ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির আয়-ব্যয় ও ঋণের ‘নাড়ি নক্ষত্র’ জানতে চায় ইউজিসি

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কাছে প্রায় ২৩ বছরের আয়-ব্যয় ও ঋণের ‘নাড়ি নক্ষত্র’ জানতে চেয়েছে ইউজিসি
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কাছে প্রায় ২৩ বছরের আয়-ব্যয় ও ঋণের ‘নাড়ি নক্ষত্র’ জানতে চেয়েছে ইউজিসি  © টিডিসি ছবি

দেশের বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় অন্যতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কাছে প্রায় ২৩ বছরের আয়-ব্যয় ও ঋণের ‘নাড়ি নক্ষত্র’ জানতে চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। গত ২৫ জুলাই এমন নানা তথ্য চেয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিকে একটি কড়া চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই তদারক সংস্থাটি। সেখানে আয়-ব্যয় ও ঋণের তথ্য ছাড়াও বিদেশি অনুদান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ট্রাস্টিদের অবদানের পরিমাণ ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসের স্থানান্তরে ব্যর্থ হওয়ার কারণসহ আরও বেশ কিছু ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে।

প্রতিষ্ঠা সন ২০০১ থেকে অদ্যাবদি বিস্তারিত এসব তথ্য জমা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সময় দেয়া হয়েছে মাত্র সাত দিন। ইউজিসির একটি সূত্র বলছে, ২৫ জুলাই ইস্যুকৃত ওই চিঠির উত্তর এখন পর্যন্ত জমা দেয়নি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি।

জানা গেছে, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি কত টাকা, কোন কোন ব্যাংক থেকে, কত তারিখে, কী শর্তে, কোন কর্তৃত্ব বলে এবং কেন ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে— তার প্রমাণকসহ বিবরণ ইউজিসিতে জমা দিতে বলা হয়েছে। একইভাবে শুরু থেকে এ পর্যন্ত সেমিস্টার, ট্রাইমেস্টার ও বছরভিত্তিক আয়-ব্যয়ের হিসাব চাওয়া হয়েছে। এ যাবতকালে অস্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য নেয়া ভবনগুলোর ভাড়ার সকল চুক্তিপত্র, মাসিক ভাড়ার হার ও ভাড়ার পরিমাণের যোগফলও জমা দিতে হবে প্রমাণপত্রসহ।

স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি বড় অংকের অর্থ ঋণ নিয়েছে। সেটি কেন? তারা যে পরিমাণ টাকা ঋণ করেছে, সেটাও স্থায়ী নির্মাণ ইস্যুতে অনেক বেশি; যেটা সাধারণত একটি বিশ্ববিদ্যালয় নেয় না-অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্র বলছে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে উচ্চহারে ফি-বেতন নেয় তাতে বিশ্ববিদ্যালয়টির তহবিলে মোটা অঙ্কের অর্থ উদ্বৃত্ত থাকার কথা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়টি উল্টো স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তোলার নামে ব্যাংক থেকে বিশাল অঙ্কের ঋণ গ্রহণ করেছে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির আয়-ব্যয় ও ঋণসহ প্রতিষ্ঠানটির বেশকিছু বিষয় খতিয়ে দেখতে চায় কমিশন।

অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দের সঙ্গে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তিনি বলেন, ব্র্যাকের মত সমমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব অর্থে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ করছে। বিপরীতে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিকে বড় অংকের অর্থ ঋণ করতে হয়েছে। সেটি কেন? মূলত এই প্রশ্ন থেকেই তাদের আর্থিক হিসাবের আদ্যোপান্ত চাওয়া হয়েছে। তাছাড়া ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় যে পরিমাণ টাকা ঋণ করেছে, সেটাও স্থায়ী নির্মাণ ইস্যুতে অনেক বেশি; যেটা সাধারণত একটি বিশ্ববিদ্যালয় নেয় না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বর্তমানে রাজধানীর মহাখালীতে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিচালিত হচ্ছে। স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হচ্ছে মেরুল বাড্ডায়।

ব্র্যাকের কাছে যা জানতে চায় ইউজিসি
স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু তথ্য জানতে চায় কমিশন। যার মধ্যে রয়েছে- বর্তমানে যেসব ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলমান রয়েছে সেসব ভবনের ঠিকানা, মালিকানা, স্পেস ভাড়ার সকল চুক্তিপত্র, শুরু হতে অদ্যাবদি ভাড়ার হার ও মাসিক ভাড়ার পরিমাণ যোগফলসহ (প্রমাণকসহ); স্থায়ী ক্যাম্পাসের কাজ কখন শুরু হয়েছে, কোন কোন কর্তৃপক্ষের, কোন কোন সভায় এবং তারিখে এ বিষয়ে অনুমোদন দেয়া হয়েছে তার বিবরণ সভার রেজুলেশন ও প্রমাণকসহ)।

আরো পড়ুন: ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভিসির দায়িত্বে ফের বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

এছাড়াও এ পর্যন্ত কত টাকা, কোন কোন ব্যাংক হতে, কত তারিখে কোন কর্তৃত্ব বলে এবং কেন ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে (প্রমাণকসহ বিবরণ); শুরু হতে অদ্যাবধি প্রতি সেমিস্টার/ট্রাইমেস্টারভিত্তিক বছরভিত্তিক এবং এ যাবত  বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমোট আয় ও ব্যয়ের হিসাব (প্রমাণসহ); বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন বা সাময়িক অনুমতিপত্রসহ ট্রাস্ট সংক্রান্ত সকল প্রমাণক/দলিলাদি; শুরু হতে অদ্যাবধি যারা বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত ছিলেন এবং বিওটির সাথে জড়িত ছিলেন তাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত আর্থিক অবদানের পরিমাণ, প্রদানের তারিখ ও প্রমাণকসহ; বিদেশী দাতা সংস্থা ও অন্যান্য উৎস হতে শুরু থেকে অদ্যাবধি প্রাপ্ত অনুদান বা যে কোনো ধরনের অর্থের পরিমাণ এবং তা কোন কোন খাতে কী পরিমাণ ও কোন সময়ে ব্যয় করা হয়েছে সেসব তথ্য ও প্রমাণ এবং শুরু হতে অদ্যাবধি বিদেশি সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গবেষণা বা যৌথ কার্যক্রম হতে এবং সেই বাবদ প্রাপ্ত অর্থের আয়-ব্যয়ের হিসাবও (প্রমাণসহ) জানতে চায় ইউজিসি।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিকে দেয়া চিঠিতে স্থায়ী ক্যাম্পাসের কাজ কবে শুরু হয়েছে এবং নির্ধারিত সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরে ব্যর্থ হওয়ার কারণ; প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোন কোন ব্যাংক থেকে কত পরিমাণ ও কী কী শর্তে ঋণ নেওয়া হয়েছে; প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদেশি দাতা সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ ও ব্যয়ের হিসাব; প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত অর্থের আয়-ব্যয়ের হিসাব ইত্যাদি জানতে চেয়েছে ইউজিসি।

গত ২৫ জুলাই ইউজিসির এই চিঠিতে সাতদিন সময় দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়কে। তবে এ সময়ের মধ্যে চিঠির জবাব দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে ইউজিসির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাহিত তথ্যসমূহ দিতে পারেনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। এজন্য ইউজিসির কাছে আরও কিছু দিন সময় চেয়েছে ব্র্যাক। 

এদিকে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল ইউজিসি। এর মধ্যে একটি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। পরবর্তীতে যথাসময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারায় ছয় মাস সময় পেয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারায় গত মে মাসে আবারও ইউজিসিতে আবেদন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় মহাখালীতে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিচালিত হচ্ছে। স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হচ্ছে মেরুল বাড্ডায়, আগামী সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির সকল শিক্ষা কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ইউজিসি বলছে, স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় কিছুদিন পরপর চিঠি দিয়ে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কবে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাবে এবং সর্বশেষ কী অবস্থা। এতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় জবাব দিলে সে আলোকে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয় ইউজিসি। 

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল ইউজিসি। এর মধ্যে একটি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। পরবর্তীতে যথাসময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারায় ছয় মাস সময় পেয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি।

এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরি এবং সেখানে যাওয়া একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এ কারণে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে; তাদের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করবো। প্রয়োজনে আমরা কিছু সময় বৃদ্ধি করে দেব। এটি অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মত ব্র্যাকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। 

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যা বলছে 
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চিঠির বিষয়সহ আরও কিছু তথ্য জানতে চেয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি বরাবর মোট ৫টি প্রশ্ন পাঠিয়েছিল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। তবে এ বিষয়ে কোনো ধরনের তথ্য দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। কর্তৃপক্ষ জানায়, চিঠির বিষয়ে তারা ইউজিসির সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এ মুহুর্তে এসব বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চান না তারা। 


সর্বশেষ সংবাদ