বাংলাদেশে বিদুৎসংকট থাকতে পারে ২০২৬ সাল পর্যন্ত: ব্লুমবার্গ

লোড শেডিং
লোড শেডিং   © সংগৃহীত

বিশ্ববাজারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উপাদান প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ভয়াবহ বিদ্যুৎসংকটের মধ্য দিয়ে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ। 

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিদিন যে বিদ্যুৎবিভ্রাট হচ্ছে তার প্রধান কারণ বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি। বাজারের পরিস্থিত যদি অপরিবর্তিত থাকে—সেক্ষেত্রে আগামী তিন বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সাল পর্যন্ত এই ভোগান্তি  বাংলাদেশকে সহ্য করতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, জুন মাসে অস্থির দামের কারণে প্রাকৃতিক গ্যাস কেনা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে সরবরাহ নিশ্চিতে পথ খুঁজছে বাংলাদেশ। 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কাতারকে রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানোর অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু দেশটির সরকার আমাদের জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তা (রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানো) সম্ভব নয়,’। 

আরও পড়ুন: ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য ট্রেনিং ইউজিসি’র উদ্ভট চিন্তা’

অন্যদিকে জ্বালানি তেল-গ্যাস উৎপাদক দেশ কাতারসহ বিভিন্ন দেশ ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা ২০২৬ সালের আগে চুক্তিবদ্ধ জ্বালানি ছাড়া নতুন চুক্তির ভিত্তিতে তেল-গ্যাস বেচবে না।

রাশিয়ার ইউক্রেন হামলার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল উপাদান তেল-গ্যাসের সরবরাহে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। এতে এশিয়ায় লিকুইডিফাইড ন্যাচারাল গ্যাসের (এলএনজি) বাজারমূল্য দ্বিগুণ হয়ে যায়। ইউরোপের দেশগুলো গ্যাস ও জ্বালানি মজুতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ফলে উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির দেশ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে তৈরি হয় জ্বালানির জোগানে তীব্র সংকট।

গ্যাসের বৈশ্বিক বাজার বিশ্লেষক লুজিয়া কাও ব্লুমাবার্গকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘এশিয়ার উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশের সরকার চলতি বছর থেকেই এলএনজির ওপর নির্ভরতা কমাতে চাইছিল। এলএনজি গ্যাসের অতিরিক্ত দাম ছিল তার প্রধান কারণ।’

‘কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গ্যাসের দাম যে হারে বেড়েছে, তা ধারণারও অতীত। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতো দেশগুলো যে সমস্যায় পড়বে, তা খুবই স্বাভাবিক এবং (এসব দেশের) সরকার যদি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা না নেয়, সেক্ষেত্রে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তীব্র হয়ে উঠতে থাকে এই সংকট।’

ব্লুমবার্গের গবেষণায় উঠে আসে, বাংলাদেশ সাধারণত ৪০ শতাংশ এলএনজি গ্যাস আমদানি করলেও চলতি বছর তা নামিয়ে এনেছে ৩০ শতাংশে।

জ্বালানির ঊর্ধ্বমুখী দামের সঙ্গে খাপ খেতে গিয়ে দেশের রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফের কাছ থেকে সহায়তা চাইছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের বরাত দিয়ে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় এলএনজি গ্যাস রপ্তানি করতে রাষ্ট্রয়ত্ব সংস্থা পেট্রোবাংলাকে ২ হাজার কোটি টাকা (২১ কোটি ১০ লাখ ডলার) দেয়ার পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ