ভারতীয় মশলায় ক্ষতিকর জীবাণু, ক্রয়-বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ০৩:১৫ PM , আপডেট: ১৫ মে ২০২৪, ০৩:১৯ PM
ভারতের জনপ্রিয় মসলা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এমডিএইচের পণ্যে দূষণ ধরা পড়ার পর নজরদারির মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকার অভিযোগে ২০২১ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি করা ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ মসলা পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থার উপাত্ত বিশ্লেষণ এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গত মাসে সিঙ্গাপুর এবং হংকয়ের সরকারি প্রশাসন নিজেদের অভ্যন্তরীণ বাজারে এমডিএইচ এবং এভারেস্টের তৈরি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ সম্পর্কিত এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রশাসন বলেছে, এ দুই কোম্পানির পণ্যে ‘এথিলিন অক্সাইড’ নামের একটি ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে। মানবদেহে দীর্ঘদিন ধরে এই উপাদানটি প্রবেশ করলে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার গুরুতর ঝুঁকি থাকে।
তবে ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মসলা পণ্য নিরাপদ দাবি করে বলে, মসলা সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত করার কোনো পর্যায়ে তাদের মসলায় ইথিনাল অক্সাইড ব্যবহার করা হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ বিষয়ক সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফুডস অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) পরীক্ষাতেও এমডিএইচ এবং এভারেস্টের পণ্যে এথিলিন অক্সাইডের অতিমাত্রায় উপস্থিতি দেখা গেছে। এফডিএ’র একজন মুখপাত্র এ ইস্যুতে বলেন, ভারতীয় মশলায় ভেজালের অভিযোগ নতুন নয়। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যত মশলা রপ্তানি করেছিল ভারত, সেসবের মধ্যে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্যাকেটের মশলায় ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছিল।
ভারতের অভ্যন্তরীণ মশলার বাজারের আকার ১ হাজার কোটি ডলার। এছাড়া বাইরের বিভিন্ন দেশে মশলা রপ্তানি করে প্রতি বছর ৪০০ কোটি ডলার আয় করে দেশটি। বৈশ্বিক বাজারে ভারতীয় যেসব মশলার চাহিদা সবচেয়ে বেশি, সেগুলো হলো— মরিচ-ধনে-হলুদের গুঁড়া, এলাচ এবং মিক্সড মশলা। এসবের বাইরে হিং, জাফরান, জায়ফল, মৌরি, লবঙ্গ এবং দারুচিনিরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বিশ্বজুড়ে।
ভারতের ১০০ বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠান এমডিএইচের পণ্যের ওপর সর্বশেষ নজরদারির আগেও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কারণ, তখন তাদের মসলায় সালমোনেলা নামক জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এই জীবাণু গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল রোগের জন্য দায়ী।
মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) তথ্যমতে, সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া থাকার কারণে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৩ মে পর্যন্ত এমডিএইচের ৬৫টি চালানের মধ্যে ১৩টি বা ২০ শতাংশ চালান যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
প্রতিটি চালানে কী পরিমাণ মসলায় দূষণ ছিল, সে ব্যাপারে এফডিএ নির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি। তবে পাঁচমিশালি মসলা, চাটনি, মেথিসহ কয়েক ধরনের পণ্যের ১৩টি চালান যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে এফডিএ জানিয়েছে।
একই অভিযোগ করেছে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ)। ইইউ’র নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, ভারত থেকে আমদানি করা মরিচের গুঁড়া এবং গোলমরিচে ক্যানসার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক উপাদান শনাক্ত হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ, মালদ্বীপ এবং অস্ট্রেলিয়ার খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাও আমদানিকৃত ভারতীয় মশলা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভারতের মশলার ওপর ভেজালের অভিযোগ আগে থেকেই। এর আগে ২০১৪ সালে কলকাতার জৈবরসায়নবিদ এবং বিশেষজ্ঞ ইপ্সিতা মজুমদার গবেষণাগারে পরীক্ষা করে পশ্চিমবঙ্গে জনপ্রিয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মরিচ, হলুদ, ধনে, গরম মশলার গুঁড়া এবং কারি পাওডারে সীসা শনাক্ত করেছিলেন। পরে তিনি বলেছিলেন, মশলার গুঁড়ার ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে যে কৃত্রিম রঙ ব্যবহার করছে; সেসব রঙই সীসার উৎস।