ইংরেজি না জানা শিক্ষকরা আমাদের ইংরেজি পড়িয়েছেন, এখন আইসিটি...

ড. কামরুল হাসান মামুন
ড. কামরুল হাসান মামুন  © ফাইল ছবি

বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা যেদিন থেকে অ আ ই ঈ শিখে, সেদিন থেকে আমরাও a b c d শিখি। ক্লাস ওয়ান থেকে অন্তত ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত আমরা বাংলার পাশাপাশি টানা ইংরেজি পড়ি, কিন্তু আমাদের ইংরেজি শেখা হয় না।

এখন আবার ক্লাস সিক্স থেকে তথ্য প্রযুক্তি পড়া শুরু করে টানা ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত তথ্য প্রযুক্তি পড়ানো হয়। তবুও কি তথ্য প্রযুক্তি শিখছে?

প্রথমে ভাষার কথা বলি। আমাদের যারা ইংরেজি পড়িয়েছে তারা নিজেরাই ইংরেজি জানে না। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যারা ইংরেজি পড়েছে তারা স্কুলে শিক্ষকতা করতে যায় না। কারণ স্কুলের বেতন তাদের পোষায় না। 

সারা দেশের স্কুলে কম্পিউটার দেওয়া হচ্ছে, স্কুলের একটি বিষয় হিসাবে তথ্য প্রযুক্তি পড়ানো হচ্ছে। কিন্তু কারা পড়াচ্ছে? সাধারণ বিষয়ে পড়া শিক্ষকদের ৩ কিংবা ৬ মাসের ট্রেনিং দিয়ে তথ্য প্রযুক্তি বিষয় পড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ সত্যিকার অর্থে যারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তি পড়েছে তারা কি ১২ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করবেন?

আমরা নাকি ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়ে গেছি? ডিজিটাল শেষ করে এখন নাকি আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হওয়ার পথে আছি? স্কুলের ক্লাস সিক্স থেকে টুয়েলভ ক্লাস পর্যন্ত তথ্য প্রযুক্তি ঢুকিয়ে কি লাভ হলো দেখুন... আমরা আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে মিয়ানমার, মালদ্বীপ, নেপাল ভুটান এবং ভিয়েতনামেরও নিচে।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর ৬২, মিয়ানমারের ৬৩.৮, শ্রীলংকার ৭১.৩, মালদ্বীপের ৮১.৫, ভিয়েতনামের ৮৫! লজ্জা লাগে না ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে বড়াই করতে?

যোগ্য শিক্ষক না দিয়ে কেবল স্কুল কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয় বানালে সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিতের সংখ্যা বাড়ে; কিন্তু শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাড়ে না। এই সহজ সত্য কথাটা বোঝার মত নেতৃত্ব আমাদের নাই।

স্কুল কলেজের শিক্ষকদের বেতন ন্যূনতম ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা করলে ভালো মানের শিক্ষক পাওয়া যেতে পারতো। ভালো মানের যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ এবং তাদের সুখি রাখার গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। 

আজকের বাংলাদেশের যত সমস্যা তার মূল হলো শিক্ষাকে সবচেয়ে কম গুরুত্ব দেওয়া। ধুমিয়ে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে, কিন্তু তার সাথে যোগ্য শিক্ষক দিচ্ছে না।

আবার একইসাথে স্কুল-কলেজ এখন আর শিক্ষকরা চালাচ্ছে না। স্কুল-কলেজ চালাচ্ছে অশিক্ষিত, মূর্খ, ধান্দাবাজ রাজনীতিবিদ ও আমলারা। তাহলে এরকম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সৎ ভালো নাগরিক কীভাবে তৈরী হবে?

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ