বাংলাদেশের ক্রিকেটে কি যেন নেই

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল   © সংগৃহীত

কথাটা ২০১৫ সালের আগে শুনতে ভালো লাগতো যখন ক্রিকেটে আমাদের ইমপ্যাক্ট উন্নতির গ্রাফে ছিলো। তখন ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডকে ৪-০ তে হোয়াইট ওয়াশ করে ক্রিকেটিং কালচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি আমরা। এমনকি ২০১২ সালের এশিয়া কাপ ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ২ রানের হার আমাদের মনে বিশ্বাস দিতো একদিন কোনো একটা আইসিসি ইভেন্টের ট্রফি আমরা জিতে যাবো।

২০১৫ সালে সেই পাকিস্তানকেই ঘরের মাঠে যখন হোয়াইট ওয়াশ করলাম আমরা তখন থেকেই এশিয়ার নতুন পাওয়ার হাউজ। নিজেদের মাটিতে ইন্ডিয়া, সাউথ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড প্রত্যেকটা বড় দলকে ধুয়ে দিয়ে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েই আজ এই অবস্থানে বাংলাদেশের ক্রিকেট। ২০১৫ সালের ওয়ার্ল্ডকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল কিংবা ২০১৭ সালের চাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল আইসিসির যে মেগাইভেন্টই হোক বাংলাদেশ ক্রিকেট জায়ান্ট কিলারের মতো কাপন ধরিয়ে দিতো বিশ্বক্রিকেটে।

সময়ের সাথে সব পরিবর্তন হয়। যেমন এক সময়ের পুচকি আফগানিস্তান এখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সেই জায়ান্ট কিলার। অথচ এই আফগানিস্তান ক্রিকেট বাংলাদেশের সাফল্যকে সবচেয়ে বেশি অনুকরণ করেছে যা তারাই স্বীকার করে। আর অন্যদিকে আমাদের ক্রিকেটে পঞ্চপান্ডব নীতিটা একেবারেই ভ্রান্ত ফর্মুলায় স্তিমিত করেছে দেশের পুরো ক্রিকেট কালচারকে।

আরও পড়ুন: বাবর-রিজওয়ানের ক্লাসে লিটন কি পরামর্শ নিলেন?

যেখানে অন্য দলগুলো সবাই ১১ জনের খেলায় বিশ্বাসী সেখানে আমরা ৫ জনকে হাইলাইট করে বাকি ৬ জনকে ব্যাকফুটে ফেলে দিয়েছি। এজন্য আজ যখন সেই ৫ জনের ৪ জনই দলে থাকে না তখন সাইফুদ্দিন দলে এসে যাচ্ছেতাই পার্ফরম্যান্স দেয়, সাব্বির দলে ঢুকেই বাদ পড়ে, এনামুল-সৌম্য-ইয়াছির-সোহানদের কথা নাইবা টানলাম। সবচেয়ে বড় সত্যি কথা হলো ভারত-পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মতো আমাদের ফরম্যাটভেদে ক্রিকেটার নাই।

আমাদের ১০-১৫ বলে ৩০-৩৫ রান তোলার মতো হার্দিক-পোলার্ড-আসিফ নাই। আমাদের রিয়াদ-মুশফিক ভাই ছিলো যারা হ্যান্ডি ম্যাচগুলো কিভাবে বের করে আনতে হয় এটা অন্তত জানতেন। আফসোস আমাদের পান্ডবদের কোনো ব্যাক আপ তৈরি করতে পারিনি। সবচেয়ে বড় আফসোস হয় মুস্তাফিজের জন্য। তার অথেনটিক ট্যালেন্ট পেস বোলিং না কিন্তু বলে গতানুগতিক পেস আনতে গিয়ে তার স্লোয়ার-কাটারের যে দানবীয় টেকনিক ছিলো সেটাই এখন লুপ্ত।

টেস্ট ক্রিকেটে আমরা মৃত আত্মা, ওডিআইতে হার্ট ঠিকমতো চললেও কোলেস্টেরল জমতেছে এমন অবস্থা আর টি-টোয়েন্টিতে অলরেডি কোমায় চলে গিয়েছি আমরা।

সত্যি বলতে আমরা পিছিয়েছি এমন না। অন্যরা আমাদের চেয়ে বেশি এগিয়েছে আর আমরা যেখানে ছিলাম সেখানেই থেকে গিয়েছি। এসব বুঝতে ক্রিকেট বিশ্লেষক হওয়া লাগে না, ১৪-১৫ বছর ক্রিকেট ফলো করলেই হয়। ম্যাচ হারলে দর্শকদের চেয়ে ক্রিকেটারদের অনেক বেশি খারাপ লাগে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আল্টিমেট কামব্যাক কখনোই করতে পারি না আমরা। টাইগারদের রিসোর্স-ট্যালেন্ট-স্কিল সব থেকেও ম্যাচের রেজাল্ট হয়ত পক্ষে আসবে না জেনেও ম্যাচ দেখতে বসি আর চিন্তা করি- বাংলাদেশের ক্রিকেটে কি যেন নেই!

লেখক- শিক্ষার্থী, ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ