যেসব কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ওয়াগনারের বিদ্রোহ

ওয়াগনার গ্রুপ
ওয়াগনার গ্রুপ  © সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য ক্ষমতাসীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে ইউক্রেন যুদ্ধে রুশবাহিনীর অন্যতম সহযোগী ও বেসরকারি সামরিক বাহিনী পিএমসি ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন (৬২)। প্রেসিডেন্ট পুতিন এ বিদ্রোহ শক্তহাতে দমনের আভাস দিলেও ওয়াগনারের কারণে দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বড় হুমকির মুখে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে পুতিনের অন্যতম আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত এ বেসরকারি সামরিক সংস্থাটির হঠাৎ বিরুদ্ধচারণের প্রধান কারণ ইউক্রেন যুদ্ধে ওয়াগনার সৈন্যদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। বিশেষ করে পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর বাখমুত দখলের লড়াইয়ে ইউক্রেনের সেনাদের হামলায় হতাহত হয়েছে অনেক ওয়াগনার যোদ্ধা।

বাখমুতসহ কয়েকটি এলাকায় ওয়াগনারের ৯ হাজার যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এছাড়া, আহত হয়েছে বহু যোদ্ধা। এদের অধিকাংশকেই রাশিয়ার বিভিন্ন কারাগার থেকে বের করে প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধে পাঠানো হয়। কিন্তু মস্কো ওয়াগনার যোদ্ধাদেরকে প্রয়োজনীয় সমরাস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ না করায় তারা প্রাণ দিয়েছে সম্মুখ যুদ্ধে। 

যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, ইউক্রেন যুদ্ধে ওয়াগনার গ্রুপের ৩০ হাজার যোদ্ধা হতাহত হয়েছে যা তাদের লোকবলের প্রায় ৬৫ শতাংশ। এদের মধ্যে যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে নিহত হয়েছে ৯ হাজার। ফলে ওয়াগনারের লোকবল সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। একই সাথে দেখা দিয়েছে সমরাস্ত্র ও গোলাবারুদসহ প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জামের সংকট। যোদ্ধার এই ঘাটতি পূরণে সম্প্রতি রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন শহরে সেনা নিয়োগ কেন্দ্র খুলেছে ওয়াগনার।

পশ্চিমা গোয়েন্দা সূত্রগুলোর মতে, বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধের ময়দানে ওয়াগনার গ্রুপের মোট যোদ্ধার ৯০ শতাংশই সংগ্রহ করা হয়েছে রাশিয়ার বিভিন্ন কারাগার থেকে। তাদেরকে দণ্ড থেকে মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি অথবা বেতনের বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরুর সময় থেকেই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। কিন্তু এসব যোদ্ধাদেরকে প্রয়োজনীয় সমরাস্ত্র, গোলাবারুদ ও আনুষঙ্গিক উপকরণ সরবরাহ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে আসছেন ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন। ফলে মস্কোর সাথে ওয়াগনারের সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে।

বাখমুত এলাকায় ব্যপক ক্ষয়ক্ষতির পর গ্রুপটির প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিনের দাবি করেছিলেন, নথিতে সইয়ের পরও প্রয়োজনীয় গোলাবারুদ দিচ্ছে না মস্কো। এতে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডোনেৎস্কের গুরুত্বপূর্ণ শহর বাখমুতে ঝুঁকিতে পড়েছে তার বাহিনী। একই সঙ্গে দ্রুত অস্ত্র দেওয়া না হলে যুদ্ধের সামনের সারি ভেঙে পড়ার আশঙ্কার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। ওয়াগনার যোদ্ধারা ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই করলেও রুশ সেনারা কেবল মুখ বাঁচানোর লড়াই করছে বলেও দাবি করেন প্রিগোঝিন।

প্রিগোঝিন অভিযোগ করে বলেন, রুশ কর্তৃপক্ষ তার যোদ্ধাদের বখাটে হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এ কারণেই গোলাবারুদ দিচ্ছে না। শুধু গোলাবারুদই নয়, অস্ত্রও দিচ্ছে না। তাছাড়া কারাবন্দীদের মুক্ত করে লোকবলের ঘাটতিও পূরণ করছে না। তার সেনা ছাড়া রাশিয়ার ফ্রন্টলাইন ভেঙে পড়বে বলেও দাবি করেন তিনি।

এর আগে প্রিগোঝিন অভিযোগ করেছিলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং চিফ অব দ্য জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ তার সৈন্যদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। এছাড়া আহত সেনাদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব ওয়াগনার বাহিনীর শক্তিকে কমিয়ে দিয়েছে অনেকটাই। বাখমুতে মারাত্মক ক্ষতির কথা স্বীকার করে এক পর্যায়ে ওয়াগনার যোদ্ধাদের লাশের সারির ভয়ঙ্কর ছবিও পোস্ট করেছিলেন প্রিগোঝিন।

ওইসময়ে এক পৃথক ভিডিও বার্তায় ওয়াগানার সেনাদের জন্য বিভিন্ন দাবির কথা জানিয়েছিলেন ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন। গোলাবারুদ না দেওয়াকে ‘সাধারণ আমলাতন্ত্র বা বিশ্বাসঘাতকতা’ বলেও অভিহিত করেছিলেন তিনি। 

গোলাবারুদ সরবরাহ না করার অভিযোগ উত্থাপনের পর ওয়াগনার গ্রুপের প্রতিনিধিকে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল মস্কো। এমনকি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা কয়েক সরাসরি গ্রুপটির নিয়ন্ত্রণও নেয়ার চেষ্টা চালান।

সর্বশেষ ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন রুশবাহিনীর বিরুদ্ধে তার সৈন্যদের ওপর হামলার অভিযোগ তোলেন। এক অডিওবার্তায় নিজের মুখপাত্রের মাধ্যমে ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন ইউক্রেনে অভিযানরত রুশবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণায় বলেন, ‘তারা (রুশবাহিনী) আমাদের বিভিন্ন সেনা শিবিরের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় আমাদের অনেক সহযোদ্ধা সেনা সদস্যের মৃত্যুও হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এ কারণে পিএমসি ওয়াগনারের সর্বোচ্চ নির্বাহী ফোরাম কমান্ডার্স কাউন্সিল এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সামরিক নেতৃত্বের হাত থেকে রাশিয়াকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।’

ওয়াগনারপ্রধান বলেন, ‘আমরা মস্কো অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের বাহিনীর ২৫ হাজার সদস্য এই অভিযানে যোগ দিয়েছে। (এই যাত্রাপথে) কেউ যদি আমাদের প্রতিরোধ করতে চায়, সে ক্ষেত্রে আমরা সেই প্রতিরোধকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করব এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা ধ্বংস করব।’

অডিও বক্তব্যে বেশ কয়েকবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং দেশটির সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমোভের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন পিএমসি ওয়াগনারের শীর্ষ কমান্ডার। তাদের ‘নোংরা বিশ্বাসঘাতক’ উল্লেখ করে প্রিগোঝিন বলেন, ‘আমরা তাদের নোংরামোর শেষ দেখতে চাই। আমরা কোনো সেনা অভ্যুত্থান করছি না, বরং ন্যায়বিচারের জন্য (মস্কো অভিমুখে) এগিয়ে চলছি।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence