সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন
‘রাখাল রাহাকে জাতির নায়ক বানিয়ে এনসিটিবি তাদের ব্যর্থতা আড়াল করতে চাচ্ছে’
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:৩২ PM , আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০১:১০ PM

এনসিটিবি ইস্যুতে সৃষ্ট নানা বিতর্কে জড়িত রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদুর রহমানকে জাতির নায়ক বানিয়ে এনসিটিবি তাদের ব্যর্থতা আড়াল করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করে সংগঠনটি।
তারা বলেন, ‘আমরা মনে করছি বিতর্কিত রাখাল রাহাকে জাতির নায়ক বানিয়ে এনসিটিবি তাদের ব্যর্থতা, দুর্নীতি এবং অনিয়ম আড়াল করতেই এই অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবীর। তিনি বলেন, ‘গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যখন সমস্ত নাগরিক সমস্যা মোকাবেলায় দলমতের ঊর্ধ্বে এসে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন তখন দেশের কিছু মহল জনগণের মাঝে ঘৃণা ও বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা লক্ষ্য করছি এখনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে ফ্যাসিবাদের দোসররা স্বক্রিয় এবং নানা ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি সর্বোপরি তোষামোদিতে ব্যতিব্যস্ত থাকায় যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে জুলাই বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল তা বহুলাংশে ব্যর্থ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি ক্ষমতার পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অভ্যুত্থান পরবর্তী যারা বিভিন্ন দায়িত্বে আসীন হয়েছেন তারাও জনগণের প্রত্যাশাকে অবমূল্যায়ন করে ফ্যাসিবাদী কায়দায় নিজেদের স্বার্থ হাসিলে মত্ত হচ্ছেন। যে যেভাবে পারছে সে সেভাবেই ক্ষমতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে অন্যদের উপর নির্লিপ্ত রেজিম চালিয়ে নিজে অপরাধের দুর্গ গড়ে তুলছে।’
জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, ‘গত স্বৈরশাসকের আমলে চালু করা গণবিরোধী নতুন শিক্ষাক্রম ২০২১ বাতিলে আমাদের অংশগ্রহণ ছিল আপোষহীন লড়াইয়ের। ২০২৩ সালে শুরু করে দীর্ঘ সংগ্রামের এই পথ পাড়ি দিতে আমাদেরকে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ন্যায়ের পক্ষে থেকেও আমরা তৎকালীন সরকারের রোষানলে পড়েছিলাম। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আমাদের অনেকের জেল হয়েছিল। অবর্ণনীয় দুর্ভোগ আর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম আমরা। আন্দোলনের শুরুটা দুএকজন করলেও পরবর্তীতে গণমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। ধীরে ধীরে আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে, দেশের শিক্ষিত জনসাধারণ সোচ্চার হয় সরকারের গণবিরোধী সিদ্ধান্তে। আমাদের আন্দোলনটি কোন একক ব্যক্তির ফসল নয়। আমরা আন্দোলনে সম্মিলিতভাবে লড়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় আন্দোলনের নামকরণও হয়েছিল সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন।
তিনি বলেন, ‘আমরা কখনো কোথাও একক নেতৃত্বের কথা বলিনি বা এই আন্দোলন একক নেতৃত্বে হয়নি। ২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সংবাদ সম্মেলনে রাখাল রাহাকে শুধুমাত্র লিখিত বক্তব্য প্রদান করতে দেয়া হয়। লিখিত বক্তব্য পাঠ করলেও তিনি সেই সময় সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক ছিলেন না। সংবাদ সম্মেলনের পর মিডিয়া মিসলিড করে তাকে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক ঘোষণা করলে তা সর্বত্র ছড়িয়ে যায় এবং পরদিন তিনি সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক হতে আমাদেরকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘এক পর্যায়ে গুম হওয়া, গ্রেফতার হওয়ার ভয় দেখিয়ে তার অফিসে ডেকে পূর্বের কমিটির অনুমোদন ছাড়াই নতুন কমিটি ঘোষণা করতে বলেন। আগের কমিটির ১১ জনের মধ্যে মাত্র দুজনের উপস্থিতিতে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হলে মেজোরিটির তোপের মুখে কমিটি স্থগিত করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘২৩ নভেম্বর ২০২৩ সালে আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর কবীর ও কাজী সাইফুল হক পনিরকে এনসিটিবির দায়ের করা মতিঝিল থানার মামলায় গ্রেফতার করে ডিবি। তাদের সাথে আরো গ্রেফতার হয় আবুল হাসনাত ও গোলাম রাব্বি। আন্দোলনে সামনের সারিতে নেতৃত্ব দেয়ায় মডারেটর তাপসী তাজ খানকে গ্রেফতার করার অভিযান চালায় ২৩ নভেম্বর। ২৪ নভেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ২৯ নভেম্বর আন্দোলনের আরেক নেতা আল আমিন হোসেনকে গ্রেফতার করলে আন্দোলন নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ে এবং সচেতন অভিভাবক সমাজের ব্যানারে অ্যাডভোকেট মুসলিম বিন হাইয়ের নেতৃত্বে আন্দোলন চলতে থাকে।
জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, ‘আমরা আরেকটি বিষয় উল্লেখ করছি, গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ফেনীর বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ দিতে গেলে রাখাল রাহা সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের অথরিটিকে অবগত না করেই সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের নামে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিনের নিকট স্মারক লিপি প্রদান করেন এবং তাকে অবগত করেন বাংলাদেশের অভিভাবকরা তার নেতৃত্বে আন্দোলন করেছিল। পরবর্তীতে শিক্ষা উপদেষ্টার সুপারিশে রাখাল রাহা এনসিটিবির পাঠ্য পুস্তক পরিমার্জন কমিটির সদস্য সচিব নিযুক্ত হোন এবং এনসিটিবিতে একক আধিপত্য কায়েমের মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী গ্রাফিতি, জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা বইয়ের পিছনে ছাপা, টেন্ডার ক্যালেংকারী ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানাসহ একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করতে থাকেন।’
তিনি বলেন, ‘রাখাল রাহা সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের শেষ দিকে আমাদের সাথে যুক্ত হলেও তিনি উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা পালন করেননি। উপরন্তু তিনি ঐতিহাসিক এই প্ল্যাটফর্মকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করেছেন যা শুধু আমাদের সাথেই না, পুরো জাতির সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।’
এনসিটিবি চেয়ারম্যান বক্তব্য নিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন সম্প্রতি এনসিটিবি চেয়ারম্যান রিয়াজুল হাসান গত ১১ মার্চ গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়েছেন যে, রাখাল রাহার নেতৃত্বে অভিভাবকরা আন্দোলন করেছেন এবং সে কারণেই শিক্ষাক্রম পরিবর্তন হয়েছে। এনসিটিবি চেয়ারম্যানের দুরভিসন্ধিমূলক এই বক্তব্য প্রত্যাহারের আহবান জানাচ্ছি। আমরা এনসিটিবির চেয়ারম্যানের এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি এবং এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে গণমাধ্যমে ক্ষমা চাইতে হবে এবং আমাদের দাবিগুলি মানতে হবে, অন্যথায় দেশবাসীকে সাথে নিয়ে এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করা হবে।’