আনন্দ শোভাযাত্রাকে 'মঙ্গল শোভাযাত্রায়' রূপান্তর ভারতীয় ষড়যন্ত্রের অংশ: হেফাজতে ইসলাম
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩৮ PM

পহেলা বৈশাখ উদযাপনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় রীতি ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’কে ‘সর্বজনীনতা’র নামে সবার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনটির আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা সাজেদুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) এক যৌথ বিবৃতিতে এই অভিযোগ করেন। বিবৃতিটি স্বাক্ষর করেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।
নেতারা দাবি করেন, ১৯৮৯ সালে পহেলা বৈশাখে শুরু হওয়া আনন্দ শোভাযাত্রাকে পরে ভারতীয় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রায়’ রূপান্তর করা হয়েছে। তারা জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো)-এর স্বীকৃতিকে ‘বানোয়াট’ আখ্যা দিয়ে তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান এবং এ লক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে সংস্থাটিকে চিঠি দেওয়ার অনুরোধ করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় প্রতি বছর জন্মাষ্টমীতে শোভাযাত্রা করে থাকেন, যা তাদের ধর্মীয় রীতি। আমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ‘সর্বজনীনতা’র নামে রাষ্ট্রীয় উৎসবে পরিণত করা সেক্যুলার ফ্যাসিস্ট বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের একটি কৌশল। এর মাধ্যমে মুসলিম সংস্কৃতি ও জাতীয় চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।”
তারা অভিযোগ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ এ কাজের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে এবং সেটিকে সেক্যুলার ফ্যাসিবাদের ‘আঁতুড়ঘর’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
হেফাজত নেতাদের মতে, “পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আবেদনে ইউনেস্কো ২০১৬ সালে পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ বা অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। অথচ এই শোভাযাত্রা প্রকৃত পক্ষে হিন্দু ধর্মীয় ঐতিহ্যের ধারক।”
তারা বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার পরিবর্তে পহেলা বৈশাখের প্রাথমিক ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’কে ফিরিয়ে আনা হলে একটি সাম্প্রদায়িকবিহীন উৎসবের পরিবেশ তৈরি হতে পারে। কারণ আনন্দ শোভাযাত্রা ধর্মনিরপেক্ষ হলেও মূর্তিপূজার সাথে যুক্ত ছিল না।
নেতারা বলেন, “আমরা জাতীয় উৎসবে এমন কোনো উপাদান দেখতে চাই না, যা ইসলামের তৌহিদি চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কিন্তু বৈশাখী মঙ্গল শোভাযাত্রায় হিন্দু দেবদেবীর প্রতিকৃতি ও বিভিন্ন ধর্মীয় পশুপাখির মূর্তি দিয়ে ভরিয়ে ফেলা হয়। অথচ তথাকথিত সেক্যুলার গোষ্ঠীর এতে কোনো আপত্তি নেই।”
বিবৃতিতে ইসলামবিদ্বেষ এবং বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রসারে সেক্যুলারদের ভূমিকারও কড়া সমালোচনা করা হয়। তারা বলেন, “হাজার বছরের সংস্কৃতির নামে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে এরা মঙ্গল শোভাযাত্রার দালালি করে যাচ্ছে। আমরা এই বিদেশী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রুখতে ইসলামী ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে ধারণ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”