স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফিরছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

  © লোগো

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়ায় চলতি বছরের শুরুর দিকে ৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এই চার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি এবং প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্য মতে, এই চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্টামফোর্ড ও আশা ইউনিভার্সিটি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে সময় চেয়ে ইউজিসির কাছে লিখিত আবেদন করেছে। তাদের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ সরেজমিনে নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেছেন। 

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, আশা এবং স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছে। আমরা তাদের আবেদন এবং ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজের অগ্রগতির প্রেক্ষিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।

আরও পড়ুন: স্টামফোর্ড-আশা-প্রাইমএশিয়াসহ ৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বন্ধ, অবৈধ আরও ৩

তথ্যমতে, এই ৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও গত জানুয়ারিতে স্থায়ী ক্যাম্পাসের অবকাঠামো উন্নয়নের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইউজিসির পক্ষ থেকে ৩ থেকে ৬ মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল আরও কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে।

সে সময় তিন মাস সময় পেয়েছিল ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো- সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি, দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি।

স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর ও ক্যাম্পাস নির্মাণের বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি এবং লিখিত অঙ্গীকারের বিষয়টি বিবেচনা করে সে সময় আরও ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়কে ৬ মাস করে সময় দেওয়া হয়েছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছিলো- ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি ও দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি। 

আরও পড়ুন: স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে সময় চেয়েছে স্টামফোর্ড-আশা

স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফেরার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষের সাথে সম্প্রতি কথা বলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। এরমধ্যে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির কতৃপক্ষ ইতোমধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তাছাড়া উত্তরা ইউনিভার্সিটি আগামী জুনে তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি প্রফেসর ড. ইয়াসমীন আরা লেখা।

স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া বিষয়ে সিটি ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মীর আকতার হোসেন বলেন, আমরা অনেক আগেই স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে এসেছি। সেটা মার্চ মাসেই। আমাদের সবকিছুই এখন স্থায়ী ক্যাম্পাসেই।

তবে নির্ধারিত সময় ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি রয়েল ইউনিভার্সিটি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার বলেন, আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফিরবো।

জানুয়ারি থেকে বেঁধে দেয়া ৩ মাস পেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ইউজিসির সাথে আমাদের কথা হচ্ছে।

দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার মাহমুদা খাতুন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা আগে থেকেই আমাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে আছি। এটাই আমাদের নিজস্ব ক্যাম্পাস।

এদিকে শাখা ক্যাম্পাসে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ হওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিও চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ীভাবে স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফেরার কথা জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির পাবলিক রিলেশন পরিচালক তারেক উমর বলেন, আমাদের সিটিতে ২টি ক্যাম্পাস আছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আমরা নতুন সব শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছি স্থায়ী ক্যাম্পাসে। অস্থায়ী ক্যাম্পাসে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়নি। পুরাতন শিক্ষার্থীদের ক্লাস অস্থায়ী ক্যাম্পাসগুলোতে হচ্ছে। এবছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে যাবো।

এদিকে গত বছরের জুন থেকে সব কয়টা অস্থায়ী ক্যাম্পাস গুটিয়ে আশুলিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালাচ্ছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়টি স্টুডেন্ট এফেয়ার্স ডিভিশনের প্রধান প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন রাজুর বরাতে এ তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে জানানো হয়েছে। আশুলিয়ার স্থায়ী ক্যাম্পাসের বাইরে তাদের আর কোনো ক্যাম্পাস কোথাও নেই বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির কতৃপক্ষ।

উত্তরা ইউনির্ভাসিটির ভিসি প্রফেসর ড. ইয়াসমীন আরা লেখা বলেন, উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ৩৫টি প্রোগ্রাম রয়েছে এবং আমাদের মোটো হচ্ছে ‘কোয়ালিটি এডুকেশন এট এফোর্টেবল টিউশন’। আমরা চলমান ভর্তি মেলা ফল-২০২৩ এবং আগামী জুন থেকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর উপলক্ষে ভর্তি ফিতে ৫০% ওয়েভার দিচ্ছি এবং ও লেভেল/এ লেভেল শিক্ষার্থীদের জন্য ৯০% ছাড়ে ভর্তির ব্যবস্থা করেছি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে ৭ বছরের সাময়িক অনুমোদন দিয়ে থাকে ইউজিসি। এ সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

নির্ধারিত সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গেলে আবেদনের প্রেক্ষিতে আরও ৫ বছর সময় দিয়ে থাকে ইউজিসি। কিন্তু এ সময়েও যারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফিরতে ব্যর্থ হলে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে কমিশনের।


সর্বশেষ সংবাদ