টিউশন মিডিয়া ধারণ করছে বাণিজ্যিক রূপ, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
- তারিকুল তাজ
- প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ০৬:১৯ PM , আপডেট: ২২ জুন ২০২৫, ০৩:০৮ PM

কক্সবাজার শহরে দিন দিন বাড়ছে টিউশন মিডিয়ার সংখ্যা। শিক্ষার্থীদের টিউশন খুঁজে দেওয়ার নামে এসব প্রতিষ্ঠান এখন বাণিজ্যিক চেহারা নিয়েছে। মিডিয়াগুলোর অন্যতম নিয়ম হলো টিউশন নিশ্চিত করার আগে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রিম টাকা নেওয়া। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা, যারা নিজের খরচ চালাতে বা পরিবারকে সহায়তা করতে টিউশন খোঁজেন।
বর্তমানে এসব টিউশন মিডিয়ার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে কোনো সরকারি নীতিমালা নেই। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান নামসর্বস্ব কোনো ঠিকানা নেই, ফোন বন্ধ থাকলে খুঁজে পাওয়ার উপায়ও নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা প্রতারিত হলেও অভিযোগ করার মতো নির্ভরযোগ্য কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই।
এই অবস্থা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের ওপর, যারা টিউশন করে নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ চালান বা পড়ালেখার ব্যয় মেটান। একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, টিউশনের আশায় অগ্রিম টাকা জোগাড় করতে গিয়ে তাদের বাধ্য হয়ে ধার করতে হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনেক সময় অগ্রিম টাকা দেওয়ার পরেও টিউশন মিলছে না। কেউ কেউ টিউশন পেলেও তা কয়েকদিনের মধ্যেই বাতিল হয়ে যায়। এরপর আর মিডিয়া সংশ্লিষ্ট কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। টাকাও ফেরত মেলে না।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন,‘আমি এক মিডিয়ার মাধ্যমে একটি টিউশন পেয়ে ২৫০০ টাকা অগ্রিম দিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু দিন না যেতেই অভিভাবক ছাত্র সরিয়ে নেয়। এখন মিডিয়া বলছে এটা তাদের দায় নয়।’
শুধু অগ্রিম টাকা নেওয়াই নয়, অনেক টিউশন মিডিয়া শিক্ষার্থীদের সাথে করছে প্রতারণাও। বিজ্ঞাপন দিয়ে অগ্রিম টাকা নিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা যদি ২৫০০ টাকা অগ্রিম দিই, সেটা পুরো মাসের খরচ। অথচ কোনো নিশ্চয়তা নেই, টিউশন পাবো কি না। এটা এক ধরনের প্রতারণা। আমাদের ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষায় একটি তদারকি কমিটি বা হেল্পলাইন চালু করা দরকার। শিক্ষাবান্ধব শহর গড়তে হলে এসব সমস্যার সমাধান এখনই প্রয়োজন।
অভিভাবকগণ অভিযোগ করে বলেন, টিউশন মিডিয়াগুলো শুধু নিজেদের স্বার্থে কোনো প্রকার যাচাই বাছাই না করেই একজন শিক্ষককে পাঠিয়ে দেন। অনেক সময় সাবজেক্ট রিলেটেড না এমন শিক্ষকদেরও পাঠায়। সেক্ষেত্রে আমাদের সন্তানরা প্রাপ্য শিক্ষাটুকু থেকে বঞ্চিত থেকে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিউশন মিডিয়াগুলোর ওপর নজরদারি জরুরি। অন্তত একটি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু করা উচিত যাতে কেউ প্রতারিত হলে অভিযোগ করতে পারে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের সচেতন হওয়া দরকার, অগ্রিম টাকা দেওয়ার আগে সব তথ্য যাচাই করে নেওয়া উচিত।
শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি টিউশন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপার্জনের মাধ্যম। কিন্তু দালালচক্র ও অনিয়ন্ত্রিত মিডিয়া ব্যবস্থার কারণে আজ তা ভোগান্তির উৎস হয়ে উঠেছে। বিষয়টি এখনই গুরুত্ব সহকারে না দেখলে, আগামীতে আরও বড় ধরনের সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক রুবাইয়া আফরোজ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন থাকা জরুরি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা যাবে। আর কেউ কোনো টিউশন মিডিয়ার দ্বারা প্রতারিত হলে তৎক্ষণাৎ আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।