বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে জটিলতা দূর হচ্ছে

ইউজিসি লোগো
ইউজিসি লোগো  © ফাইল ছবি

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে অধিক সময় লাগার অভিযোগ পুরোনো। এ প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ও জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন করতে পারেন না প্রকল্প পরিচালকরা (পিডি)। অর্থ ছাড়ের প্রস্তাব এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে অন্তত চারটি ধাপ অতিক্রম করার কারণে কালক্ষেপণ হয় বলে জানা গেছে। এগুলো একটি ধাপে আনার উদ্যোগ নিয়েছে তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।

এ বিষয়ে ইউজিসির পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ছাড়ের বিষয়ে কমিশন উদ্যোগ নিয়েছে। কমিশনের সিদ্ধান্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’

জানা গেছে, গত ৬ মাসে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজসি) আওতাধীন বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের আর্থিক অগ্রগতি সাড়ে ১০ শতাংশের কম। এ অবস্থায় চলমান প্রকল্পগুলোর গতি বাড়াতে কমিশনকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা। এ চিঠির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের আর্থিক ছাড়ের বিষয়ের ধাপ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন।

‘পিএমও, পিডি, ট্রেজারার এবং ভিসি এই চারটি ধাপকে একটি ধাপ করার সুপারিশ করা হয়েছে। চারটি অফিসের সংশ্লিষ্ট একজনকে নিয়ে একটি কমিটি করা হবে। এই কমিটি অর্থ ছাড়ের প্রস্তাব এবং ব্যয়ের অনুমোদন দেবেন। বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’—ইউজিসি কর্মকর্তা

সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টররা (পিডি) আর্থিক ক্ষমতা অনুযায়ী ১০ থেকে ২০ কোটি টাকার আর্থিক অনুমোদন দিতে পারেন। প্রকল্পের ব্যয় ২০ কোটি টাকার বেশি হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে প্রস্তাব ইউজিসিতে পাঠাতে হয়। পরবর্তীতে ইউজিসির পরিচালক, সংশ্লিষ্ট শাখার সদস্য এবং কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন সাপেক্ষে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন হলে অর্থ পায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও একাধিক ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অফিস (পিএমও), ট্রেজারার এবং উপাচার্য দপ্তরের পৃথক অনুমোদনের পর অর্থ ব্যয় করতে পারেন প্রকল্পের পরিচালকরা। প্রতিটি অফিসে ফাইল দীর্ঘদিন পরে থাকায় প্রকল্পের কাজে স্থবিরতা দেখা দেয়। এই ধাপগুলো কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে ইউজিসি।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ইউজিসির এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘পিএমও, পিডি, ট্রেজারার এবং ভিসি এই চারটি ধাপকে একটি ধাপ করার সুপারিশ করা হয়েছে। চারটি অফিসের সংশ্লিষ্ট একজনকে নিয়ে একটি কমিটি করা হবে। এই কমিটি অর্থ ছাড়ের প্রস্তাব এবং ব্যয়ের অনুমোদন দেবেন। বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’

‘জুলাই ২০২৪ থেকে জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ইউজিসির প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়নের আর্থিক অগ্রগতি ১০.৩৮ শতাংশ। উক্ত সময়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রকল্পের সার্বিক বাস্তবায়ন অগ্রগতি ১৬ শতাংশ। একই সময়ে জাতীয় গড় অগ্রগতি ২১.৫২ শতাংশ। ইউজিসির প্রকল্পসমূহের মনিটরিং যথাযথভাবে হচ্ছে না বিধায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি সন্তোষজনক হচ্ছে না মর্মে প্রতীয়মান। এ ক্ষেত্রে কমিশন থেকে প্রকল্পের বাস্তবায়ন মনিটরিং আরো জোরদার করা একান্ত প্রয়োজন।’

এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ থেকে কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজের কাছে ইউজিসির আওতাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়নে অর্থ ছাড়ে বিলম্ব নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে চিঠি পাঠায় মন্ত্রণালয়। 

মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৬১টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। উক্ত ৬১টি প্রকল্পের মধ্যে ৩৩টি প্রকল্প বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন। এ অর্থবছরে এ বিভাগের মোট এডিপি বরাদ্দের ৪৫ শতাংশ অর্থ কমিশনের প্রকল্পসমূহের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ফলে কমিশন এর প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি এ বিভাগের সার্বিক বাস্তবায়ন অগ্রগতিতে অধিকতর ভূমিকা রাখে।’

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘জুলাই ২০২৪ থেকে জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ইউজিসির প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়নের আর্থিক অগ্রগতি ১০.৩৮ শতাংশ। উক্ত সময়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রকল্পের সার্বিক বাস্তবায়ন অগ্রগতি ১৬ শতাংশ। একই সময়ে জাতীয় গড় অগ্রগতি ২১.৫২ শতাংশ। ইউজিসির প্রকল্পসমূহের মনিটরিং যথাযথভাবে হচ্ছে না বিধায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি সন্তোষজনক হচ্ছে না মর্মে প্রতীয়মান। এ ক্ষেত্রে কমিশন থেকে প্রকল্পের বাস্তবায়ন মনিটরিং আরো জোরদার করা একান্ত প্রয়োজন।’

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘গুনগত মান বজায় রেখে যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিতকল্পে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক ও সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের আওতায় গৃহীত প্রকল্পগুলো কমিশনসহ স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তদারকি ও যথাযথ সময়ে অর্থছাড় নিশ্চিত করা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গৃহীত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনায় জানা যায়, প্রকল্পের অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয়।

অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক শৃঙ্খলা মোতাবেক প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালনও বাঁধাগ্রস্থ হয়। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকরণ ত্বরান্বিত করার স্বার্থে অর্থছাড়সহ অন্যান্য প্রশাসনিক পদ্ধতির ধাপসমূহ চিহ্নিত করে সেগুলো কীভাবে হ্রাস করা যায়, সে বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে একটি প্রস্তাবনা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক গত ৩১ ডিসেম্বর এডিপি পর্যালোচনা সভায় উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক তা যথাসময়ে করতে না পারায় পরবর্তী এডিপি পর্যালোচনা সভায় উপস্থাপনের জন্য পুনঃসিদ্ধান্ত হয়।

একইভাবে বগত ২২ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখের এডিপি পর্যালোচনা সভায় উক্ত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হয়নি বিধায় সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়, যা অনভিপ্রেত ও এই বিভাগের জন্য বিব্রতকর। কমিশন এর প্রকল্পের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার জন্য নিবিড় মনিটরিং বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’


সর্বশেষ সংবাদ