কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি
ছাত্রদলে নিয়মিত শিক্ষার্থী নেই একজনও
- মাহমুদ বায়জীদ
- প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:৩৫ AM , আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০৭:১৩ PM
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিয়মিত শিক্ষার্থী নেই একজনও। সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ১৯ বছর আগে। আর সাধারণ সম্পাদক ১৭ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। নিয়মিত শিক্ষাজীবন শেষ করে বর্তমানে দুইজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি বিভাগে সান্ধ্যকালীন কোর্সে স্নাতকোত্তরে ভর্তি আছেন। এদিকে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতেও নিয়মিত শিক্ষার্থী পাওয়া যায়নি। তবে বেশির ভাগ নেতাকর্মী আইন বা অন্য কোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়ে কিংবা এমফিল করার নামে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রেখেছেন।
২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলরদের ভোটে ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হন ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ইকবাল হোসেন শ্যামল। খোকন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৩-২০০৪ সেশনে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ২০০৫-২০০৬ সেশনে ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হন সাধারণ সম্পাদক শ্যামল। নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে তাদের মাস্টার্স শেষ হওয়ার কথা ছিলো যথাক্রমে ১৩ ও ১১ বছর আগে। গত ডাকসু নির্বাচনের আগে সভাপতি খোকন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের জাপানিজ স্টাডিজে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন। শ্যামল ভর্তি হন তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় সান্ধ্যকালীন স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন।
মেয়াদ শেষ হলেও কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি খোকন-শ্যামল। ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটি দিয়েই চলছে ছাত্রদল। এই কমিটিতে স্থান পাওয়া কনিষ্ঠরা ২০০৭-২০০৮ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকে ভর্তি হয়েছিলেন। সে হিসেবে তারাও নিয়মিত স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন ২০১২ সালে। তবে অনেকে ড্রপ দিয়ে পরবর্তীতে স্নাতকোত্তর করেছেন। কমিটিতে কেউ নিয়মিত শিক্ষার্থী না হলেও প্রায় সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়মিত স্নাতকোত্তরে ভর্তি আছেন।
আরও পড়ুন- সাবেক ছাত্রনেতাদের কদর বাড়ছে বিএনপিতে
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতেও কোনো নিয়মিত শিক্ষার্থী নেই। ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে আহ্বায়ক ও আমানউল্লাহ আমানকে সদস্য সচিব করে ৯১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। কমিটি ঘোষণার সময় সদস্য ফেরদৌস আলম, বিএম কাওছার ও মো. বজলুর রহমান বিজয় নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিলেন। ফেরদৌস আলম ও বিএম কাওছার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-২০১৫ সেশনের শিক্ষার্থী। আর বিজয় ২০১৫-২০১৬ সেশনের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী। করোনা সংক্রমণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ২০১৫-২০১৬ সেশনের শিক্ষার্থীদের কিছুদিন পূর্বে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব ২০০৬-২০০৭ সেশনের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকে ভর্তি হন। সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমান ২০০৯-২০১০ সেশনে সঙ্গীত বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। রাকিব বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গভার্ন্যান্স স্টাডিজ বিভাগে সান্ধ্যকালীন স্নাতকোত্তরে ভর্তি আছেন। আর সদস্য সচিব আমান জাপানিজ স্টাডিজে স্নাতকোত্তর করছেন।
সূত্র জানায়, নিয়মিত কমিটি না হওয়ায় ছাত্রদলের কমিটিতে নিয়মিত শিক্ষার্থীরা আসছেন না। আধিপত্য ধরে রাখা ও গ্রুপিংয়ের কারণে নিয়মিত কমিটি হয় না ছাত্রদলে। কমিটিতে অপেক্ষাকৃত বয়স্কদের স্থান দেয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও একটা দূরত্ব তৈরি হয় নেতাকর্মীদের। নিয়মিত শিক্ষার্থী না হওয়ায় কমিটির নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকতে পারেন না। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে যেতে পারেন না তারা। যদিও অভিযোগ আছে, হলে ওঠার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়েন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতেও বাধা দেয় ছাত্রলীগ। ছাত্রদলের হল কমিটিতে নিয়মিত শিক্ষার্থীরা থাকলেও তাদের উঠতে দেয়া হয় না বলেও জানান ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এক্ষেত্রে প্রশাসনকে বারবার বলেও কোনো সমাধান পাননি তারা।
আরও পড়ুন- এক দশক রাজনীতি করেও ছাত্রদলে পদহীন ওরা
কমিটিতে নিয়মিত শিক্ষার্থী না থাকার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ছাত্রদলের ইয়ার ড্রপ সমস্যা রয়েছে। ছাত্রলীগের কারণে দীর্ঘদিন নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে আসতে পারেনি। ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। যার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে হল কমিটিগুলোতে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পদায়ন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সময়মতো কমিটি না হওয়ায় নিয়মিত শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বে আসতে পারেন না এমন বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, বর্তমানে এই জট কেটে যাচ্ছে। ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমানের হস্তক্ষেপে এখন ছাত্রদলে নিয়মিত কমিটি হচ্ছে।