মানারাতে “ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু” শীর্ষক আলোচনা

‘বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন না হলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ হতো না’

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ও বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সদস্য ইসরাত জাহান নাসরিন।
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ও বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সদস্য ইসরাত জাহান নাসরিন।

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গুলশান ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক সপ্তাহ ২০২৪ ঘিরে দেশখ্যাত কবি, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। সাংস্কৃতিক সপ্তাহের চতুর্থ দিন মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে “ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ও বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সদস্য ইসরাত জাহান নাসরিন।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে এ সাংস্কৃতিক সপ্তাহ আয়োজন করা হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন হয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে সপ্তাহব্যাপী এ আয়োজনের।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মহানায়কদের মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যাকে অস্বীকার করা মানে বাংলাদেশকে অস্বীকার করা। তিনি তর্জনী উঁচিয়ে ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”।

এ উপলক্ষ্যে শিক্ষানুরাগী, খ্যাতিমান কবি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, ভাষাবিদ ও সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ যারা প্রতিনিয়ত আমাদের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে সমাদৃত করে চলেছেন সে সব গুণীজনদের পদচারণায় মুগ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনার ফাঁকে প্রতিদিন বিকাল ৪ টা থেকে রাত অবধি ছাত্র—ছাত্রীদের অংশগ্রহণে চলছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তথা নাটক—নাটিকা, কৌতুক ও বারোয়ারি গান পরিবেশনা ও কবিতা পাঠ।

এর বাইরে অনুষ্ঠানস্থল উৎসবের রঙে রাঙাতে ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন স্টলে পসরা সাজিয়ে বসেছেন বই, পিঠা-পুলি, ফুসকা, চটপটি, হস্তশিল্প ও প্রসাধনী সামগ্রীর।

সাংস্কৃতিক সপ্তাহ ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র—ছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় রঙিন মানারাতের গুলশান ক্যাম্পাস। চতুর্থ দিনও এ রকম উৎসাহ—উদ্দীপনা ছিল ক্যাম্পাস জুড়ে। চতুর্থ দিনের এ অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট গবেষক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ সরকার আবদুল মান্নান। সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুছ ছবুর খান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসরাত জাহান নাসরিন ‘বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন না হলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ হতো না’ উল্লেখ করে বলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মহানায়কদের মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যাকে অস্বীকার করা মানে বাংলাদেশকে অস্বীকার করা। তিনি তর্জনী উঁচিয়ে ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। তাঁর আহ্বানে বাংলার দামাল ছেলেরা হেমিলনের বাঁশিওয়ালার মতো যেভাবে ঝাপিয়ে পড়েছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম উদাহরণ আর নেই। তাইতো তিনি আমাদের মহানায়ক। বিশ্ববাসীর মহানায়ক।

মানারাত001

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুছ ছবুর খান

বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতে কেউ বাংলাদেশের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পেত না।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন এ দেশটিকে বিশ্বের বুকে একটি শক্তিশালী দেশ ও জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাও কোন শক্তিকেই পরোয়া না করে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে  শক্তিশালী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

‘বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চেয়েছিলেন’ জানিয়ে তিনি সত্যিকার মানুষ হতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ ও লালন করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টায় মনোনিবেশ করতে উপস্থিত ছাত্র—ছাত্রীদেরকে আহ্বান জানান।

মানারাত003

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংস্কৃতিক সপ্তাহ

অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুছ ছবুর খান বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতে কেউ বাংলাদেশের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পেত না। আজকে তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিশ্বের কোনো শক্তিরই পরোয়া করেন না। এটি আমাদের আশার জায়গা। এই আশা নিয়ে আমরা তার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের এসডিজির লক্ষ্য অর্জন করে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো। সেই প্রচেষ্টায় মানারাত যদি একবিন্দু পরিমাণও ভূমিকা রাখতে পারে, তাহেলই আমাদের এই সাত দিনের আয়োজন সার্থক হবে।

বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন—তিনি জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো বাংলাভাষায় বক্তৃতা দিযেছিলেন। বাংলা অ্যাকাডেমির সভায় তিনি বাংলা ভাষা ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কথা বলেছিলেন। এ ভাবে বাংলা বঙ্গবন্ধুকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।

‘সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার বঙ্গবন্ধুকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল’ উল্লেখ করে মুখ্য আলোচক সরকার আবদুল মান্নান বলেন, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে উপনিবেশ আছে। তা হলো—যখনই দেখি কেউ ইংরেজিতে কথা বলে তখনই বলি ‘ওরে বাবা’! অথচ আমাদের বাংলা কতটা শক্তিশালী ভাষা সেটা আমরা বুঝতে চাই না। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন—তিনি জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো বাংলাভাষায় বক্তৃতা দিযেছিলেন। বাংলা অ্যাকাডেমির সভায় তিনি বাংলা ভাষা ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কথা বলেছিলেন। এ ভাবে বাংলা বঙ্গবন্ধুকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।

অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. মোয়াজ্জম হোসেন। সাংস্কৃতিক সপ্তাহের আহ্বায়ক ও ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ নাজমুল হক শিকদার শিবলুর সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসমিয়া মোসলেহ উদ্দীন।

সাংস্কৃতিক সপ্তাহে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে অংশ নিচ্ছে শিক্ষা বিষয়ক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দি ডেইলি ক্যাম্পাস।


সর্বশেষ সংবাদ