ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল
যন্ত্রপাতি থাকলেও চিকিৎসক-জনবল সঙ্কট, ভেঙে পড়ছে চিকিৎসাসেবা
- আশরাফ আন-নূর
- প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ১০:২৭ AM , আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৫, ১১:২৩ PM

‘অল্প সংখ্যক চিকিৎসক নিয়ে বিপুল সংখ্যক ইনডোর ও আউটডোর রোগীর চিকিৎসা সেবা দেওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় হাসপাতালের ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। বিষয়টি বারবার প্রশাসনকে জানানো হলেও এখনো জনবল নিয়োগের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’ কথাগুলো ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. আম্মাতে নূর ওয়াহিদা সুলতানা।
বুধবার (৫মার্চ) হাসপাতাল পরিদর্শনেও মিলেছে এমন চিত্র। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালের পরামর্শক পদের অর্গানোগ্রাম (২০১৬) অনুযায়ী, সার্জারি, গাইনিক, এনেসথেসিয়া, প্যাথলজি, রেডিওলজি ও ফিজিশিয়ান বিভাগে যথাক্রমে ১, ১, ২, ১, ১ ও ১ জন করে চিকিৎসক নিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। অর্থাৎ মোট সাত জনের পরিকল্পনা ছিল। বাস্তবে মাত্র চারজন চিকিৎসক কর্মরত থাকায় তিনটি পদ শুন্য রয়েছে।
মেডিকেল অফিসারের ১৯টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১০ জন, ৯টি পদ শূন্য। ডেন্টাল সার্জনের একটি পদও বর্তমানে শূন্য রয়েছে। মেট্রন পদের জন্য একজন থাকার কথা থাকলেও খালি রয়েছে। সময়ের সঙ্গে জনবল বৃদ্ধির প্রয়োজন থাকলেও বাস্তবে তা না হয়ে শূন্যপদের সংখ্যা বেড়েছে।
রেসিডেন্ট সার্জন পদে গাইনি ও সার্জারি বিভাগে প্রতিটি এক জন করে নিয়োগের কথা ছিল। কিন্তু বর্তমানে এ সব ক্ষেত্রেই কোনো চিকিৎসক নিযুক্ত হয়নি। একইভাবে রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান পদের নিয়োগও এখনও খালি রয়েছে।
এর মধ্যে মেডিকেল অফিসারের ১৯টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১০ জন, ৯টি পদ শূন্য। ডেন্টাল সার্জনের একটি পদও বর্তমানে শূন্য রয়েছে। মেট্রন পদের জন্য একজন থাকার কথা থাকলেও খালি রয়েছে। সময়ের সঙ্গে জনবল বৃদ্ধির প্রয়োজন থাকলেও বাস্তবে তা না হয়ে শূন্যপদের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ডেমরা থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন সুবহান (৬৫) নামের এক রোগী। তিনি খোলা করিডোরে বসে আছেন। তার ভাষ্য, ‘আমি চর্ম সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। আমার দুবার স্ট্রোক হয়েছে। আর এখন সমস্যার কারণে গায়ে প্রচুর চুলকানি হওয়ায় চিকিৎসকের দেখাতে এসেছি।’
তিনি বলছিলেন, ‘আমি একটু আগে এখানে এসে দেখলাম ২০ থেকে ৩০ জন রোগী বসে আছেন। কিন্তু এখন আমি ছাড়া কেউ নেই। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলেও চিকিৎসককে পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে চিকিৎসক কম। হাসপাতাল আড়াইটা পর্যন্ত খোলা থাকে, তারপর বন্ধ হয়ে যায়।’
জানা গেছে, শুরুতে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ছিল মাত্র ৫০টি। তবে সময়ের সঙ্গে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় শয্যা ১৫০টিতে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু শয্যা সংখ্যা বাড়লেও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের বিষয়টি এখনও উপেক্ষিত রয়েছে। ফলে রোগীদের যথাযথ সেবা দেওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
আরো পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে জটিলতা দূর হচ্ছে
নিয়োগ প্রক্রিয়ার দেরি হওয়া প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালটি সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাদের উদাসীনতা এবং অর্গানোগ্রামের জটিলতার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’
পরিচালক ডা. আম্মাতে নূর ওয়াহিদা সুলতানা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘জনবল নিয়োগের জন্য আমি বহুবার আবেদন করেছি, কিন্তু কোনো ফল পাইনি। বার বার আবেদন করা হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যা আমাদের চিকিৎসা সেবায় বড় ধরনের সংকট তৈরি করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সফলতা বলতে করোনাকালীন হাসপাতালটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী সেবা নিচ্ছেন। যতটা সম্ভব কম জনবল নিয়েই আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এখানে প্রয়োজনীয় ইনস্ট্রুম্যান্টস আছে, কিন্তু পর্যাপ্ত ম্যান পাওয়ার নেই।’