাফোডিলে অপ্রকাশিত ছাত্রশিবিরের প্রকাশ্য মানবিকতা, মিশ্র প্রতিক্রিয়া 

কোরবানির মাংস বিতরণ
কোরবানির মাংস বিতরণ  © টিডিসি ফটো

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সকল নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে কোরবানির মাংস বিতরণ করা হয় ঈদের দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রথম শিবিরের কোনো প্রকাশ্য কর্মসূচি দেখা যায়। 

মঙ্গলবার (১০ জুন) সকাল ৮টায় ঈদের দিন ড্যাফোডিলে মাংস বিতরণের বিষয়টি প্রথম প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে। যেখানে ইসলামী ছাত্রশিবির প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিতরণের ছবির মাঝে ড্যাফোডিলের বিতরণের ছবিও দেখা যায়। 

ড্যাফোডিলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ, তবে ২০২১/২২ সাল থেকে বিভিন্ন সংগঠন প্রকাশ্যে কমিটি ও নানা কর্মসূচি চালিয়ে আসলেও শিবিরের কোনো কমিটি কিংবা কোনো কর্মসূচি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশিত হয়নি। হঠাৎ এমন প্রকাশ্য কর্মসূচি দেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্র মতে জানা যায়, শিবির নানা সামাজিক সংগঠনের নামে গত অনেক বছর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের নানা কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কম মূল্যে বাসস্থান বাস্তবায়ন প্রকল্প, বৃক্ষরোপণসহ নানা কর্মসূচি তারা পরিচালনা করেছে।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি রেজাউল করিম বলেন, আমাদের যে কর্মসূচিটা ছিলো সেটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির। আমাদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ছিলেন ২২ জন, তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করা হয়েছে। এসব কোরবানির মাংস অধিকাংশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া শহীদদের ও আহতদের বাসায় ১০টি ছাগল দিয়েছি। দারোয়ান মামা, কাজের খালা ও রিকশাচালকদের মাঝেও গোশত বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কর্মসূচি ইসলামী ছাত্রশিবির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার। ড্যাফোডিলে বিতরণের সময় ড্যাফোডিলের প্রতিনিধি ও শাখার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের কমিটি সম্পর্কে রেজাউল করিম বলেন, এখন কাজ হচ্ছে জোনভিত্তিক। আমাদের আশুলিয়া জোনের কমিটি রয়েছে, উত্তরায় উত্তরা জোনের কমিটি রয়েছে। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐভাবে কমিটি নেই। আমাদের আশুলিয়া জোনে যে কমিটি রয়েছে, ড্যাফোডিল সেটার ভেতরেই কাজ করে।

কমিটি প্রকাশ করার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রশাসন যদি চায় ছাত্ররাজনীতি হোক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো, তাহলে আমরা প্রকাশ করতে পারি। কেন্দ্রীয় যে নির্দেশনা, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়েই আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি গঠিত। এভাবে আমাদের কাজগুলো চলবে যতদিন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক প্রকাশিত না হয়।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ড্যাফোডিল শাখার সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক ফেরদৌস বলেন, ছাত্রদল ছাত্রসংগঠনগুলো দ্বারা সংগঠিত সকল সামাজিক, রাজনৈতিক এবং মানবিক কর্মসূচিগুলো আমরা সমর্থন করি এবং সাধুবাদ জানাই। তবে শিবিরের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, তারা যেন তাদের কমিটি প্রকাশ করে রাজনীতি করেন। কারণ প্রকাশ্য রাজনীতি না করলে ভালো কাজের যেমন আমরা প্রশংসা করতে পারি না, তেমনি কোনো অন্যায় করলে তা চিহ্নিত করা যায় না। আমরা আহ্বান জানাব, তারা যেন ইতিবাচক রাজনীতির ধারা অবহিত রাখতে প্রকাশ্যে রাজনীতি করেন।

প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে শিবিরের কমিটি প্রকাশ না করার বিষয়ে ফেরদৌস আরও বলেন, তারা যদি ‌‌‌বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজনীতি করতে পারবে না- প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়, তাহলে তো তাদের রাজনীতি না করাই উচিত। আবার তারা সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখে কীভাবে? রাজনীতি করবে কিন্তু কমিটি প্রকাশ করবে না এটা তো দ্বিচারিতার নীতি। সেটা তো সুন্দর গণতান্ত্রিক চর্চার রাস্তা হতে পারে না।

চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মিহাল বলেন, যেকোনো সংগঠনের ভালো কাজকেই সাধুবাদ জানাই। যেহেতু প্রকাশ্যে তারা কাজ করছে, তাহলে কমিটিও প্রকাশ করা উচিত। এতে স্বচ্ছতা বজায় থাকে। অপ্রকাশিত থাকলে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাবি ও প্রতিবাদের সময় বিভিন্ন রকম ট্যাগের শিকার হতে হয়। গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম স্পিরিট ছিল মত প্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনীতি করার অধিকার। তাদেরও সেই দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত।

দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক বলেন, একটা সমস্যা হলো, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগই নিজের অধিকার ও প্রাপ্য সম্পর্কে সচেতন নয়। রাজনীতি করা স্বাধীন দেশে সবার অধিকার, সে যেখানেই পড়ুক না কেন। তবে চলমান দলীয় রাজনীতি থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তেমন কোনো সুবিধা হয় বলে আমি মনে করি না। এসব মানবিক কাজ নিঃসন্দেহে ভালো, তবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নানা অধিকার নিয়ে এসব সংগঠন প্রকাশ্যে সরব হয় না। আমার ধারণা, তারা তাদের রাজনীতি চালিয়ে রাখতে কেউই প্রশাসনের বিরুদ্ধে যেতে চায় না। তাহলে রাজনীতি থাকুক কিংবা না থাকুক সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপকার কী? সাহায্য-সহযোগিতা তো নানা এনজিও-ও করে থাকে।

আরও পড়ুন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে ফের সক্রিয় ছাত্ররাজনীতি, যেভাবে চলে ছাত্রদল-শিবির-বামদের কার্যক্রম

ছাত্ররাজনীতির নৈরাজ্য এড়াতে এবং স্বচ্ছতার দাবিতে সকল সংগঠনকে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে তাদের পক্ষে অবস্থান করা এবং প্রশাসনের উচিত সকল শিক্ষার্থীর মত প্রকাশ ও সুস্থ রাজনীতি করার অধিকার নিশ্চিত করা এমনটাই মনে করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence