এমন চিপা বুদ্ধি দিয়ে ভাবছে, সৃষ্টিকর্তাকেও ঠকানো যায়

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন  © ফাইল ছবি

‘আবেদ আলী সবার নাম বলে দিয়েছে’, এ কথা শোনার পর কারো কারো মাথায় সাথে সাথে নতুন আইডিয়া চলে এসেছে। তাদের ধারনা যে, সে ৪০-৫০ জনের নাম বলবে, আর বাকি শত শত জনকে থ্রেট দেবে এই বলে যে, ১০ লাখ টাকা না দিলে নাম বলে দেবে। ব্যস, মুফতে বিশাল পরিমান টাকা কামানোর তরিকা আবিষ্কার। 

এক আইডিয়া দিয়ে শত কোটি টাকা উপার্জন। এ রকম আইডিয়া পশ্চিমা দেশের কোনো মানুষের আসবে না। এসব চিপা চাপার আইডিয়া আসার জন্য বাংলাদেশ একটা উর্বর দেশ। আমি দেখেছি যখনই কোন কাজ করতে গিয়ে বাধা এসেছে তখনই মাথায় অল্টারনেটিভ আইডিয়া চলে এসেছে। এক রাস্তা বন্ধ হলে বিকল্প রাস্তা পাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের বিকল্প নেই। 

আমি নিজেও এর বাহিরে নই। কারণ আমিওতো এ সংস্কৃতিতেই বড় হয়েছি। ৩০ বছর ধরে আমি এক পশ্চিমা নারীর সাথে ঘর করছি। আমি দেখেছি, আমার স্ত্রীর থেকে আমার মাথায় চিপা যেমন আসে, তেমনি অন্যের চিপা বুদ্ধি ধরতেও পারি বেশি। আমার স্ত্রীকে এইসব ক্ষেত্রে অনেক সময় বোকা মনে হয়। ইন ফ্যাক্ট, আমার গাড়ির ড্রাইভার থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালা, ফেরিওয়ালা পর্যন্ত ওকে ঠকায়। ঠেকে গেলে আমার স্ত্রীর মাথায় কোন বুদ্ধি আসলেও চিপা বুদ্ধি কখনো আসে না। 

আরো পড়ুন: চক্রের কাছ থেকে দুই বিসিএস পরীক্ষার শত শত প্রবেশপত্রের ফটোকপি উদ্ধার 

দিন যতই যাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের চিপা বুদ্ধি ততই বাড়ছে। এ চিপা বুদ্ধি দিয়ে অনেকেই দ্রুত বড়লোক হয়ে যাচ্ছে। চিপা বুদ্ধি মানুষকে ঠকাচ্ছে। এ চিপা বুদ্ধি দিয়ে ভাবছে সৃষ্টিকর্তাকেও ঠকানো যায়। মনে করে অসৎ পথে রোজগার করে সেখান থেকে ধর্মের পথে কিছু দান করে দিলেই উপার্জন সাদা হয়ে যাবে। ঠিক যেমন আমাদের সরকার কালো টাকা সাদা করার চিপা বুদ্ধি বের করে। 

মসজিদ মন্দিরে যদি নোটিশ টাঙিয়ে দেয় যে কারো দানের অর্থ হালাল-কর্মের মাধ্যমে অর্জিত না হয়ে থাকলে তা গ্রহণ করা হবে না। তাহলেও কিন্তু দেশের দুর্নীতি অনেক কমে যেত। Unconditional দান গ্রহণ করা আর মাফ পাওয়ার ব্যবস্থা আছে বলেই দুর্নীতিবাজরা মনে করে অসৎ পথে আয়ের একটা অংশ দান করে অসৎভাবে অর্জিত অর্থ হালাল বানিয়ে ফেলবে। ওরা কি মনে করে, সৃষ্টিকর্তা বুঝে না? খাবার হারাম হলে টাকা হারাম হবে না কেন?

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

(ফেসবুক থেকে নেওয়া)


সর্বশেষ সংবাদ