বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ভারতের কোন শত্রু নেই : শশী থারুর

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে ভারতে উদ্বেগের কোন কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেসদলীয় সংসদ সদস্য শশী থারুর। তিনি বলেছেন, নয়াদিল্লির জন্য উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। আমি মুহাম্মদ ইউনূসকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি, তিনি অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি।

তিনি আরও বলেছেন, আমার অনুমান, তিনি জামায়াতে ইসলামী বা পাকিস্তানের আইএসআইয়ের তুলনায় ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ। যদি আপনি (বাংলাদেশের) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দিকে তাকান, আমাদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন দেশগুলোর কারও কোনো চিহ্ন ওই অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে দেখতে পাবেন না। তাই ভারতের জন্য উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো বিশেষ কারণ আছে বলে আমার মনে হয় না।

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে বাংলাদেশে গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইস্যুতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন শশী।

এই কংগ্রেস নেতার মতে, ভারতের জন্য সব সময় সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হলো, পাকিস্তান ও চীন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে কি না, সেটা দেখা।

ছাত্র–জনতার গণ–আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় ভারত সরকারের প্রশংসাও করেন শশী। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশে ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। 

শশী থারুরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে পটপরিবর্তন হয়েছে, সেটা ভারতের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না?

উত্তরে শশী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যেই আমাদের মৌলিক স্বার্থ নিহিত। আমরা মূলত বাংলাদেশের জনগণের মঙ্গলের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাষ্ট্রের মঙ্গল আসে দ্বিতীয়তে, কোনো একজন স্বতন্ত্র নেতা তৃতীয় স্থানে।

তিনি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আছি, আমরা ১৯৭১ সালে তাদের সঙ্গে ছিলাম, ভালোমন্দ সব সময়ই আমরা তাদের সঙ্গে আছি, এমনকি যখন সেখানে আমাদের সঙ্গে কম বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার থাকে, তখনো। আমরা সব সময় আমাদের সম্পর্কে ভারসাম্য বজায় রাখি এবং অবশ্যই ভবিষ্যতে সেই সম্পর্কের কোনো অবনতি হওয়া উচিত হবে না।

কংগ্রেসের এই নেতা বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে আন্দোলন চলাকালে সহিংসতার জঘন্য কিছু ঘটনায় পাকিস্তানি আইএসআইয়ের হাত থাকতে পারার সম্ভাবনা সব সময় থেকেই যায়। বাংলাদেশে চীনের উপস্থিতিও অনেক দৃঢ় এবং তারা সেখানে নিজেদের প্রভাব আরও বিস্তার করতে এ পরিস্থিতিকে একটি সুযোগ হিসেবে নিতে পারে। যারা এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন, তাঁরা এ বিষয়গুলো নিয়ে বরং বেশি উদ্বিগ্ন।

শশী থারুর বলেন, তবে অবশ্যই যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে বা ড. ইউনূস প্রাথমিক যে বিবৃতি দিয়েছেন, সেখানে কোথাও অন্তর্নিহিত কোনো কিছু নেই, যা আমাদের উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়ায় নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রশংসা করে শশী থারুর বলেন, যদি আমরা তাকে সাহায্য না করতাম, সেটা ভারতের জন্য অসম্মানের হতো। যদি আমরা আমাদের মিত্রদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করি, তবে কেউ আমাদের মিত্র হতে চাইবে না। শেখ হাসিনা ভারতের মিত্র এবং ভারত তাঁর মিত্র। যখন বন্ধু সংকটে পড়েন, তখন তাঁকে সাহায্য করার আগে, নিরাপত্তা দেওয়ার আগপর্যন্ত আপনি দ্বিতীয় কোনো চিন্তা করতে পারেন না।

হাসিনা কত দিন ভারতে অবস্থান করতে পারেন—এমন প্রশ্নের জবাবে কংগ্রেসদলীয় এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, তিনি (হাসিনা) কত দিন থাকতে চাইবেন, সেটা আমাদের হাতে নেই। আপনি কাউকে বাড়িতে ডেকে এনে তারপর সে কবে যাবে, সেটা জিজ্ঞাসা করতে পারেন না। আমার মতে, আমাদের অপেক্ষা করা এবং কী ঘটে, তিনি কত দিন থাকতে চান, সেটা দেখা উচিত। অন্য কোনো দেশে যেতে হলে বাস্তব কিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে, ভিসা পাওয়ার ব্যাপার আছে, অন্যান্য আরও কিছু বিষয়ও আছে। এই মুহূর্তে তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন। এটা ভেবে আমরা গর্বিত হতে পারি, আমরা এমন একটি সময়ে একজন বন্ধুর পাশে দাঁড়াতে পেরেছি, যখন তিনি ব্যক্তিগতভাবে চরম বিপদের মধ্যে রয়েছেন।

শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। যদিও এ নিয়ে অনেক ভুয়া খবর ছড়িয়েছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

ভারত হিন্দুপ্রধান দেশ এবং প্রতিবেশী দেশে হিন্দুদের ওপর হামলা হওয়ার খবরে নয়াদিল্লির আরও কড়াভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করা উচিত কি না, এমন প্রশ্নে শশী বলেন, সেখানে নিশ্চয়ই কিছু হামলার ঘটনা ঘটেছে, কেউ এটা অস্বীকার করতে পারবে না, কারও অস্বীকার করা উচিতও হবে না। এটা বাস্তব। কিন্তু একই সঙ্গে বাংলাদেশের মুসলমানরা হিন্দুদের বাড়ি ও মন্দির পাহারা দিচ্ছেন, এমন খবরও আসছে। তাই এসব খারাপ খবরের মধ্যে সেখানে কিছু ভালো খবরও আছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর ড. ইউনূস সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানোর এবং জনগণকে সহিংস কর্মকাণ্ড বন্ধ করে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একে ভালো লক্ষণ বলে উল্লেখ করেছেন শশী থারুর।

কংগ্রেসের নেতা বলেন, অতীতে যা–ই হোক, আমার মনে হয় না, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে এমন কোনো কর্তৃপক্ষ আছে, যারা সহিংস পরিস্থিতি অব্যাহত রাখতে চায়।

 


সর্বশেষ সংবাদ