তারকাখ্যাতি ছাড়াই যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া কে এই কিয়ার স্টারমার

  © সংগৃহীত

ব্রিটেনের লেবার পার্টির নেতা কেয়ার স্টারমার বাস্তববাদী এবং ক্যারিশমায় ভরপুর নন। তিনি তারকাগুণেরও অধিকারী নন। এসব ছাড়াই ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য বিশাল জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন তিনি। 

১৯৮০-এর দশকের মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকপাল মার্গারেট থ্যাচার অথবা ‘কুল ব্রিটানিয়া’ টনি ব্লেয়ারের মতো স্টারমার তারকাশক্তির অধিকারী নন। তা সত্ত্বেও তিনি অসাধারণ রাজনৈতিক কৃতিত্ব দেখাচ্ছেন। সংসদে প্রবেশের এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যে তিনি লেবার পার্টিকে অতুলনীয় দক্ষতার সঙ্গে একটি নির্বাচনযোগ্য দলে পরিণত করেছেন। ১৯৩০-এর দশকের পর থেকে তাঁর দল গত নির্বাচনে সবচেয়ে শোচনীয় পরাজয় বরণ করে। এর পাঁচ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তিনি দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসছেন। জনমত জরিপ তাই বলছে। কনজারভেটিভ পার্টির তিনজন প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতাকে পুঁজি করে লেবার পার্টিকে রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন তিনি। 

শনিবার লন্ডনে এক সমাবেশে সাম্প্রতিক সময়ের টোরি প্রধানমন্ত্রীদের সমালোচনা করে স্টারমার বলেন,‌ ‘তারা যা করেছে তা ভুলে যাবেন না। পার্টি-গেট কেলেঙ্কারির কথা ভুলবেন না, কোভিড চুক্তি ভুলে যাবেন না, তাদের মিথ্যাচার ভুলে যাবেন না, তাদের ঘুষের কথা ভুলবেন না।’

বৃহস্পতিবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে তাঁর দল বড় ধরনের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জিতবে বলে জরিপে ইঙ্গিত মিলছে। ৬১ বছর বয়সী সাবেক মানবাধিকার আইনজীবী স্টারমার এমন একজন ব্যক্তিত্ব, যিনি আদালতের কক্ষের তুলনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে কম স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বলে মনে করা হয়। তবে আদালত অঙ্গনে তিনি শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। এবার রাজনীতিতেও পাচ্ছেন বড় সফলতা।

সাবেক লেবার পার্টির উপদেষ্টা এবং স্টারমারের জীবনী লেখক টম ব্যাল্ডউইন বলেছেন, তিনি রাজনীতির পারফরমার নন। অন্য রাজনীতিবিদরা উচ্চাভিলাষী বক্তব্য দিলেও স্টারমার বাস্তববাদী, সমস্যা সমাধানে মনোযোগী এবং একটির ওপর আরেকটি বিল্ডিং ব্লক স্থাপনের বিষয়ে আন্তরিকভাবে কথা বলেন। ব্যাল্ডউইন বলেন, ‘কেউ এটা দেখবে না। এটা বিরক্তিকর। কিন্তু দিন শেষে আপনি দেখতে পাবেন যে, তিনি একটি বাড়ি তৈরি করেছেন।’

লন্ডনের বাইরে সারেতে একটি শ্রমজীবী পরিবারে বেড়ে ওঠা স্টারমারের শৈশব সহজ ছিল না। তাঁর টুলমেকার বাবার সঙ্গে তাঁর দূরবর্তী সম্পর্ক ছিল। তাঁর নার্স মা প্রায়ই অসুস্থতায় ভুগতেন। এর মধ্যেই স্টারমার তাঁর পরিবারের প্রথম কলেজ স্নাতক হন।প্রথমে লিডস ইউনিভার্সিটি এবং পরে অক্সফোর্ডে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন।

তার পরিবার ছিল বামপন্থি। স্টারমারের নামকরণ করা হয়েছিল স্কটিশ ট্রেড ইউনিয়নবাদী এবং লেবার দলের প্রথম নেতা কেয়ার হার্ডির নামে। পরে তিনি কিশোর বয়সে এই ইচ্ছাপোষণ করতেন যে, তাঁকে যেন ডেভ বা পিট নামে ডাকা হয়। 

তরুণ আইনজীবী হিসেবে স্টারমার ফাস্টফুড চেইন ম্যাকডোনাল্ডসের মানহানির মামলায় অভিযুক্ত প্রতিবাদকারীদের প্রতিনিধিত্ব করেন। পরে তিনি ব্রিটেনের প্রধান প্রসিকিউটর হয়ে ওঠেন এবং নাইটহুড লাভ করেন। 

দলীয় প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পরে স্টারমার এর নিয়ন্ত্রণ নেন এবং একে রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। তিনি ব্রিটেনের জ্বালানি শিল্পকে জাতীয়করণের জন্য তাঁর পূর্বসূরি জেরেমি করবিনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। স্টারমার শ্রমজীবী পরিবারের ওপর ট্যাক্স না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি এবং ব্রিটেনের সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বামপন্থি করবিনের সময় লেবার পার্টিকে দেশপ্রেমবিরোধী তকমা দেওয়া হয়। 

তাঁর স্ত্রীভিক্টোরিয়া স্টারমার লন্ডনের একটি ইহুদি পরিবারের সন্তান। তিনি ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। এই দম্পতির দুটি কিশোর সন্তান রয়েছে। 

দলীয় ভোটে করবিনকে পরাজিত করার পর স্টারমার তাঁর প্রতি খুবই নির্মমতা দেখিয়েছেন। এমনকি তিনি করবিনকে তাঁর আসনে লেবার প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেননি। তবে করবিন স্বতন্ত্র হিসেবে লড়েছেন। স্টারমারের সহযোগীরা পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীদের তালিকা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। খুবই বামপন্থি হিসেবে পরিচিতদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। 

স্টারমারের মিত্ররা বলছেন, তিনি তাঁর সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন এবং তাঁর দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। তিনি খুব ভালো বক্তা নন। তবে পার্লামেন্টে প্রথম দিন থেকেই তাঁর বক্তৃতায় উন্নতি হয়েছে। খবর- নিউইয়র্ক টাইমস

 

সর্বশেষ সংবাদ