ফিলিস্তিন কি আসলেই স্বাধীন রাষ্ট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে?

ফিলিস্তিনের আন্দোলন
ফিলিস্তিনের আন্দোলন  © ফাইল ছবি

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউরোপের তিন দেশ- নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড ও স্পেন। দেশ তিনটি আশা করছে, যৌথভাবে এই পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে তারা অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোকে অনুপ্রাণিত করতে পারবে, যাতে তারাও এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। 

যদিও বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি বাস্তবিক অর্থে তেমন কোনো কাজে আসে না। তবুও এই স্বীকৃতি ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার পথ আরও সুগম করবে বলে অভিমত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। 

ইউরোপের বিভিন্ন দেশের এমন স্বীকৃতির ফলে গাজা উপত্যকাজুড়ে ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ও গর্ব প্রকাশ করেছেন। তাঁদের এ আশা আরও ব্যাপকভাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের জন্য এ স্বীকৃতির অর্থ কী—উঠছে সেই প্রশ্ন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতির ফলে বাস্তবে না হলেও আক্ষরিক স্বাধীনতা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনের অবস্থান জোরদার করবে। পাশাপাশি, ঠিক এ মুহূর্তে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে সমঝোতায় বসার জন্য ইসরায়েলের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে এটি।

তারা বলছেন, বাস্তবিক অর্থে, খুব বড় পরিবর্তন আসে না। তবে ফিলিস্তিনকে আরও বেশি স্বীকৃতি দেওয়ার পথে যেকোনো আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে কোনো সমঝোতার টেবিল বা সম্মেলনে বাড়তি কূটনৈতিক প্রভাব রাখার সুযোগ করে দেয়। এমনকি ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মতো দ্বিপক্ষীয় কোনো চুক্তিতে পৌঁছার সক্ষমতা দেয় আন্তর্জাতিক এমন স্বীকৃতি।

নরওয়ে, স্পেন এবং আয়ারল্যান্ডের ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার এই পদক্ষেপ ইসরায়েলকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের সংখ্যা ১৪৬টিতে দাঁড়িয়েছে। আর এসব দেশের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকান এবং এশিয়ান দেশও রয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং পশ্চিম ইউরোপের বেশিরভাগ অংশ, অস্ট্রেলিয়া, জাপান কিংবা দক্ষিণ কোরিয়া এখনও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি।

এর আগে, গত এপ্রিলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণাঙ্গ সদস্য রাষ্ট্র ঘোষণার এক পদক্ষেপে ভেটো দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

 ১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর প্রথম ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদা বা গণঅভ্যুত্থানের সময় ফিলিস্তিনের নেতা ইয়াসির আরাফাত জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন। আলজিয়ার্সে নির্বাসিত ফিলিস্তিনি জাতীয় পরিষদের এক বৈঠকে এই ঘোষণা দেন তিনি। ওই বৈঠকে স্বাধীন ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র পাশাপাশি বিদ্যমান থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে সেই ঘোষণার লক্ষ্য হিসাবে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে মেনে নেন পরিষদের নেতারা।

ফিলিস্তিনি জাতীয় পরিষদের ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যে বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয় আলজেরিয়া। এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরব বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ, ভারত, তুরস্ক, আফ্রিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ ও বেশ কয়েকটি মধ্য এবং পূর্ব ইউরোপীয় দেশসহ আরও কয়েক ডজন দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়।

এরপর ২০১০ সালের শেষের এবং ২০১১ সালের শুরুর দিকে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া ঘিরে শুরু হওয়া সংকটের সময় আরও অনেক দেশ একের পর এক ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং চিলিসহ দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্রের দাবির প্রতি সমর্থনের আহ্বানে সাড়া দেয়। সে সময় অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটাতে ইসরায়েলের নেওয়া পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় এসব দেশের স্বীকৃতি আসে।


সর্বশেষ সংবাদ