মৃত্যুর আগে স্বীকৃতি চান ভাষাসৈনিক আজিম

ভাষাসৈনিক আজিম উদ্দিন
ভাষাসৈনিক আজিম উদ্দিন  © সংগৃহীত ছবি

ভাষাসৈনিক আজিম উদ্দিন। তার বাড়ি নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া গ্রামে। ভাষা আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, 'সেই সময়ে নেত্রকোনায় আমিও সেই আন্দোলনে শরিক হই। তখন আমি নেত্রকোনার আঞ্জুমান স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। সে বছর ডিসেম্বরে বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোনা মহকুমা আয়োজিত সাহিত্য সম্মেলনে তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকারকে বিদ্রুপ করে স্বরচিত বাঙ্গাত্মক কবিতা আবৃত্তির জন্য আমাকে স্কুল থেকে চিরতরে বহিষ্কার করা হয়। তারপর আর পড়ালেখা হয়নি। তবে সেই ছাত্রত্ব ফিরে পেয়েছি ৬২ বছর পর ২০১৪ সালে; ততদিনে বয়স হয়ে গেছে ৮১। বর্তমানে আমার বয়স ৮৯ বছর।

আরও পড়ুন: ছাত্রদলে নিয়মিত শিক্ষার্থী নেই একজনও

আজিম উদ্দিন জানালেন, "ঘুষের থলি এবং পকেট ভারী স্বরচিত এ দুই কবিতা আবৃত্তি করতে গিয়ে তিনি স্কুল থেকে চিরদিনের জন্য বহিষ্কৃত হন। সেই দুটি কবিতা আবৃত্তি করতে করতে তিনি জানালেন, পাকিস্তানের শোষণ আমার সহ্য হতো না। সব ক্ষেত্রে আমাদের প্রতি চরম অবহেলার মানসিকতা দেখাত। মন চাইত প্রতিবাদ করতে। সে সময় ১৯৪৮ সালে বাংলা ভাষার আন্দোলন শুরু হয় ঢাকায়। পরবর্তীকালে ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দাবির মিছিলে গুলি চালালে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। আমরাও সেই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হই। সে বছরই ডিসেম্বরে বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোনা মহকুমায় আয়োজিত সাহিত্য সম্মেলনে বাংলায় কবিতা আবৃত্তি করার দায়ে আমাকে সরকার স্কুলের মাধ্যমে চিরকালের জন্য বহিষ্কার করে।

তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের পক্ষে আমার লেখা বিভিন্ন কবিতা তখনকার পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হতে থাকে। ১৯৫১ ও '৫২ সালে আমার লেখা 'পকেট ভারী' ও"ঘুষের থলি' শিরোনামে দুটি কবিতা স্কুল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল। সেগুলোও ছিল তৎকালীন সরকারকে বিদ্রূপ করে লেখা।

১৯৫২ সালে স্বরচিত 'আজব ভুঁড়ি' কবিতা পাঠের কয়েক দিন পরেই কারণ দর্শাও নোটিশ পাই। কেন সরকারকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে কবিতা লিখেছি এবং আবৃত্তি করেছি-তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকার আমার কাছে কৈফিয়ত তলব করে। আমি জবাবও দিয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছে জবাব সন্তোষজনক মনে হয়নি। পর পর তিনবার আমাকে নোটিস দেওয়া হয়। আমিও একই জবাব দিয়ে গেছি। শেষে ১৯৫৩ সালে স্কুল থেকে আমাকে রাশটিকিট করা হয়।

আরও পড়ুন: যন্ত্র যেভাবে আপনার মিথ্যে কথা ধরে ফেলতে পারবে

ভাষার দাবিতে বায়ান্নতে ছড়িয়ে পড়া দাবানল পরে দেশজুড়ে আরও বেগবান হলো। শেষে ১৯৫৪ সালে তো সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতও দিল। তিনি জানালেন, বায়ান্নতে ছিলেন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। সে সময় নেত্রকোনা মহকুমা ছাত্রলীগের সদস্য হন। তখন মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন প্রয়াত এমএলএ আব্দুল খালেক তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাবেক এমপি প্রয়াত ফজলুর রহমান খান।

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, ভাষা আন্দোলনে তার অবদান ছিল। ভাষাসৈনিক আজিম উদ্দিনের আবেদনের বিষয়টি শুনেছি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে তার ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাব। 

 


সর্বশেষ সংবাদ