এশিয়ান ইউনিভার্সিটি

বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় স্ত্রীকে নিয়ে উপাচার্যের ভ্রমণ বিলাস

অধ্যাপক ড. শাহজাহান খান ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটির লোগো
অধ্যাপক ড. শাহজাহান খান ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটির লোগো  © ফাইল ছবি

দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় স্ত্রীসহ বিদেশ ভ্রমণের অভিযোগ উঠেছে বেসরকারি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহজাহান খানের বিরুদ্ধে। বছরের বড় একটি সময় দেশের বাইরে অবস্থান করেন বলেও অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, ২০২১ সালের নভেম্বরে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ড. শাহজাহান খান। যোগদানের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা ও প্রশাসনিক কাজে অনিয়মিত তিনি। অস্ট্রেলিয়াতে যাতায়াতেই ব্যস্ত থাকেন এ উপাচার্য বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের। তাদের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে ড. শাহজাহান খানকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্দিষ্ট সময় দেশের বাইরে থাকবেন; এজন্য আলাদা করে চুক্তি করার ঘটনা আমাদের অবাক করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিৎ যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন, সময় দিতে পারবেন, এমন ব্যক্তিদের নাম নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা। একজন উপাচার্য অধিকাংশ সময় দেশের বাইরে থাকবেন সেটি কাম্য নয়। এ ধরনের চর্চা থেকে উপাচার্যদের বেরিয়ে আসা উচিৎ।

অধ্যাপক শাহজাহান খানের নিয়োগের সময় তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি হয়েছে। তিনি বছরে একবার অস্ট্রেলিয়ায় যেতে পারবেন এবং এ যাতায়াতের বিমান ভাড়া বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে। বিষয়টি ইউজিসিকেও অবহিত করা হয়েছে— একেএম এনামুল হক, রেজিস্ট্রার, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ডে কর্মরত অবস্থাতেই এশিয়ান ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পদে নিয়োগ পান ড. শাহজাহান খান। যোগদানের কিছুদিন পরই অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান তিনি। এর পর একাধিকবার লম্বা ছুটি নিয়ে বিদেশে গেছেন। বিদেশে যাতায়াতের জন্য তার এবং তার স্ত্রীর বিমান ভাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে দেওয়া হয়। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তিও করেছেন এ উপাচার্য। চুক্তিতে বছরে কয়েকবার দেশে আসবেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

সম্প্রতি এক মাসের ছুটিতে অস্ট্রেলিয়ায় গেছেন ড. শাহজাহান খান। এ ছুটির জন্য ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর ইউজিসিতে আবেদন করা হয়েছে। ছুটির আবেদনে বলা হয়েছে, প্রফেসর ড. শাহজাহান খান অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় পরিবারসহ বসবাস করে আসছেন। তিনি প্রতি বছর তার পরিবারের সাথে সাক্ষাতের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় গমন করবেন মর্মে স্যালারি প্যাকেজে কয়েকটি শর্ত আরোপ করেন, যার মধ্যে একটি শর্ত ছিল, তার ও তার স্ত্রীর অস্ট্রেলিয়া যাতায়াতের বিমান ভাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বহন করবে। তা না হলে তিনি উপাচার্য পদে যোগদান করতে অক্ষমতা প্রকাশ করেন । 

চিঠিতে আরও উল্লেখ, উপাচার্য হিসেবে ড. শাহজাহান খানের যোগদানের তারিখ হতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ও বহি: বাংলাদেশে ৫ দিন নৈমিত্তিক ছুটি ভোগ করেছেন। তার পাওনা নৈমিত্তিক ছুটি ১৫ দিন এবং মেডিকেল ছুটি ১০ দিন উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত তিনি ছুটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে ছিলেন। এ ছুটির জন্যও তিনি ইউজিসিতে আবেদন জমা দিয়েছিলেন।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও এই সুবিধা পান না। সেখানে একজন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিককে এ ধরনের সুবিধা কীভাবে দেওয়া হচ্ছে সেটিই ভাবার বিষয়। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। কারণ, বিষয়টি নজিরবিহীন— অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, সদস্য ইউজিসি

বিশ্ববিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট একটি পক্ষের দাবি, অধ্যাপক শাহজাহান খান ও বিওটির মধ্যে করা চুক্তি অনুযায়ী, তিনি বছরে দু-একবার বাংলাদেশে এসে শুধু একাডেমিক সনদে স্বাক্ষর করে যাবেন। আর সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলে তিনি সেখানে অংশ নেবেন। 

প্রফেসর ড. মো. নুরুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য, এইউবি

অধ্যাপক ড. শাহজাহান খান ছুটিতে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. নুরুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অধ্যাপক শাহজাহান নিয়ম অনুযায়ী ছুটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে গেছেন। তার সাথে চুক্তি হয়েছে তিনি বছরে একবার অস্ট্রেলিয়াতে যাবেন। চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর ইউজিসিতে পাঠানো এক চিঠিতে অধ্যাপক শাহজাহান খান ৫ দিন নৈমিত্তিক ছুটি ভোগ করেছেন বলে বলা হয়েছে। তবে তিনি এ বছর এক মাসেরও অধিক সময় অস্ট্রেলিয়াতে ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার একেএম এনামুল হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কতদিন ছুটি নিয়েছিলেন, আর কতদিন ছুটি পাবেন, সে বিষয়টি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। যদি বেশি ছুটি ভোগ করে থাকেন তাহলে পরবর্তী ছুটির সাথে তা সমন্বয় করা হবে।

আরও পড়ুন: সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জাতীয় র‍্যাঙ্কিংয়ের সুপারিশ ইউজিসির

অস্ট্রেলিয়ায় যাতায়াতের জন্য উপাচার্য এবং তার স্ত্রীর বিমান ভাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অধ্যাপক শাহজাহান খানের নিয়োগের সময় তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি হয়েছে। তিনি বছরে একবার অস্ট্রেলিয়ায় যেতে পারবেন এবং যাতায়াতের বিমান ভাড়া বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে। বিষয়টি ইউজিসিকেও অবহিত করা হয়েছে।

অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ

এশিয়ান ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের স্ত্রীর যাতায়াতের বিমান ভাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে বহন করার ঘটনা নজিরবিহীন জানিয়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও এই সুবিধা পান না। সেখানে একজন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিককে এ ধরনের সুবিধা কীভাবে দেওয়া হচ্ছে সেটিই ভাবার বিষয়। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।


সর্বশেষ সংবাদ