আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কীভাবে বিশ্বমানে রূপান্তরিত করা যাবে?
- ড. মাঈন উদ্দিন খন্দকার
- প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ PM , আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ PM
পূর্বের দুটো আলোচনায় একজন উপাচার্যের বৈশিষ্ট্য এবং সিলেকশন পদ্ধতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছি। এখানে, কীভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রকৃত বিশ্ববিদ্যালয় অথবা বিশ্ব মানে উন্নীত করা যাবে সেটি নিম্নে আলোচনা করা হল।
অর্থাৎ একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের টোটাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং করণীয় সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হল। যদিও একজন বিশ্বমানের উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণ থেকে শুরু করে সকল কর্ম সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তথাপিও উনার একার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা দুরূহ কাজ। সেজন্যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মুথ ফাংশনালিটির জন্যে উপাচার্যের একটি সঠিক টিম প্রয়োজন।
অর্থাৎ, উপাচার্য টিমে কমপক্ষে চারজন উপ-উপাচার্য থাকতে হবে। এদের মধ্যে একজন উপ-উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক একাডেমিক কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকবেন। আরেকজন উপ-উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, ইনোভেশন, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক দেখভাল করবেন। তৃতীয় উপ-উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক স্ট্রাকচারাল উন্নয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। চতুর্থ উপ-উপাচার্য স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স নিয়ে কাজ করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয় সকল পরিকল্পনা (মিশন এবং ভিশন) প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন এই পুরো টিমের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারণ করবেন। উপাচার্য টিম গঠিত হওয়ার পর, ওনাদের প্রথম কাজ হবে বিভিন্ন অনুষদের ডিন এবং ডেপুটি ডিন নিয়োগ দেয়া।
উল্লেখ্য, সকল ডিন এবং ডেপুটি ডিন, ফ্যাকাল্টির বিভিন্ন শিক্ষকদের মধ্য থেকে বাছাই করবেন। এক্ষেত্রে, শিক্ষকদের বিভিন্ন ধরনের কর্মদক্ষতা বিবেচনায় নিয়ে তাদেরকে ডেপুটি ডিন (একাডেমিক), ডেপুটি ডিন (রিসার্চ এবং ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স), ডেপুটি ডিন (ডেভেলপমেন্ট) এবং ডেপুটি ডিন (স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স, পাবলিসিটি, ইত্যাদি) হিসেবে নিয়োগ দিবেন। যেহেতু কোন নির্বাচনের মাধ্যমে ডিন নিয়োগ হবে না, সেজন্যে শিক্ষকদের অহেতুক রাজনীতি করার অথবা রাজনৈতিক দলের লেজুরবৃত্তি করার কোন প্রয়োজন থাকবে না। পরবর্তীতে, ডিন মহোদয় প্রতিটি বিভাগে এক্সিস্টিং শিক্ষকদের কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে একজন শিক্ষককে দুই বছরের জন্যে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিবেন। এক্ষেত্রেও, বর্তমানে প্রচলিত বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার রোটেশন সিস্টেম চালু থাকবে না। বিভাগীয় প্রধান জুনিয়র এবং সিনিয়র যে কোন শিক্ষকই হতে পারবেন যদি তিনি কাজে-কর্মে ডাইনামিক হয়ে থাকেন এবং বিভাগের সামগ্রিক উন্নয়নে যথেষ্ট পরিমাণ সময় দিতে পারেন।
এভাবে, পুরো অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সেটআপ করার পরে, প্রথম কাজ হবে সকল শিক্ষকের জন্য (ইনক্লুডিং উপাচার্য টিম) কে. পি. আই. (কি পারফরম্যান্স ইনডেক্স) ইন্ট্রোডিউস্ড করা। কেপিআই'র টোটাল মার্কস হবে ১০০। এর মধ্যে ৪০% হবে টিচিং ইভালুয়েশনের মার্কস, ৪০% হবে রিসার্চ কন্ট্রিবিউশনের মার্কস, রিমেইনিং ২০% সোশ্যাল কন্ট্রিবিউশন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ধারিত থাকবে। এই ধরনের কে পি আই উপাচার্য মহোদয়ের জন্যেও থাকবে।
তবে, উপাচার্য মহোদয়ের কেপিআই হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং, সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, ইন্ডাস্ট্রি, ইত্যাদি জায়গা থেকে ফান্ড আনার দক্ষতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান সামগ্রিক উন্নয়ন, ছাত্রছাত্রীদের জীবন মানের উন্নয়ন, ইত্যাদি। এই সকল কে পি আই এচিভমেন্টের রেকর্ড প্রতিবছর ডিসেম্বরে অনলাইন সিস্টেমে সকল ফ্যাকাল্টি মেম্বার সাবমিট করবেন এবং জানুয়ারির মধ্যে এগুলো অটোমেটিক ইভ্যালুয়েশন করা হবে। যেমন, একজন শিক্ষক যদি Scopus indexed জার্নালে ১-২টি পেপার পাবলিশ করতে পারেন, তাহলে তিনি রিসার্চ কে পি আই নির্ধারিত ৪০% মার্কস পাবেন। সিমিলারলি, তিনি যদি student evaluation এর সাপেক্ষে ৩.৫/৫.০ স্কোর পেয়ে থাকেন তাহলে টিচিং কেপিআই এর পূর্ণ ৪০% মার্কস পাবেন। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট সুপারভিশন এর জন্য ৫-১০% মার্কস থাকতে পারে, ইত্যাদি। এভাবে একজন শিক্ষক ৮০/১০০ স্কোর করতে পারলে ওনার ইনক্রিমেন্ট, সিস্টেমেটিক প্রমোশন, ইত্যাদি সবকিছুই ঠিক থাকবে। অন্যথায় এ সকল সুবিধা বঞ্চিত হবেন।
উপরে উল্লিখিত পদ্ধতিগুলো যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারলে, আশা করা যায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বমানে রূপান্তরিত হবে। উপরে বর্ণিত পদ্ধতিগুলো একটি ধারণা মাত্র। প্রয়োজনে যেকোনো সংযোজন, বিয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটের আলোকে নির্ধারণ করা যাবে।
লেখক: অধ্যাপক, অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স এবং রেডিয়েশন টেকনোলজিস
সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া