ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণে সরকার ছাত্র-শিক্ষককে যুক্ত করেছে: রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ  © ফাইল ছবি

দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নিয়মিত গবেষণা ও মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্টদের আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। বুধবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ আয়োজিত দেশের সর্ববৃহৎ আইসিটি বিষয়ক মেলা `ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০২০'-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণে বর্তমান সরকার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, মেহনতি জনতা, বাংলার মাটি ও মানুষকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে একই সাথে সংযুক্ত করতে পেরেছে। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের মূল্য হ্রাস, অবকাঠামো সৃষ্টি এবং সর্বোপরি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে গত কয়েক বছরে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে এক যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটেছে।

তিনি জানান, ২০০৯ সালের আগে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১০ লাখ, বর্তমানে সেই সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। সারা দেশে ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে ৩৪০০ ইউনিয়নে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ১৮ হাজার ৫০০ সরকারি অফিসকে একই নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে।

করোনা মহামারী দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত করলেও থামিয়ে দিতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর কারণ ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়ন। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে যে দূরদর্শী অঙ্গীকার করেছিল তারই সুফল আজ মানুষ ঘরে বসে পাচ্ছে।

তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ই-কমার্সের মাধ্যমে ঘরে বসে কেনা-বেচা করা, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম, ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম, টেলি মেডিসিন সেবাসহ বিভিন্ন অনলাইন সেবা এ কঠিন সময়ে জীবনযাত্রাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে। অফিস-আদালতে চালুকৃত ই-নথি ব্যবস্থা সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধি করেছে। এতে করে সরকারি সেবা কার্যক্রম চালু রাখা এবং নাগরিকের কাছে সেবা পৌঁছানো সহজ হয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের ফলে দেশের সামনে নতুন এক শিল্প বিপ্লবের সুযোগ তৈরি হয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, এতে প্রধান অংশীদার দেশের তরুণরা। প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করছে। ইতোমধ্যে আইসিটি বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে ৫ লাখ ৮৫ হাজার জনকে আইসিটি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ১০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের এ সুযোগ তৈরি করে দেয়ার পাশাপাশি তারা নিজেরাও যাতে তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা হতে পারে সে ব্যাপারেও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি আরও জানান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এ যুগে হাই-টেক শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকার সারা দেশে ৩৯টি হাই-টেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করছে। এগুলো নির্মাণ সম্পন্ন হলে ৩ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এ খাতে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইওটি, রোবোটিক্স, সাইবার সিকিউরিটির উচ্চপ্রযুক্তির ৩১টি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। প্রযুক্তি ও জ্ঞান নির্ভর প্রজন্ম বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

তরুণ প্রজন্মকে স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে অন্যান্য খাতে চাকরির সুযোগ কমে আসলেও ফ্রিল্যান্সিংয়ের কারণে অসংখ্য তরুণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বর্তমানে দেশে সাড়ে ৬ লাখ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। তবে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যাতে সমানতালে এগিয়ে যেতে পারে সে ব্যাপারেও উদ্যোগী হতে হবে। এর পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নিয়মিত গবেষণা ও মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টিতে আরও মনোযোগী হতে হবে।

আবদুল হামিদ উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের তৈরি সফটওয়্যার ও আইটি সেবা এখন আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের প্রায় ৬০ দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে গত ১২ বছরে আইটি খাতের রপ্তানি ২৬ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আশা করা যাচ্ছে যে ২০২৪ সালের মধ্যে এ আয় ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে এবং জিডিপিতে সফটওয়্যার ও আইসিটি সেবাখাতের অবদান ৫ শতাংশে উন্নীত হবে।

বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সকল ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচির বাস্তবায়ন ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিতকে আরও শক্তিশালী করেছে। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence