সরকারে গেলে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা রাখবে না ঐক্যফ্রন্ট

  © সংগৃহীত

ক্ষমতায় গেলে সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা বাতিল করার অঙ্গীকার করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে এই অঙ্গীকার করেছেন তারা। এছাড়া সরকারি চাকরিতে শুধু অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটাব্যবস্থা রেখে বাকি সব ধরনের কোটা বাতিলেরও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় এই ইশতেহারে। আজ সোমবার রাজধানীর হোটেল পূর্বাণী ইন্টারন্যাশনালে এক অনুষ্ঠানে এ ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।

এবারের নির্বাচনের জয় পরাজয়ের মূল হাতিয়ার হিসেবে তরুণ ও শিক্ষিত যুব সমাজকে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। দেশের প্রায় আড়াই কোটি তরুণ ভোটারকে নিয়েই ভোট যুদ্ধের নকশা আঁকছে প্রধান প্রধান রাজনীতিক দলগুলো। এই ধারাবাহিকতায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারেও প্রাধান্য পেয়েছে তরুণদের চাহিদা এবং দাবি-দাওয়া।

শিক্ষিত তরুণরা দীর্ঘদিন ধরে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। তাদের এই দাবিকে আমলে নিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারের শিক্ষা ও কর্মসংস্থান অংশে বলা হয়, পুলিশ ও সামরিক বাহিনী ব্যতীত সরকারি চাকুরিতে কোন বয়সসীমা থাকবেনা। শুধুমাত্র অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা থাকবে। এছাড়া সরকারি চাকরিতে অন্য সব ধরনের কোটা বাতিল করা হবে। ত্রিশোর্ধ্ব শিক্ষিত বেকারদের জন্য ভাতা প্রদানের অঙ্গিকারও রয়েছে ইশতেহারে। 

তরুণদের চাকরিতে বয়স সীমা বৃদ্ধির দাবি দীর্ঘদিনের

ক্ষমতা গ্রহণের পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে সরকারের সকল শূণ্যপদে নিয়োগ সম্পন্ন করার ঘোষণাও রয়েছে এতে। রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের কারিগরী শিক্ষা দিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থান করার পরিকল্পনা। কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল সংস্কার করার জন্য কমিশন গঠন করার ঘোষণা দেয়া হয় ইশতেহারে। 

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমানোর লক্ষ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু করার কথা বলা হয়েছে ইশতেহারে। এতে আরো বলা হয়েছে, প্রথম বছর থেকেই ডাকসুসহ সকল ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে। বাতিল করা হবে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতে সরকারি শিক্ষাব্যয় সুনির্দিষ্ট করা হবে। ওয়ার্ক পারমিটবিহীন সকল বিদেশী নাগরিকদের কর্মসুযোগ বন্ধ করা হবে। 

দেশের ডিজিটালাইজেশনের গতিকে সমুন্নত রাখতে দেয়া হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি। গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ফ্রি ওয়াইফাই সংযোগের ব্যবস্থাও করা হবে। 

প্রসঙ্গত, গত ৩ ডিসেম্বর কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা প্রকাশ করে। এতে নির্বাচনে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন তারা। দেশের প্রধান প্রধান রাজনীতিক দলগুলো তারুন্যের ইশতেহারের দাবিগুলোকে আমলে নিয়ে ইশতেহার প্রণয়ন করছে। এসব দাবির মধ্যে শিক্ষিত তরুণদের জন্য উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রাখছে দলগুলো। 

তারুণ্যের ইশতেহার ঘোষণা করছে কোটা আন্দোলনকারীরা

তারুণ্যের ইশতেহারের ৫ দফায় যা যা ছিল

পাঁচ দফা দাবি-দাওয়ার মধ্যে প্রথম দাবি ছিল- বেকারত্ব নিরসনে কর্মসংস্থান। এতে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো- শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন শেষে যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মের নিশ্চয়তা প্রদান, বেকার তরুণদের সহজ শর্তে ন্যূনতম ৫ লাখ টাকার ‍ঋণ প্রদান, ঘুষ-দুর্নীতি ও রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। 

২য় দফায় উল্লেখিত দাবিগুলো হলো- চাকরির নিয়োগ ব্যবস্থা। এতে রয়েছে-৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর চাকরিতে কোটা প্রথার সংস্কার, চাকরির আবেদন সম্পূর্ণ ফ্রি করা, প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে ও লিখিত পরীক্ষার ৯০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা এবং মৌখিক পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ নির্ধারণ করা, তথ্য যাচাইয়ের নামে হয়রানি বন্ধ করা, বেসরকারি চাকরি আইন প্রণয়ন ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক নিয়োগ পরীক্ষা পদ্ধতির প্রণয়ন। 

তৃতীয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- শিক্ষা ও গবেষণা। এতে বলা হয়, শিক্ষাখাতে বার্ষিক বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়া, প্রশ্ন ফাঁসবিরোধী সেল গঠন করা, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধে কঠোর আইন করা এবং মেধাপাচার রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

চতুর্থ দফা দাবিতে উল্লেখ করা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক সংক্রান্ত বিষয়গুলো। এতে বলা হয়, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা, আবাসনের কৃত্রিম সংকট দূর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের ১০ শতাংশ গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেয়া, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেতন কাঠামো তৈরি করা, মাদক, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ ক্যম্পাস গড়ে তোলা।

৫ম তম দফায় বলা হয় যুব অ্যাসেম্বলি আয়োজনের কথা। যুব সমাজকে গণতান্ত্রিক পরিবেশে উন্নত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠার সুযোগ দিতে প্রতি বছর যুব অ্যাসেম্বলি এর আয়োজন করার উদ্যোগ নিতে বলা হয়। যুব অস্যাম্বেলিতে প্রতিনিধিত্ব করবে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত ছাত্র সংসদের সদস্যরা।


সর্বশেষ সংবাদ