এটিইও নিয়োগ জটিলতা এক মাসে সমাধান করতে বলেছেন হাইকোর্ট

হাইকোর্ট
হাইকোর্ট  © ফাইল ছবি

সহকারী উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) নিয়োগে জটিলতা নিরসনে সরকারি কর্ম কমিশনকে (পিএসসি) পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এটিইও প্রার্থীদের করা রিটের ওপর বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর বেঞ্চ এ নির্দেশনা দেন। তবে হাইকোর্টের এ নির্দেশনা এখনো হাতে পায়নি পিএসসি।

রিটকারীদের আইনজীবী মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, সহকারী উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) নিয়োগে জটিলতা নিরসনে প্রার্থীরা পিএসসিতে একটি আবেদন করেছিলেন। বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে আদালত প্রার্থীদের করা আবেদন পিএসসিকে দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বলেছেন। ইতিমধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশনা ডাকযোগে পিএসসিতে পাঠানো হয়েছে।

তরিকুল ইসলাম বলেন, এটিইও পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে হঠাৎ পরিবর্তন ও আবেদন বন্ধ করায় ৩১ জুলাই রিটটি করা হয়। ৬ আগস্ট শুনানি শেষে আদালত বলেছিলেন, পিএসসি কী নির্দেশনা দেয়, তা দেখতে। এরপর দুই মাস পার হলেও পিএসসি বিষয়টি স্পষ্ট করেনি। পরে বিষয়টি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। পিএসসি আদালতের এ নির্দেশনা হাতে পাওয়ার পর থেকে এক মাস কাউন্ট হবে।

এর আগে চলতি বছরের গত ২৬ জুন সমন্বিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। সেখানে ৪০ নম্বর ক্রমিকে ১৫৯ জন এটিইও পদে নিয়োগের জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন চাওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বিভাগীয় প্রার্থী বলতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে কোনো শিক্ষক (অনূর্ধ্ব ৪৫ বছর) এটিইও পদে আবেদন করতে পারবেন।

আরও পড়ুন: পিএসসির নন-ক্যাডারে বড় নিয়োগ, ১৫৯ এটিইওসহ মোট পদ ১৬৫৪

তবে নিচে আবেদন নির্দেশিকায় বলা হয়- এ পদে আবেদনের জন্য প্রাথমিকের শিক্ষকের কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকা লাগবে। পরে নতুন শিক্ষকরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় যোগাযোগ করতে থাকেন। মন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্টভাবে শিক্ষকদের জানানো হয়, নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরাও এটিইও পদে আবেদন করতে পারবেন।

পরে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে লিখিত আবেদন করেন। এরপর ১৭ জুলাই মন্ত্রণালয় পিএসসিকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়। সেখানে বিদ্যমান বিধিমালা (তৎকালীন বিধিমালা) উল্লেখ করে এটিইও পদে নিয়োগ যোগ্যতার শর্ত সংক্রান্ত জটিলতা অবসান ও বিজ্ঞপ্তি সংশোধনের প্রয়োজন হলে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ করা হয়।

এরপর আবেদন নির্দেশিকা থেকে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকার বাধ্যবাধকতা তুলে দেয় পিএসসি। ফলে বিভাগীয় কোটায় পূরণযোগ্য ১৫৯ পদে এটিইও নিয়োগে ১ জুলাই থেকে অনলাইনে যে আবেদন শুরু হয়েছিল, তাতে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরাও আবেদন করার সুযোগ পান। ৩১ জুলাই পর্যন্ত এ পদে আবেদন প্রক্রিয়া চলার কথা ছিল।

কিন্তু আবেদন চলাকালে ২৪ জুলাই আবারও নিয়মে পরিবর্তন আনে পিএসসি। কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতার ঘর হঠাৎ যুক্ত করা হয়। এতে ফের জটিলতায় পড়েন নতুন শিক্ষকরা। তারা পিএসসি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে আবারও যোগাযোগ করে অভিযোগ জানাতে থাকেন। পিএসসির কোনো সাড়া না পেয়ে প্রার্থীরা রিট করেন।

প্রার্থীদের রিট শুনানিতে হাইকোর্ট বিষয়টি সমাধানে এক মাস সময় বেধে দেন। হাইকোর্টের নির্দেশনার বিষয়ে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (নন-ক্যাডার) আবদুল্লাহ আল মামুন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমরা এখনো আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে কিছুই জানি না। আগে কিছু জটিলতার কারণে এটিইও নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।

বর্তমানে সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৩৯টি। এর মধ্যে সরকারি ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থী ২ কোটি ৫ লাখের বেশি। আর দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় মোট শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭০৯ জন। এর মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশই নারী।


সর্বশেষ সংবাদ