বাবার অপদস্থ হওয়ার ভিডিও ভাইরাল, চবি ছাত্রীর আবেগঘন স্ট্যাটাস

কান্তি লাল আচার্য (মাঝে সাদা শার্ট)
কান্তি লাল আচার্য (মাঝে সাদা শার্ট)   © সংগৃহীত

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী চৌধুরী (টিএসি) উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্যকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই করানো হয়েছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বাবার পদত্যাগের ভিডিওটি যুক্ত করে  ওই শিক্ষকের মেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী ভাবনা আচার্য ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।   

স্ট্যাটাসে ভাবনা লেখেন, ‘আমার বাবা জনাব কান্তি লাল আচার্য। ৩৫ বছর ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। আমার বাবাকে বুধবার (১৬ এপ্রিল) কোন রকম প্রমাণিত অভিযোগ ছাড়া বলপূর্বক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করানো হয়। আমার বাবার কী অপরাধ, কী সমস্যা কিছু বলা হয়নি।’

ভাবনার ভাষ্য, ‘জানেন, স্কুলে ঝামেলা হওয়ার আগে বাবাকে মানা করা হয় স্কুল যেতে।বলছিল, স্কুলে গেলে অপমান হতে হবে। বাবা সেই কথার উত্তরে বলেন, আমি কোন অন্যায় করিনি,আমার কোন অপরাধ নেই। আমাকে পদ থেকে সরে যেতে বললে নির্দ্বিধায় আমি সরে যাবো। তবুও আমি স্কুলে যাব। আমি কেন পালিয়ে বেড়াবো। কেউ আমার অপরাধের প্রমাণ আনতে পারলে আনুক।’

ঘটনার বিবরণ জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘বাবাকে পদত্যাগ করার আগেও স্কুলে ককটেল ফাটানো হচ্ছিল। আমার বাবা তখনো নির্ভীক।জোড় করে সাইন করতে বলছিল এমন একটি কাগজে যেখানে লেখা ছিল,দুর্নীতির অভিযোগে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি।বাবা নির্ভয়ে বলেছিল,আমি দুর্নীতি করিনি, এই পেজে আমি সাইন করবো না। এমনিতেই পদত্যাগ করছি। সেই সময় বাবাকে একদল মারতে যায়। পরবর্তীতে, আরেকটি কাগজে লেখা হয়, ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি।’ 

বাবাকে অপদস্থ করার এ ঘটনায় হতাশার কথা জানিয়ে ভাবনা লেখেন, ‘কী সুন্দর তাই না! আমার বাবা কত মানুষকে ঘরে রেখে পড়িয়েছেন, কত মানুষকে টাকা ছাড়া পড়িয়েছেন, কত মানুষের ফি মওকুফ করেছেন। আজ একজন শিক্ষকের এই পরিণতি!’

এ ঘটনার পর তার বাবা অসুস্থ হয়ে গেছেন উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘আমার বাবা অসুস্থ হয়ে গেছে বিশ্বাস করেন।আমার বাবা এবং আমরা কেউ মানতে পারছি না যে, একজন মানুষ ৩৫ বছর চাকরিরত থাকার পর তার এই পরিণতি। আপনারা উগ্র হয়ে একজন জলজ্যান্ত মানুষকে কবর দেয়ার মতো যন্ত্রণা দিয়েছেন।’

তিনি আরও লেখেন, ‘এত দিন অন্য মানুষের এমন ঘটনা দেখতাম। আজ আমার বাবার সাথে এই হেন কাজ হয়েছে। জানেন, আমরা মেয়েরা বাবার অপদস্থ হওয়ার ভিডিও দেখে রাতে ঘুমাতে পারছি না। ভাবুন উনি শুধু শিক্ষক নয়, উনি আমাদের বাবা। আপনার বাবার সাথে এমন হলে আপনার কেমন লাগবে বলুন!’

উল্লেখ্য, শুক্রবার  দুপুর ২টা পর্যন্ত ফেসবুকে ৩ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ ভিডিওটি দেখেছেন এবং শেয়ার করেছেন ২ হাজার ১০০ মানুষ।


সর্বশেষ সংবাদ