মার্চে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নিহত ১৭
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২৮ PM , আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২৮ PM

চলতি বছরের মার্চ মাসে দেশে মোট ৯৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ২৩ জন নিহত হয়েছেন, যা আগের মাস ফেব্রুয়ারির তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। নিহতদের মধ্যে ১৮ জনই বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থক। এসব সহিংসতার বেশিরভাগই ঘটেছে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ঘিরে।
বুধবার প্রকাশিত মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) মাসিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চে দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি সন্তোষজনক ছিল না। পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য ও ঈদযাত্রা কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ২৩ জন নিহত ও ৭৩৩ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৮৮টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও অন্যান্য দলের সঙ্গে সংঘর্ষে। এসব ঘটনায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক প্রতিশোধ ও জমি বা স্থাপনা দখলকে সহিংসতার মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে বিএনপির ১৮ জন, আওয়ামী লীগের ৩ জন এবং ইউপিডিএফের ২ জন রয়েছেন। বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ৬৪টি ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও ৫০২ জন আহত হয়েছেন। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে ১১টি, যাতে ২ জন নিহত ও ৫২ জন আহত হয়েছেন। বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে ১০টি সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও ৮১ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া বিএনপি-এনসিপির মধ্যে ৩টি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও ৩১ জন আহত হয়েছেন।
এইচআরএসএস জানায়, মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতার সংখ্যা কিছুটা কমলেও নিহতের সংখ্যা ফেব্রুয়ারির তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ১০৪টি রাজনৈতিক সহিংসতায় ৯ জন নিহত ও ৭৫৫ জন আহত হয়েছিলেন।
এছাড়া মার্চে রাজনৈতিক মামলায় ১,৬৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১,৬৪৪ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ৩টি হামলার ঘটনায় ২ জন আহত এবং ২টি প্রতিমা ভাঙচুরের তথ্যও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
নারী ও শিশুনির্যাতনের চিত্রও উদ্বেগজনক। মার্চে অন্তত ২৮৪ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৩৩ জন, যাদের মধ্যে ৩০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার এবং ২ জন ধর্ষণের পর নিহত হন। ধর্ষণের শিকারদের মধ্যে ৮৩ জনই ১৮ বছরের কম বয়সী। মাগুরায় ৮ বছরের এক শিশুকে তার বোনের শ্বশুর কর্তৃক ধর্ষণ ও পরে মৃত্যুর ঘটনাটিও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর নির্যাতনের বিষয়েও তথ্য তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। মার্চে ২৯টি ঘটনায় ৪১ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হন, যাদের মধ্যে ২৩ জন আহত হয়েছেন এবং ৩টি মামলায় ৭ জন সাংবাদিক অভিযুক্ত হয়েছেন।
গণপিটুনির অন্তত ৪০টি ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৪৪ জন আহত হয়েছেন। শ্রমিক নির্যাতনের ২১টি ঘটনায় ৭ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন শিশু গৃহকর্মী মালিকের নির্যাতনে মারা যান। এছাড়া ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে অন্তত ২ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন, যা ৬টি ঘটনায় সংঘটিত হয়েছে।
এইচআরএসএস-এর নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, “মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনা গভীর উদ্বেগজনক। নারী ও শিশু নির্যাতন, সাংবাদিক নিপীড়ন বেড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত না করা হলে সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।”