শিক্ষার্থী ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য যুক্তরাজ্যের ভিসায় বড় ধরণের পরিবর্তন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৫:০০ PM , আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৫:০৫ PM

অভিবাসন ক্ষেত্রে বড় ধরণের পরিবর্তন এনেছে যুক্তরাজ্য সরকার। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, কর্মী এবং শিক্ষার্থীদের জন্য আনা এ নীতি কড়াকড়িভাবে আরোপ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। সরকারের নতুন বিধান অনুযায়ী, ইংল্যান্ডে বসবাসরত বিদেশি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে নিয়োগ দিতে হবে, তারপরে কেবল বিদেশ থেকে কর্মী আনার অনুমতি দেওয়া হবে।
বুধবার পার্লামেন্টে উপস্থাপিত নিয়ম অনুযায়ী, ৯ এপ্রিল থেকে বিদেশি কর্মী নিয়োগের আগে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে প্রমাণ করতে হবে যে তারা দেশের মধ্যেই নতুন ভিসা স্পনসরশিপের প্রয়োজন এমন ব্যক্তিদের নিয়োগের চেষ্টা করেছে।
সরকার আশা করছে যে এই পদক্ষেপগুলো বিদেশি নিয়োগের উপর নির্ভরতা কমাবে এবং যুক্তরাজ্যে অভিবাসনের রেকর্ড সংখ্যার হার হ্রাস করবে।
বেতন বৃদ্ধির নতুন নীতিমালা
স্কিলড ওয়ার্কার ভিসার জন্য সর্বনিম্ন বেতনসীমাও বাড়ানো হচ্ছে। এপ্রিলে এটি বছরে ২৩,২০০ ইউরো থেকে বাড়িয়ে ২৫,০০০ ইউরো (অথবা ঘণ্টায় ১২.৮২ইউরো ) করা হবে, যা ন্যূনতম মজুরির সাম্প্রতিক বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
স্বাস্থ্যসেবা মন্ত্রী স্টিফেন কিনক বলেন, আন্তর্জাতিক কেয়ার কর্মীরা আমাদের সামাজিক কেয়ার খাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আমরা তাদের অবদানকে মূল্য দিই, কারণ তারা প্রতিদিন দেশের অসহায় মানুষের সেবা করেন। আমরা যখন বিদেশি কর্মীদের শোষণকারী বেআইনি নিয়োগদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি, তখন আমাদের অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের পুনরায় কেয়ার খাতে ফিরিয়ে আনার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। দেশে অবস্থানরত কেয়ার কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার ফলে আমাদের আন্তর্জাতিক নিয়োগের ওপর নির্ভরতা কমবে এবং সামাজিক কেয়ার খাতে প্রয়োজনীয় পেশাদার কর্মী নিশ্চিত হবে।
শিক্ষার্থী ভিসার পরিবর্তন ও অপব্যবহার রোধ
সংক্ষিপ্ত মেয়াদী শিক্ষার্থী ভিসার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যাতে সন্দেহজনক আবেদনগুলো সহজেই প্রত্যাখ্যান করা যায়। বর্তমানে, ছয় থেকে ১১ মাস পর্যন্ত ইংল্যান্ডে ইংরেজি পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে হোম অফিস জানিয়েছে, কিছু লোক এই ভিসার অপব্যবহার করছে এবং প্রকৃতপক্ষে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে আসছে না বা কোর্স শেষ হওয়ার পর দেশে ফিরে যাচ্ছে না।
অভিবাসন আইন ভঙ্গকারী নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
যেসব কোম্পানি অভিবাসন আইন বারবার লঙ্ঘন করছে, তাদের বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকার কেয়ার খাতে ৪৭০টিরও বেশি স্পনসর লাইসেন্স বাতিল করেছে।
মাইগ্রেশন ও নাগরিকত্ব মন্ত্রী সীমা মালহোত্রা বলেন, যারা যুক্তরাজ্যের প্রাপ্তবয়স্ক কেয়ার খাতে কাজ করতে এসেছেন, তাদেরকে অবশ্যই শোষণমুক্ত পরিবেশে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। আমরা ইতিমধ্যেই নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি, যাতে তারা নিয়ম লঙ্ঘন করতে না পারে এবং আন্তর্জাতিক কর্মীদের উপর অযথা ব্যয় চাপিয়ে না দিতে পারে। এখন আমরা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছি—ইংল্যান্ডে অবস্থানরত বিদেশি কেয়ার কর্মীদের অগ্রাধিকার দিতে নিয়োগকর্তাদের বাধ্য করছি, যাতে নতুন স্পনসরশিপ প্রয়োজন এমন কর্মীরা কাজ পেতে পারে, তারপরে কেবল বিদেশ থেকে কর্মী আনা যেতে পারে।
অভিবাসন কমানোর ফলাফল
এই বছর প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নতুন কঠোর অভিবাসন নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর থেকে যুক্তরাজ্যে কাজ বা পড়াশোনার জন্য বিদেশিদের আবেদন সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ কমেছে। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ লাখ ৪৭ হাজার ভিসা আবেদন জমা পড়েছে, যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ৯ লাখ ৪২ হাজার ৫০০। ৩ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ বা ৪২ শতাংশ হ্রাসের মূল কারণ হলো বিদেশি শিক্ষার্থী ও কেয়ার কর্মীদের আবেদন কমে যাওয়া।
স্বাস্থ্য ও কেয়ার ওয়ার্কার ভিসার জন্য আবেদন সংখ্যা আরও বেশি কমেছে—২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যেখানে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮০০ আবেদন জমা পড়েছিল, ২০২৪ সালের একই সময়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬৩ হাজার ৮০০-এ, যা ৭৯ শতাংশ কম।