আপোষহীননেত্রী খালেদা জিয়া: নারী জাগরণের পথিকৃৎ
- মো. ফিরোজ আলম
- প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৫, ০৪:১০ AM , আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৫, ০৪:১০ AM

বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর অর্ধেকেরও বেশি নারী। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে অবহেলিত কিংবা উপেক্ষা করে দেশকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। জাতীয় বেইমান হিসেবে স্বীকৃত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা একজন নারী হয়েও বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রহসনের বিচারের কারাগারে বন্দী রেখেছেন। গুম, খুন ও চরম দুঃশাসনের মাধ্যমে দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছেন। লুটপাট করে দেশকে করেছেন ঋণগ্রস্ত, সর্বশেষ ছাত্রজনতার আন্দোলনে গণহত্যা করে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন।
২৫শে মে, ১৯৮১ সালে একদল বিপথগামী সেনাদের হাতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হলে বাংলাদেশের আকাশে নেমে আসে ঘনঘটা অন্ধকার। বাংলাদেশী জনগণ স্বৈরশাসনের পতিত হলে সবাই যখন দিশেহারা হয়ে যান, তখন বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য আলোর দিশারী হিসেবে একজন গৃহবধূ রাজপথের হাল ধরেন। তিনি হলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, জেড ফোর্সের অধিনায়ক, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, “বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”
স্বৈরাচারের কবল থেকে রাষ্ট্রে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে লড়াইয়ে নেমে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন তিনি। স্বৈরাচার প্রদত্ত কোনো লোভের জন্য বিপরীতে নির্মম নির্যাতনের সহ্য করে তিনি দীর্ঘদিন রাজপথে লড়াই সংগ্রাম করেছেন। লোভের বশবর্তী হয়ে তিনি কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ না করায় জনগণ খালেদা জিয়াকে উপাধি দেয় আপোষহীন নেত্রী হিসেবে।
একই সময়ে খালেদা জিয়ার সহযোগী হিসেবে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে রাজপথে থাকলেও অপ্রকাশ্যে ছিলেন স্বৈরাচার এরশাদের সহযোগী। বিনিময়ে পেতেন অঢেল টাকা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। শহীদ জিয়াউর রহমান শেখ হাসিনাকে দেশে প্রবেশ এবং রাজনীতিতে সুযোগ দিলেও তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করতেন জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী খালেদা জিয়ার সাথে। কখনো কখনো এরশাদের থেকে টাকা নিতে এরশাদকে চাপে ফেলতে শুধুমাত্র সাধারণ মানুষ নয় দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা করতেও কুণ্ঠাবোধ করতেন না।
শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান রেন্টু “আমার ফাঁসি চাই” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এরশাদের থেকে অবৈধ অর্থনৈতিক সুবিধা নিতে তিনি নিজে হুকুম দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিছিলে গুলি দলীয় ছাত্রনেতা হত্যা করেছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে চট্টগ্রামের লালদীঘির ময়দানে ঘোষণা দিয়েছিলেন যারা এরশাদের সাথে যারা রাজপথে আপোষ করবে তারা জাতীয় বেঈমান।
তিনি পরবর্তীতে এরশাদের সাথে আপোষ করে জাতীয় বেইমান খ্যাত হন। এই জাতীয় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা একজন নারী হয়েও বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রহসনের বিচারের কারাগারে বন্দী রেখেছেন। গুম, খুন ও চরম দুঃশাসনের মাধ্যমে দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছেন। লুটপাট করে দেশকে করেছেন ঋণগ্রস্ত, সর্বশেষ ছাত্রজনতার আন্দোলনে গণহত্যা করে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন।
১৯৮১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া আপোষহীনভাবে রাজপথে লড়াই করে স্বৈরাচার এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। বেগম খালেদা জিয়া তখন দেখতে পান নারীদের জাগ্রত করতে সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষা।
পবিত্র কোরআনে আছে, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো ও উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও।’ (সূরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৯)।
বেগম খালেদা জিয়া বিনা বেতনে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেন। পরবর্তীতে দেখতে পেলেন নারীদের প্রাথমিক শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেলেও মাধ্যমিকে গিয়ে ঝড়ে যায় তখন তিনি নারীদের জন্য দশম-দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিনা বেতনে লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি করেন। গ্রামীণ দারিদ্র্য নারীদের শিক্ষায় উৎসাহ করে নারী শিক্ষার হার আরও বৃদ্ধি করতে এবং নারীদের জন্য পড়াশুনা চালিয়ে যেতে খাতা কলম কিনতে যাতে সুবিধা হয় সেজন্য তিনি চালু করেন শিক্ষা উপবৃত্তি।
নারীদের শিক্ষা প্রসারের জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান করেন চট্টগ্রামে প্রথম নারী বিশ্ববিদ্যালয় -
১. চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন।
২. যুব, সমাজকল্যাণ ও মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
৩. স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় ৩ জন নারীর প্রতিনিধিত্ব করতে পারলেও তা নির্ধারণ করতেন প্রশাসন। খালেদা জিয়া জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নারীদের নির্বাচন নারীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টি করেন।
৪. অবহেলিত নারী সমাজকে এগিয়ে নিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ক্ষেত্রে নারী কোটা আরোপ করেন।
পবিত্র কোরআন শরীফ বলা হয়েছে, ‘পুরুষরা যা উপার্জন করে তা তাদের প্রাপ্য অংশ, আর নারীরা যা উপার্জন করে তা তাদের প্রাপ্য অংশ।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩২)।
৫. নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী খালেদা জিয়া তৃণমূল পর্যায়ের বস্তি এলাকা,দুস্থ নারী এবং গ্রামীণ মেয়েদের ক্ষেত্রে নিজস্ব তহবিল গঠনের মাধ্যমে স্বল্পকালীন ঋণ পদ্ধতি চালু করেন।
৬. আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় মেয়েদের শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য জিয়াউর রহমানের গৃহীত পদক্ষেপ পুলিশ বিভাগে মেয়েদের অন্তভুর্ক্তি পুনরায় চালু করেন।
৭. নারী ও শিশু নির্যাতনের বিচারের ক্ষেত্রে স্পেশাল ট্রাইবুনাল গঠন এবং দ্রুততম বিচারের জন্য তদন্তের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া। এছাড়া অপরাধ ভেদে ৭ বছর কিংবা ১৪ বছর অথবা সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বিল পাশ করেন আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
লেখক: সাবেক গণসংযোগ সম্পাদক, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ