ইন্ডাস্ট্রির ‘বেস্ট গ্র্যাজুয়েট’ তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইউআইইউ’র ইইই বিভাগ

ড. এম রিজওয়ান খান
ড. এম রিজওয়ান খান  © সংগৃহীত

ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম রিজওয়ান খান। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি- ইউআইইউ’র সাবেক উপাচার্য। দায়িত্ব পালন করেছে টানা তিন মেয়াদে। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন ইউআইইউর ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্স রিসার্চ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে। সম্প্রতি গুণী অধ্যাপককে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি'র পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে শিক্ষকতা ও গবেষণায় যুক্ত এ অধ্যাপকের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন দেশি-বিদেশি নানা গবেষণা ও প্রকল্পে। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (ইইই) নানা দিক এবং পাওয়ার ও অ্যানার্জি সেক্টরে বাংলাদেশের অবস্থা নিয়ে তার মুখোমুখি হয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক আহমেদ ইউসুফ—

শুধু সেক্টরের উন্নয়নেই সমাধান নেই, যুগোপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে পিছিয়ে গেলে সেটার রেশ বহুদিন থাকবে বলে মনে করেন ড. এম রিজওয়ান খান। বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল বিভাগ (ইইই) সেই গুনগত মান রক্ষা করে গ্রাজুয়েট তৈরি করছে।

পাওয়ার ও অ্যানার্জি সেক্টরের উন্নয়নে পাহাড়সম বাধা থাকলেও পরিকল্পিত উন্নয়ন সেটিকে সুষ্ঠু সমাধানের পথে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং খুব বেসিক এবং ফান্ডামেন্টাল সাবজেক্ট। যতদিন পৃথিবী আছে, সভ্যতা আছে, এটার অস্তিত্ব কোনভাবে অস্বীকার করা যাবে না। বরং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সভ্যতার অগ্রগতির সাথে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাত্রা পরিবর্তন হবে। ফলে পরিবর্তনের সাথে সাথে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কারিকুলাম পরিবর্তন করে আপডেটেড অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের সাথে শেয়ার করে সবসময়। 

ইউআইইউ‘র ইইই বিভাগের ভিন্নতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশেষায়িত কিছু ল্যাব এবং প্রশিক্ষণ আছে; যেটা অন্যদের চেয়ে ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের এগিয়ে রাখে। আমাদের ল্যাবরেটরি এবং সফটওয়্যারগুলো প্রতিনিয়ত আপডেট করা হয়। পাওয়ার সিস্টেম, ভিএলএসআই কিংবা ইলেকট্রনিক ডিজাইনের সফটওয়্যারগুলো সবসময় আপডেটেড থাকে। আবার এটার সঠিক ফলাফল প্রাপ্তির জন্য প্রতিটি মেশিনের সাথে কম্পিউটার সেট করা আছে। যেখানে শিক্ষার্থীরা দেখতে পাবে, এই মেশিনগুলো সরাসরি কাজ করছে কিনা। এসবের উদ্দেশ্য একটাই— ইউআইইউ যেন ইন্ড্রাস্ট্রির বেস্ট গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে পারে। এজন্য সবাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

`আমাদের বেশকিছু সমাদৃত ট্রেনিং অ্যাকাডেমি আছে, যেখানে সেক্টরে আগ্রহী ব্যক্তিরা প্রমিক্ষণের সুযোগ পান। এরমধ্যে ভিএলএসআই ট্রেনিং একাডেমি (ভিটিএ) এবং পাওয়ার এন্ড এনার্জি ট্রেনিং অ্যাকাডেমি (পেটা) অন্যাতম— ড. এম রিজওয়ান খান

ইইই সংক্রান্ত পড়াশোনার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে অধ্যাপক রেজওয়ান বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়াশোনা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। আগে যেসব কনটেন্ট পড়ানো হতো এখন সেগুলো পড়ানো হয় না। প্রযুক্তির সাথে মিল রেখে নতুন কনটেন্ট পড়ানো হচ্ছে। এখন পাওয়ার সিস্টেম একরকম, সামনে স্মার্ট পাওয়ার সিস্টেম আসবে৷ ফলে পাওয়ার সিস্টেমের মধ্যে এপ্লিকেশন সাইটগুলোর ব্যপক পরিবর্তন আসবে। ইউআইইউ সেই পরিবর্তনের ধারা অনুযায়ী নিজেদের ল্যব এবং টেকনোলজিকে আপডেট করে শিক্ষার্থীদের পঠনপাঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছে।

বড় ক্যাম্পাস, লক্ষ্যও বড়। ‘দক্ষিণ এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া’র স্বপ্ন যেন বারবার মনে করিয়ে দেয় মাদানী এভিনিউয়ের এই ক্যাম্পাসটি।

অধ্যাপক এম রিজওয়ান খান আরো বলেন, আমাদের গ্রাজুয়েটরা আমেরিকা, ইউরোপ এবং জাপানের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষালয় থেকে পিএইচডি করে সেখানে ফ্যাকাল্টি হিসেবে এখন যুক্ত আছেন। তবে আমি মনে করি, ভালো করার জন্য শিক্ষার্থীদের নিজেদের উদ্যোগী হতে হবে। ইউআইইউ ভালো করার জন্য সব রকমের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করছে। তবে সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের। 

আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ইউআইইউ’র ইইই বিভাগ নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। দেশি বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছে কয়েকটি বিশেষায়িত ল্যাব। অধ্যাপক রিজওয়ান খান বলেন, আমাদের বেশকিছু সমাদৃত ট্রেনিং অ্যাকাডেমি আছে, যেখানে সেক্টরে আগ্রহী ব্যক্তিরা প্রমিক্ষণের সুযোগ পান। এরমধ্যে ভিএলএসআই ট্রেনিং একাডেমি (ভিটিএ) এবং পাওয়ার এন্ড এনার্জি ট্রেনিং অ্যাকাডেমি (পেটা) অন্যাতম। এছাড়া যুগোপযোগী জ্ঞান সরবরাহের জন্য হুয়াওয়ে আমাদের একটি ল্যাব করে দিয়েছে। যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা আপডেট টেকনোলজি নিয়ে কাজ করতে পারেন। সবমিলিয়ে ইইই বিভাগ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে। 

আগামীতে ইউআইইউকে দেশসেরা উচ্চ শিক্ষালয়গুলোর একটি হিসেবে দেখতে চান এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, আমি মনে করি এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন আমাদের জন্য কঠিন কিছু নয়। ইতোমধ্যে আমরা সেই পথেই রয়েছি। পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়টি শীগ্রই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো অবস্থানে পৌঁছাতে পারবে।

আমাদের বেশকিছু অপরিকল্পিত উদ্যোগের ফলে এই সংকট আরো গভীর হয়েছে৷ সংকট কমিয়ে আনতে সরকার ইতোমধ্যে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সবচেয়ে জরুরি হলো, অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে— ড. এম রিজওয়ান খান, ইউআইইউ

বাংলাদেশের একমাত্র বিদ্যুৎশক্তি সঞ্চালন প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া এই খাতের উত্তেরণ নিয়ে আশাহত চান না এই প্রবীণ অধ্যাপক। তবে এই উত্তোরণের জন্য পরিকল্পিত উন্নয়ন একটি পূর্বশর্ত বলে মনে করেন অধ্যাপক রিজওয়ান। তিনি বলেন, পুরো পাওয়ার সেক্টরে বড় রকমের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। আমি মনে করি এই সঙ্কট খুব সহজে কিংবা একদিনে সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে এটা সমাধানযোগ্য। সঠিক পরিকল্পনা এবং কাজ করা গেলে অদূর ভবিষ্যতে এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

সংকট মোকাবেলায় বহুমুখী পরিকল্পনা নেয়ার বিকল্প নেই। বিদ্যুৎ সংকটের এই চিত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজার মেগাওয়াট। এত বেশি পরিমাণ বিদ্যুৎ আমাদের প্রয়োজন নেই। সব থেকে বেশি যখন ব্যবহার হয়; গরমের দিনেও আমাদের সর্বোচ্চ চাহিদা দাঁড়ায় ১৬ থেকে ১৭ হাজার মেগাওয়াট। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, লোডশেডিং কেন হয়? এর মূল কারণ হলো গ্যাস সংকট। কাজেই বেশি উৎপাদন করতে চাইলেও সেটা সম্ভব না। ফলে এবারের গরমেও লোডশেডিং হবে না— এটা বলা যাবে না। 

সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের বেশকিছু অপরিকল্পিত উদ্যোগের ফলে এই সংকট আরো গভীর হয়েছে৷ সংকট কমিয়ে আনতে সরকার ইতোমধ্যে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সবচেয়ে জরুরি হলো, অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেভাবে এগোতে পারলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের সামগ্রিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির মুখ দেখবে।


সর্বশেষ সংবাদ