ভূমি অফিসে এসি ল্যান্ড পদ শূন্য, দুর্ভোগের শিকার সেবাপ্রত্যাশীরা
- নাটোর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:২২ AM , আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:২২ AM

নাটোরের লালপুর উপজেলা ভূমি অফিসে প্রায় দেড় মাস ধরে সহকারী কমিশনার বা এসি ল্যান্ড (ভূমি) নেই। দীর্ঘ সময় পদ শূন্য থাকায় জমি কেনাবেচা, নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর সেবা মিলছে না। এতে প্রতিদিন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ছাড়া ব্যাহত হচ্ছে বাজার মনিটরিং ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কাজ।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিমুল আক্তার বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
এসি ল্যান্ড না থাকায় উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার নামজারি ও জমাখারিজসহ ভূমিসংক্রান্ত নানা কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এসব সেবা না পাওয়ায় অনেকের জমি বেচাকেনা বন্ধ আছে। জমি খারিজ না করার কারণে জমি বেচাকেনা করতে পারছেন না সাধারণ মানুষ।
আব্দুল মালেক নামের এক ভুক্তভোগী জানান, প্রায় দুই মাস আগে তিনি নামজারি জমাখারিজের আবেদন করেন। এখন পর্যন্ত জমির নামজারি জমাখারিজ হয়নি। কবে নাগাদ জমাখারিজ হবে, তা-ও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না অফিসের কেউ।
মাসুদ রানা নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, তিন বছর ধরে জমির মিসকেস নিয়ে এসি ল্যান্ড অফিসে ঘুরছি। চলতি মার্চে আমার মিসকেসেরে তারিখ ছিল। কিন্তু এসি ল্যান্ড না থাকায় সেই শুনানি হয়নি। এভাবে আর কত দিন ঘুরতে হবে কে জানে। এসি ল্যান্ড না থাকায় সেবা নিতে এসে আমার মতো অনেকেই এখন বেকায়দায়।
কয়েকজন দলিল লেখক জানান, ডিসেম্বর মাসের পুরো সময়টা ধরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সার্ভার বন্ধ থাকায় নামজারিসহ বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত ছিল সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া বর্তমানে এসি ল্যান্ড না থাকায় নামজারি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে সঠিক সময়ের মধ্যে সেবাগ্রহীতারা নামজারি করতে না পারায় দলিল রেজিস্ট্রি করতে পারছেন না তারা।
কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, এই উপজেলায় প্রতিদিন মাধবপুরে অনেক জমি বেচাকেনা ও নিবন্ধন হয়ে থাকে। জমি বিক্রি করতে গেলে নামজারি, বাঁটোয়ারানামা ও খাজনা পরিশোধ করতে হয়। এসব কাজ সম্পাদন করতে এসি ল্যান্ড থাকা আবশ্যক। কিন্তু গত ৩ ফেব্রুয়ারি এসি ল্যান্ড বদলি হয়ে চলে যান। এরপর থেকে লালপুরে এসি ল্যান্ড পদে আর কাউকে পদায়ন করা হয়নি।
বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপজেলা পরিষদ ও পৌর প্রশাসকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করায় তার পক্ষে নিয়মিত ভূমি অফিস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
লালপুর উপজেলা ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, উপজেলা ভূমি অফিসের অধীনে ১১টি সহকারী ভূমি অফিস রয়েছে। এসব অফিসের কাজ উপজেলা সহকারী কমিশনারের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু তিনি না থাকায় এসব অফিস থেকে সেবাপ্রার্থীদের নিয়মিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ওয়ালিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে আফছানা বলেন, প্রায় দেড় মাস ধরে এসি ল্যান্ড না থাকায় নামজারিসহ বিভিন্ন কাজের ধীরগতি দেখা দিয়েছে। সেবাগ্রহীতারা ঠিকমতো সেবা নিতে পারছেন না। বিশেষ করে সেবাগ্রহীতাদের বোঝানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে লোক পদায়ন হয়েছে কিন্তু এখনো যোগদান করেনি। বর্তমানে ভূমি অফিসের সেবা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ শিগগিরই উপজেলায় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) যোগদান করবেন বলে আশাবাদী তিনি।