গ্রেড নিয়ে এ কেমন বৈষম্য প্রাথমিকে, ১০ম গ্রেডই একমাত্র সমাধান

প্রাথমিকে ১০ম গ্রেডই একমাত্র সমাধান
প্রাথমিকে ১০ম গ্রেডই একমাত্র সমাধান  © টিডিসি ফটো

গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড থেকে ১২তম গ্রেডে উন্নয়ন করে। ১৩তম গ্রেডে বেসিক বেতন ছিল ১১০০০ টাকা এবং ১২তম গ্রেডে বেতন হবে ১১৩০০ টাকা। তার মানে মাসিক বেতন বাড়লো ৩০০ টাকা । যা শিক্ষকদের সাথে এক ধরনের মশকরা ও প্রহসন। ১২তম গ্রেড মানি না এবং সকল শিক্ষক এই বৈষম্যমূলক গ্রেড প্রত্যাখান করেছে।

প্রাথমিক শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড করা হোক। মুখে মুখে প্রাইমারি শিক্ষকদের সম্মান দেওয়া হয়; তবে বাস্তবে তার উলটো। কারণ এখনও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী রয়ে গেছে। বর্তমানে প্রাইমারি শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে বেতন দেওয়া হচ্ছে, যার সর্বসাকুল্যে বেতন হচ্ছে ১৭ হাজার ৬৫০ টাকা।যা শিক্ষকদের জন্য সংসার চালানো কষ্টকর ও দুঃসাধ্য হয়ে যাচ্ছে।

অথচ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা হয়েছে এবং দেশ উন্নয়নশীল হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের উন্নয়ন হয় নাই। সার্কভুক্ত দেশের মধ্য সবচেয়ে বাংলাদেশের শিক্ষকদের বেতন কম অথচ বাংলাদেশ বিভিন্ন সূচকে তাদের চেয়ে এগিয়ে।

বর্তমানে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা স্নাতক বা সমমান করা হয়েছে। কিন্তু ২য় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হয় নাই এখনো। কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন একই যোগ্যতা নিয়ে পিটিআই- সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের

বেতন গ্রেড দশম (দ্বিতীয় শ্রেণি) অপরদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৩তম (তৃতীয় শ্রেণি)। আরও অবাক করার বিষয় যে একই যোগ্যতা (স্নাতক বা সমমান) নিয়ে অন্য ডিপার্টমেন্টে ১০ম গ্রেড পাচ্ছে। যেমন মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক, সহকারী গ্রন্থাগারিক/ক্যাটালগার, পুলিশের এসআই, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ইত্যাদি।

এইচএসসি ও ডিপ্লোমা ইন নার্সিং যোগ্যতায় দশম গ্রেড পাচ্ছেন সিনিয়র স্টাফ নার্স/স্টাফ নার্সরা। এ ছাড়াও এসএসসি ও কৃষি ডিপ্লোমা যোগ্যতায় দশম গ্রেড পাচ্ছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা/উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তা/উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তারা। অথচ প্রাথমিকের শিক্ষকদের দেখার কেউ নাই। এই গ্রেড বৈষম্যের কারণেই মেধাবীরা প্রাথমিকের শিক্ষক হতে চান না এবং প্রাথমিকে জয়েন করলেও বেশিদিন থাকে না কারণ অন্য কোথাও জব হলে তারা চলে যায়।

যদি প্রাথমিক শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড (দ্বিতীয় শ্রেণি) দেওয়া হয় মেধাবীরা প্রাথমিকের শিক্ষক হতে সংকোচ করবেন না। বিসিএসের পরই তাদের ২য় চয়েজ থাকবে প্রাথমিকের শিক্ষক হওয়া। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে এই হোক অঙ্গীকার প্রাথমিক শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দরকার।

কথায় আছে ‘কিছু পেতে হলে, কিছু দিতে হয়’। মেধাবীদের প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে পেতে হলে ১০ম গ্রেডের বিকল্প নাই। আমরা আশাবাদী প্রাথমিকে গ্রেড বৈষম্য দূর হবে এবং আলো আসবেই। জয় হোক মানবতার, জয় হোক মানুষ গড়ার কারিগরদের।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, খয়েরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অষ্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ


সর্বশেষ সংবাদ