ব্যাগে মৃত সন্তানের দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন অভাবী বাবা

অসীম ও ব্যাগে নিয়ে আসা সন্তানের লাশ
অসীম ও ব্যাগে নিয়ে আসা সন্তানের লাশ  © সংগৃহীত

সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়েই সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছেন। তাই সন্তানের মৃত্যুর পরে আর শববাহী গাড়ি ভাড়া করতে পারেননি। সন্তানের দেহ ব্যাগে নিয়ে বাসে করে শিলিগুড়ি থেকে কালিয়াগঞ্জে ফিরলেন। যা নিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলায় হইচই পড়ে গেছে। কালিয়াগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে নামার পরে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করেন স্থানীয় এক বিজেপি নেতা।

কালিয়াগঞ্জের মুস্তাফানগর এলাকার ডাঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা অসীম দেবশর্মা পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক। ৫ মাস আগে তাঁর যমজ সন্তান হয়। সম্প্রতি ২টি শিশুই অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে কালিয়াগঞ্জ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু সেখানেও অবস্থার অবনতি হতে থাকায় পাঠানো হয় রায়গঞ্জের সরকারি মেডিক্যাল কলেজে। সেখান থেকে স্থানান্তরিত করে পাঠানো হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। একটি শিশু সুস্থ হয়ে উঠলেও অপর জনের মৃত্যু হয় শনিবার রাতে। এর পরে টাকার অভাবে আর বাড়ি ফেরার জন্য কোনও গাড়ি ভাড়া করতে পারেননি অসীম। শিলিগুড়ি থেকে বাসে প্রথমে রায়গঞ্জ এবং সেখান থেকে বাস বদল করে কালিয়াগঞ্জে আসেন। তবে সুস্থ শিশুটিকে গত বৃহস্পতিবারই অসীমের স্ত্রী বাড়ি নিয়ে এসেছেন।

কালিয়াগঞ্জের এই ঘটনা অনেককেই মনে করিয়ে দিচ্ছে গত জানুয়ারি মাসের কথা। জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মায়ের মৃত্যুর পরে টাকার অভাবে গাড়ি ভাড়া করতে না পারায় দেহ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন যুবক রামপ্রসাদ দেওয়ান। যদিও পরে তাঁকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা হয়নি অসীমের। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, সেখানে থাকা, খাওয়া চিকিৎসার জন্য খরচের পর তাঁর কাছে আর টাকা ছিল না। ফলে অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা কালিয়াগঞ্জ যাওয়ার জন্য আট হাজার টাকা চাইলে তিনি বাসে করে চলে যাওয়ার কথা ভাবেন। সন্তানের দেহ ভরে নেন ব্যাগে। 

তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমার যেটুকু টাকা ছিল সব শেষ হয়ে গিয়েছে। দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে ৮ হাজার টাকা ভাড়া চায়। এমনিতেই চিকিৎসা করাতে গিয়ে ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। তাই বাসে করেই ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছি।’’

সূত্র: আনন্দবাজার