ছাত্রদল নেতা হত্যার ঘটনায় দুই উপজেলায় উত্তেজনা-বিক্ষোভ, গ্রেপ্তার ৪

ছাত্রদল নেতা মো. রাশেদ হত্যার ঘটনায় চরফ্যাশন ও মনপুরায় বিক্ষোভ হয়েছে
ছাত্রদল নেতা মো. রাশেদ হত্যার ঘটনায় চরফ্যাশন ও মনপুরায় বিক্ষোভ হয়েছে  © টিডিসি ফটো

ভোলার মনপুরায় দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়ি বাঁধের নির্মাণকাজ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সম্পাদক মো. রাশেদ (২৭) নিহত হওয়ার পর চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বুধবার (১৯ মার্চ) রাত ১০টার বিচার দাবিতে বিএনপির সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম সমর্থিতরা সিরাজগঞ্জ বাজার ও কোড়ালিয়া বাজার বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেন। 

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) উপজেলার হাজিরহাট বাজারে হত্যায় জড়িত আসামীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন বিএনপি নেতারা। একই সময়ে একই দাবিতে চরফ্যাশন উপজেলায় আলম সমর্থিত ছাত্রদলের নেতারা বিক্ষোভ মিছিল করেন। এদিকে ছেলেকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাশেদের মা কহিনুর বেগম ও বাবা আবুল কালাম। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ আমলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১ হাজার ১৫ কোটি টাকার চলমান বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ করছিল ১৪টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ৫ আগস্টের পর অলিখিতভাবে এসব কাজের দায়িত্ব নেয় বিএনপি সমর্থিতরা। নদী থেকে বালু তোলা, বালু সাপ্লাইসহ নানা কাজ নিয়ে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছিল দীর্ঘদিন। এর জেরেই দুই পক্ষের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটে। 

বুধবার সকালে সংঘর্ষের পর আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকায় নেয়ার পথে রাত সাড়ে ৯টায় মারা যান রাশেদ। এ ঘটনায় গুরুতর আহত রাব্বি (২৫), সামসুদ্দিন (২৮), সোহান, মামুনসহ ১০ জনকে চরফ্যাশন ও মনপুরা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বুধবার রাত ১২টায় উপজেলা বিএনপির বিএনপির সভাপতি সামছুদ্দিন চৌধুরী বাচ্চু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান মিলন মাতাব্বর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ হামলার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, চরফ্যাশন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবদীন আকন্দ’র নামে মনপুরায় গত বছর থেকে বেড়িবাধ নির্মাণকাজ চলছিল। কাজের মান খারাপ ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ করেন সাবেক ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদসহ স্থানীয় অনেকে। এ সময় বর্তমানে ঠিকাদারী কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা মনপুরার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সদস্য গিয়াস উদ্দিন মিজির নেতৃত্বে প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা করে। এ সময় নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করা হয় রাশেদসহ ১০-১২ জনকে।

এদিকে একই দাবিতে উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক মো. একরাম কবির ও সদস্য সচিব মো. শাহেদুল ইসলাম শাহীন স্বাক্ষরিত শোক বার্তায়, সাবেক ছাত্রদল নেতার হত্যার ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

স্থানীয়রা আরো জানান, গিয়াস উদ্দিন মিজি এক সময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ৪২তম সদস্য হন। তবে তার পরিবার অন্য সদস্যরা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ফের তিনি বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন।

আরো পড়ুন: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্য, প্রতিবাদে মধ্যরাতে ঢাবিতে বিক্ষোভ

কেন্দ্রীয় যুবদলের সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন সমর্থিত উপজেলা বিএনপির সাবেক সম্পাদক আবদুল মান্নান হাওলাদার বলেন, বাঁধ নির্মাণের ঠিকাদারি কাজ নিয়ে উপজেলা বিএনপির (আলম-নয়ন) দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জেরে হামলা হয়। এ ঘটনায় ছাত্রদল দলের সাবেক নেতা নিহত হন। নয়ন সমর্থিত কেউ মনপুরায় কোনো ধরনের অনিয়ম বা দখলের রাজনীতি করেন না। ওই দিনের ঘটনায় নয়ন সমর্থিত বিএনপি বা অঙ্গ সংগঠনের কেউ জড়িতও নন।

এ ঘটনায় নিহত রাশেদেরে বড় ভাই মো. আজাদ বাদি হয়ে মনপুরা থানায় ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন বলে জানান মনপুরা থানার ওসি আহসান কবির। পরে অভিযান চালিয়ে মামলার চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন, জসিম মিঝি, রহিম মিঝি, মামুন ডাক্তার, আল-আমিন চৌকিদার। তাদের সবার বাড়ি মনপুরা উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে।


সর্বশেষ সংবাদ