ভুয়া সংবাদ ছড়িয়ে যুবদল নেতাকে হয়রানির অভিযোগ
- নোয়াখালী প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩৮ PM , আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩৮ PM

নোয়াখালী সদর উপজেলার আন্ডারচর ইউনিয়নে এক যুবদল নেতাকে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী যুবদল নেতা মো. আজাদ মোল্লা (৩২)। তিনি আন্ডারচর ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম মাইজচরা গ্রামের বাসিন্দা মো. আনোয়ারুল হক নশুর ছেলে।
অভিযোগে মো. আজাদ মোল্লা বলেন, রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে একটি কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জহির আলম নামের ব্যক্তিকে ব্যবহার করে একটি পূর্বপরিকল্পিত ভিডিওর খণ্ডিত অংশ ছড়িয়ে আমার মানহানির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, আন্ডারচর ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি মানছুর আহমেদের দখলে থাকা ২ একর ৯০ শতক জমি নিজেদের দাবি করে জহির আলম ও আবদুল মালেক নামের দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য উভয় পক্ষ পশ্চিম মাইজচরা নতুন বাজার সমাজের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে বিচার প্রার্থনা করে।
এর আগে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের সুযোগে জহির আলম স্থানীয় সবুজ নামের একজনের মাধ্যমে মানছুরের সাথে দেড় লাখ টাকায় জমি দখলের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকা নগদ পরিশোধ করা হয় এবং মাটি বিক্রির পর বাকি এক লাখ টাকা পরিশোধের কথা ছিল। পরে জহির আলম জমির মাটি বিক্রি করতে গেলে প্রতিপক্ষ আবদুল মালেকের আপত্তির মুখে স্থানীয় সমাজপতিরা বাধা দেন।
পরবর্তীতে আজাদ মোল্লা স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ইলিয়াস ও আহমেদ মেম্বারের সহায়তায় মানছুর ও সবুজের কাছ থেকে চুক্তিকৃত ৩০ হাজার টাকা এবং ব্ল্যাংক স্ট্যাম্প উদ্ধার করেন। এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে জহির আলম গত ১৭ এপ্রিল সকালে আজাদের বসতবাড়িতে প্রবেশ করে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন এবং দরজার সামনে গিয়ে কাগজপত্র দাবি করেন। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে, যার একটি খণ্ডিত ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার পর, ওইদিন বিকেলে নতুন বাজার এলাকায় স্থানীয়ভাবে সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়। সেখানে জহির আলম নিজের ভুল স্বীকার করে উপস্থিত সবার কাছে ক্ষমা চান এবং একটি স্টেটমেন্ট দেন, যেটির ভিডিওও পরে ছড়িয়ে পড়ে।
কিন্তু মীমাংসিত ইস্যুকে পুঁজি করে গত ১৯ এপ্রিল থেকে একটি কুচক্রী মহল জহির আলমকে দিয়ে যুবদল নেতা আজাদ মোল্লার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করছে। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, জমির দখল না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে জহির আলম যুবদল নেতা আজাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। একই কুচক্রী মহলের ইন্ধনে ২০ এপ্রিল মানছুর আহমেদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে জহির আলম, যেখানে রহস্যজনকভাবে আজাদ মোল্লাকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
জহির আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি স্বীকার করেন যে, তিনি আজাদের বাড়িতে বিনা অনুমতিতে ভিডিও ধারণ করেছিলেন এবং এ সংক্রান্ত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে তিনি দাবি করেন, আজাদের কাছে তিনি কোনো টাকা-পয়সা বা কাগজপত্র দেননি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ইলিয়াস বলেন, জহির আলম স্থানীয় সবুজের মাধ্যমে দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে মানছুরের কাছ থেকে জমি দখলের চুক্তি করেন। প্রশ্ন হলো, যদি জমির প্রকৃত মালিক জহির আলম হন, তাহলে কেন তাকে টাকা দিয়ে জমি নিতে হবে? আজাদ মোল্লা আমাদের সহযোগিতায় চুক্তিকৃত ৩০ হাজার টাকা ও ব্ল্যাংক স্ট্যাম্প উদ্ধার করেছেন। জহির আলমের কিছু মানসিক সমস্যা আছে, রাগের বশে তিনি যুবদল নেতাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করছি।
ইউপি সদস্য আহমেদ মেম্বার ও ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতিও জানান, আজাদ মোল্লার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি বা জমি দখলের কোনো অভিযোগ সত্য নয়। তিনিও জমি সমস্যার সমাধানে আমাদের সাথে ছিলেন।