শিশু নাঈমকে ক্লাসে ফেরাতে কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ

শিশু নাঈমকে ক্লাসে ফেরাতে কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ
শিশু নাঈমকে ক্লাসে ফেরাতে কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ  © সংগৃহীত

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত দি বাডস রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নার্সারির শিশু শিক্ষার্থী নাঈম উর রহমানকে ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে ও তার ওপর চলমান মানসিক নিপীড়ন বন্ধ করতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ১১ জন আইনজীবী। শিক্ষা সচিব, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

বুধবার (৮ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের ১১ আইনজীবীর পক্ষে এই নোটিশ পাঠান অ্যাডভোকেট মো. আসাদ উদ্দিন।

ওই নোটিশে বলা হয়েছে, গত ৪ নভেম্বর দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার একটি সংবাদ আইনজীবীদের নজরে আসে। সংবাদটির শিরোনাম ছিল— ‘প্রতিদিন স্কুল গেটে দাঁড়িয়ে থাকে শিশু নাঈম’। সংবাদটির সবচেয়ে অমানবিক ও হৃদয়বিদারক দিকটি হলো ১ বছরের বেশি সময় ধরে শিশু নাঈম প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্কুলের পোশাক পরে। এরপর স্কুল ব্যাগ নিয়ে তার যমজ ভাইয়ের সঙ্গে স্কুলের গেট পর্যন্ত আসে। কিন্তু গেটে তাকে আটকে দেওয়া হয়। 

তার সহপাঠী ও অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যখন শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে বা টিফিনের সময় মাঠে খেলাধুলায় অংশ নিচ্ছে, তখন গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে বিষণ্ন মনে তা দেখছে নাঈম। স্কুল ছুটি পর্যন্ত সে দাঁড়িয়ে থাকে স্কুলের প্রধান গেটে। ছুটি হলে ভাইয়ের সঙ্গে বাসায় ফিরে যায়। গত এক বছর ধরে চলছে এমন ঘটনা। নাঈমের যমজ ভাইয়ের জন্য স্কুলের প্রধান ফটক উন্মুক্ত হলেও নাঈমের জন্য ফটকটি বন্ধ রয়েছে ১৩ মাস ধরে।

বিধি মোতাবেক স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন ও বেতন পরিশোধ করলেও সে স্কুলের উপযোগী নয়, কথা বলতে পারে না, পেন্সিল ধরতে পারে না ও দুষ্টামি করে— এমন অজুহাতে তাকে অনেকটা অবাঞ্ছিত করেছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কলেজ সড়কে অবস্থিত দ্য বাডস রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। যা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং মানবাধিকার ও শিশু অধিকারের প্রতি অবমাননা ও অবজ্ঞা প্রদর্শন।

আরও পড়ুন: শিশুর পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ

শিশু নাঈম ও তার যমজ ভাইকে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ওই স্কুলে নার্সারি বাংলা মিডিয়ামে ভর্তি করা হয়। স্কুলের অধ্যক্ষসহ তিন সদস্যবিশিষ্ট ভর্তি কমিটি তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর ওই বছরের জুন মাস পর্যন্ত তারা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেয়। পরে জুলাই মাসে তাদের ওই স্কুলেরই ইংলিশ মিডিয়ামে পুনরায় ভর্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভর্তি করা হয়। পরে তারা একসঙ্গে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেয়। 

২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে নাঈমকে ক্লাসে এমনকি স্কুলেও ঢুকতে দেওয়া হয় না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, সে স্কুলের উপযোগী নয়, কথা বলতে পারে না ও পেন্সিল ধরতে পারে না। এর আগে প্রায় দিনই শ্রেণিশিক্ষক কৃষ্ণা সূত্রধর নাঈমের ডায়েরিতে নানা রকম নেতিবাচক মন্তব্য লেখেন। যা শিশুটির ওপর মানসিক নির্যাতনের শামিল বলে উল্লেখ করা হয় নোটিশে।

ও নোটিশে আরও বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে শিশুটির বাবা অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি কোনো গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো তার সন্তানকে নিয়ে নানা ধরনের আপত্তিকর কথা বলেন। পরবর্তী সময়ে নাঈমের বাবা স্কুল কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত আবেদন করেন। 

কিন্তু তাতেও কোনো ফল হয়নি। বরং শিশুটির বাবার এমন তৎপরতার কারণে অধ্যক্ষ তাকে পত্র পাঠিয়েছেন নাঈমের টিসি নেওয়ার জন্য। শিশুটির অসহায় বাবা ব্যবসায়ী মো. আব্দুর রহমান ও মা ডা. নাদিরা খানম দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রায় বছর খানেক ধরে। কিন্তু কোনোভাবেই বিষয়টির কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এদিকে, ইতোমধ্যে শিশুটির শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে গেছে একটি বছর।

দ্য বাডস রেসিডেনশিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন কার্যক্রম বাংলাদেশের সংবিধান, আইন ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন জানিয়ে নোটিশে আরও বলা হয়, এর মাধ্যমে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও শিশু অধিকারের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হচ্ছে। তাই দেশের সচেতন নাগরিক এবং উচ্চাদালতের আইনজীবী হিসেবে এ আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। 

নোটিশ পাওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে শিশু নাঈমের ওপর চলমান অমানবিক ও মানসিক নিপীড়ন বন্ধ করতে এবং তাকে ক্লাসে ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় নোটিশদাতারা উচ্চ আদালতের দারস্থ হবেন বলে নোটিশে উল্লেখ আছে।

নোটিশ প্রেরণকারী অন্যান্য আইনজীবীরা হলেন— মো. জোবায়দুর রহমান, মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন, আল রেজা মো. আমির, মো. রেজাউল ইসলাম, কে এম মামুনুর রশিদ, মো. আশরাফুল ইসলাম এবং শাহীনুর রহমান, মোহাম্মদ হারুন, মো. গোলাম কিবরিয়া ও বেলায়েত হোসেন সুজা।

 

 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence