‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ও বস্ত্র প্রকৌশল শিক্ষাব্যবস্থা

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ও বস্ত্র প্রকৌশল শিক্ষাব্যবস্থা
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ও বস্ত্র প্রকৌশল শিক্ষাব্যবস্থা  © ফাইল ছবি

ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন একটি বাস্তবতা। স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট জাতি গঠনে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। স্মার্ট বাংলাদেশ হল বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিশ্রুতি, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের রূপান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বপ্রথম এই প্রতিশ্রুতি ও স্লোগান দেন।

প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে উৎপাদনশীলতার বিকল্প নেই আর চতুর্থ শিল্প বিপ্লব হলো আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচলিত উৎপাদন এবং শিল্প ব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয়করণের একটি চলমান প্রক্রিয়া। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে তালমিলে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশের বস্ত্র প্রকৌশল শিক্ষা ব্যবস্থা। বস্ত্র প্রযুক্তি বাংলাদেশ অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি।

প্রতি বছর আমাদের মোট বৈদেশিক মুদ্রার প্রায় ৮৫% আসে বস্ত্র শিল্প থেকে যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশ। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ছোঁয়ায় বস্ত্র খাতেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। শিল্পকরণগুলোতে গতানুগতিক উৎপাদন পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে অটোমেশন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও থ্রিডি প্রিন্টিং নিটিং প্রোডাকশন ডিজাইন রোবটিক্স এবং টেকনিক্যাল টেক্সটাইল বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছে। যা সময়ের সাথে সাথে দক্ষতা বৃদ্ধি করে উৎপাদন খরচ কমিয়ে পরিবেশ-বান্ধব কারখানা (গ্রিন ফ্যাক্টরি) এবং পরিবেশ-বান্ধব টেক্সটাইল প্রযুক্তির সাথে বাংলাদেশের কলকারখানাগুলোকে একত্রে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেকে অবস্থান জানান দিচ্ছে।

এই বিষয়ে পড়ালেখা করা শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে অপার সম্ভাবনা। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বের হওয়ার একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নক্ষত্রের মতো  উজ্জ্বল। টেক্সটাইল সেক্টরে প্রতিনিয়ত ভবিষ্যতের সম্ভাবনা বাড়ছে, আজকাল উন্নত দেশগুলোর মাইক্রোচিপ থেকে শুরু করে বিশাল ভবন, সেতু , অস্ত্রের কাঠামো, বুলেট রোধী পোশাক ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে।

যদি চাকরির কথা বলি তাহলে বলতে হবে আমাদের দেশে যে পরিমাণ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে তার অর্ধেক ও আমরা ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে যোগান দিতে পারছি না। আমাদের শিক্ষার্থীরা সাধারণত দুই ধরনের চাকরিতে অভ্যস্ত কলকারখানায় উৎপাদন এবং বাইং হাউজের মার্চেন্ডাইজিং। শুরুতেই মার্চেন্ডাইজারদের বেতন তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও টেক্সটাইল উৎপাদনের সাথে যারা জড়িত তারাও যখন অভিজ্ঞতা অর্জন করেন ভালো বেতন ও সুযোগসুবিধা পেয়ে থাকেন। 

কর্মক্ষেত্র সম্ভাবনা:
টেক্সটাইল মিল কারখানা, বায়িং হাউজ, মানুষ সম্পদ, ফ্যাশন ডিজাইনিং, সবখানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য দরজা খোলা রয়েছে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশুনা করে শুধু যে টেক্সটাইল মিল কারখানায় কাজ করতে হবে বিষয়টা তেমন নয় বরং সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর, ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়াররা সরাসরি কাজ করতে পারেন। তাছাড়া স্নাতক শেষ করে দেশের বাইরে পড়তে যাচ্ছেন কেউ অথবা স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি করে দেশে ফিরে এসে চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন কেউবা দেশেই চাকরি খুঁজে নিচ্ছেন। 

টেক্সটাইল সেক্টরে সফলতার সুযোগ যেমন বেশি তেমনি সফল হতে চাইলে চ্যালেঞ্জটাও অনেক বেশি নিতে হয়। সেই হিসেবে যারা চ্যালেঞ্জ দিতে ভালোবাসেন তাদেরকে টেক্সটাইল সেক্টরে স্বাগতম। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে রসায়ন। যন্ত্রপাতির জন্য প্রয়োজন রয়েছে পদার্থ বিজ্ঞানের জ্ঞান। সেই হিসেবে রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত নিয়ে যাদের ভালোলাগা আছে তারাও পড়তে পারেন এই বিষয় নিয়ে। বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে যাদের ভীতি নেই নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে যারা আগ্রহী তাদের জন্য পড়াশোনার বিষয় হিসেবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং খুবই ভালো একটি বিষয় হতে পারে।

শিল্প বিপ্লবের এ যুগের টেক্সটাইল শিল্পের চাহিদা পূরণের স্বপ্ন নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের যাত্রা শুরু হয়। বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নামে শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল এই বিভাগটি সময়ের পালাক্রমে বেড়েছে শিক্ষার্থী, শিক্ষার মান ও শিক্ষার পরিধি। এখানে রয়েছে ইয়ান ম্যানুফ্যাকচারিং, ফেব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং, ওয়েট  প্রসেসিং ও অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং এই চার বিভাগ নিয়ে মূলত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ডিগ্রী প্রদান করা হয়।

এই ডিপার্টমেন্ট থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০০ এর অধিক শিক্ষার্থী গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে যাদের অধিকাংশই দেশ ও দেশের বাহিরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। এস ডি জি এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণের উদ্দেশ্যে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে চার নম্বর লক্ষ্যমাত্রা হল মানসম্মত শিক্ষা। এই লক্ষ্য পূরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ইন্ডাস্ট্রির সাথে একটি সেতুবন্ধন গড়ে তুলছে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট।

লেখক: অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এন্ড কো-অর্ডিনেটর, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ,
অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি।


সর্বশেষ সংবাদ