সেই শিক্ষক দম্পতির ফুসফুস-কিডনিতে জমাট রক্ত

শিক্ষক দম্পতি
শিক্ষক দম্পতি   © সংগৃহীত

গাজীপুরে প্রাইভেট কার থেকে শিক্ষক দম্পত্তির মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তে দুজনের ফুসফুস ও কিডনিতে জমাট রক্ত পাওয়া গেছে। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় মামলা হয়নি।

এছাড়া তাদের মৃত্যুর রহস্যও জানতে পারেনি পুলিশ।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মো. শাফি মোহাইমেন জানান, বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে মরদেহ দুটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। এ সময় দুইজনের ফুসফুস ও কিডনিতে প্রায় একই রকম লক্ষণ পাওয়া গেছে। তাদের প্রত্যেকের ফুসফুস ও কিডনিতে জমাট রক্ত পাওয়া গেছে। এটা সাধারণত খাবারে বিষক্রিয়া কিংবা অন্য কোনো কারণেও হতে পারে। তাই তাদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হতে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য নমুনা ঢাকাস্থ সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোসাম্মৎ মাহমুদা আক্তার জলির মরদেহ গাজীপুর মহানগরের গাছার দক্ষিণ খাইলকুরের বগারটেক এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা তাদের প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন: ‘তুই রফিকের লাগি গলায় দড়ি দিলাম’

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ভোররাতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের গাছা থানার দক্ষিণ খাইলকুর বগারটেক এলাকায় প্রাইভেট কার থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে স্বজনরা। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।  

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শাফি মোহাইমেন জানান, নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দুজনের ফুসফুস ও কিডনিতে জমাট রক্ত পাওয়া গেছে। এটা খাবারে বিষক্রিয়া বা অন্য কারণেও হতে পারে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তাদের শরীরের বিভিন্ন নমুনা ঢাকায় সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।  

পুলিশ ও নিহতদের স্বজনরা জানায়, ইতোপূর্বে গাজীপুরের কালীগঞ্জের পুনসই হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন জিয়াউর রহমান। ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। তার স্ত্রী মোসাম্মৎ মাহমুদা আক্তার জলি টঙ্গী আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সপরিবারে গাছা থানার কামারজুরি এলাকার নিজ বাড়িতে থাকতেন। ব্যক্তিগত গাড়িতে করে দুজনেই স্কুলে যাওয়া-আসা করতেন। বুধবার স্কুল শেষে সহকর্মী ও সম্পর্কিত মামাতো ভাই মো. কামরুজ্জামানকে গাড়িতে তুলে নিয়ে জিয়াউর রহমান তার স্ত্রী জলির স্কুলে যান। সেখান থেকে স্ত্রী জলিকে গাড়িতে তুলে বাসার উদ্দেশে রওনা হন। পথে কামরুজ্জামানকে নামিয়ে দেন। জিয়াউর রহমানের ছেলে মিরাজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাবার মোবাইলে কল দেন। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তার মায়ের মোবাইলে ফোন দিলে বাসায় আসছেন বলে জানান। এরপর থেকে ফোনে তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি। পরে তারা গাছা থানা, টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানায় যোগাযোগ করেন। রাতভর তারা বিভিন্ন জায়গায় তাদের খোঁজ করেন। এক পর্যায়ে ভোররাতে দক্ষিণ খাইলকৈর বগারটেক এলাকা থেকে ওই গাড়ির ভেতর চালকের আসনে জিয়াউর রহমান ও পাশেই তার স্ত্রীর মাহমুদা আক্তার জলির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে প্রথমে তাদের তায়রুন্নেছা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে উত্তরার একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।  

নিহতের বড় ভাই মো. রিপন বলেন, হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত। তাদের সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন কিছুই খোয়া যায়নি। ঘটনাটি যদি পরিকল্পিত নাই হতো তাহলে টাকা, স্বর্ণ, মোবাইল ও গাড়ি নিয়ে যেত। তার কিছুই হয়নি।  

গাজীপুর মেট্রোপলিটনের গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নন্দলাল চৌধুরী বলেন, গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতেই গাজীপুরে তাদের জানাজার নামাজ শেষে ময়মনসিংহের ত্রিশালে তাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত মামলা দায়ের করা হয়নি। এছাড়া তাদের মৃত্যুর কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা সম্ভব হবে। তবে এরইমধ্যে তারা তদন্তকাজ শুরু করেছেন। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।  

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) আবু সায়েম নয়ন জানান, তাদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। পাশে একটি খালি বাটি পাওয়া গেছে। তবে তাতে কী ছিল তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।


সর্বশেষ সংবাদ