আইন পাসের অপেক্ষা

পিএসসি’র আদলে নিয়োগ কার্যক্রম চালাবে এনটিআরসিএ

*বিলুপ্ত হবে সনদ প্রথা

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও এনটিআরসিএ লোগো
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও এনটিআরসিএ লোগো  © ফাইল ছবি

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গতি আনতে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আদলে নিয়োগ কার্যক্রম চালাতে চায় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এজন্য একটি খসড়া আইন তৈরি করা হয়েছে। আইনটি পাস হলে নিবন্ধন সনদ প্রথা উঠে যাবে। পিএসসি’র আদলে নিয়োগ সুপারিশ করবে সংস্থাটি।

রোববার (৩১ ডিসেম্বর) এনটিআরসিএ কার্যালয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানান সংস্থাটির সচিব মো. ওবায়দুর রহমান।

এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) এস এম মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনটিআরসিএ’র সচিব ওবায়দুর রহমান। মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন এনটিআরসিএ সদস্য (পরীক্ষা মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন) ড. মো. আব্দুল মান্নান; সদস্য (শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান) মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী; পরিচালক (পরীক্ষা মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন) আবদুর রহমান।

জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এজন্য একটি নিবন্ধন পরীক্ষাও আয়োজন করা হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সনদ দেওয়া হয়। এরপর পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আবেদনগ্রহণ করা হয়। এতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয় প্রার্থীদের। নিয়োগে ধীরগতিসহ নানা কারণে এটি বিলুপ্ত করে নতুন একটি কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই কমিশন গঠনের জন্য আইনি কাঠামো তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয় এনটিআরসিএকে। তারা খসড়া আইন তৈরি করে সেটি জমাও দিয়েছে।

আইন পাস হলে আগামীতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ হবে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আদলে। চাকরিপ্রার্থীরা নিবন্ধন পরীক্ষার পরিবর্তে সরাসরি চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। এরপর শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহ করে উত্তীর্ণদের সরাসরি নিয়োগ সুপারিশ করবে এনটিআরসিএ। 

এনটিআরসিএ’র একটি সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে নিবন্ধন সনদ বা প্রত্যয়ন প্রথা উঠে যাচ্ছে। সনদের পরিবর্তে পরীক্ষা নিয়ে উত্তীর্ণদের তালিকা করে পিএসসি’র আদলে শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশ করা হবে। এ জন্য সংশোধন হচ্ছে আইন। সনদ বা প্রত্যয়ন প্রক্রিয়া তুলে দেয়ায় বদলে যাবে এনটিআরসিএ’র নামও।

ওই সূত্র আরও জানায়, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা এনটিআরসিএকে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে নতুন আইনের একটি খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়। খসড়াটি পর্যালোচনা করে আরো কিছু অংশ সংস্কারের পর্যবেক্ষণ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদে পুনরায় উঠতে পারে।

এ বিষয়ে এনটিআরসিএ সচিব ওবায়দুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা আমাদের কার্যক্রমে পরিবর্তন আনতে চাই। তবে বিদ্যমান আইনে সেটি সম্ভব নয়। এজন্য নতুন আইন দরকার। একটি আইন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইনটি পাস হলে শিক্ষক নিবন্ধন সনদের প্রয়োজন হবে না। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরাসরি নিয়োগ সুপারিশ করা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনে অনেকের বয়স শেষ হয়ে গেছে। আমরা চাইলেই বয়স শেষ হওয়া প্রার্থীদের আবেদনের সুযোগ দিতে পারি না। এটি মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তবে আমরা যদি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় বয়স উল্লেখ করে দিতে পারতাম তাহলে এই জটিলতার সৃষ্টি হত না। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকেই প্রার্থীদের বয়স হিসাব করা যেত। এসব সমস্যা দূর করতে হলে আমাদের আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। আইনগত কাঠামো ঠিক হয়ে গেলে পিএসসির মতো নিয়োগ সুপারিশ করা যাবে।’

তথ্যমতে, ২০০৫ সালে এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠা হয়। ২০০৬ সাল থেকে শিক্ষক নিয়োগের নিবন্ধন সনদ দিচ্ছে এনটিআরসিএ। দেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০১৫ সাল থেকে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করছে সংস্থাটি। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গতি ফেরানো, আরও স্বচ্ছতা আনতে গঠন করা হবে কমিশন। এই কমিশন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর সরাসরি প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করবে এনটিআরসিএ।


সর্বশেষ সংবাদ