চাঁদা না দেওয়ায় যুবদল নেতার বিরুদ্ধে বাস পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ
- পাবনা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৮ AM , আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৫ AM
পাবনা সদরের মালিগাছায় এনামুল হক নামের এক বাস মালিকের কাছে২০ হাজার টাকা চাঁদা না পেয়ে একটি বাস পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রানু বিশ্বাস নামে এক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত রানু বিশ্বাস একই ইউনিয়নের রুপুপর গ্রামের রশিদ বিশ্বাসের ছেলে। তিনি মালিগাছা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। অন্যজন ঘরনাগড়া গ্রামের শামসুল হকের ছেলে লিটন হোসেন। তিনি যুবদলের সদস্য বলে জানা যায়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী এনামুল হক শংকরপুর গ্রামের নায়েব আলী প্রামাণিকের ছেলে। তিনি পুড়ে যাওয়া তামিম ট্রাভেলস নামে বাসটির মালিক।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে তামিম ট্রাভেলসের মালিক এনামুল হকের কাছে মাসিক ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন যুবদল নেতা রানু বিশ্বাস। এ সময় এনামুল হক চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বাস চলাচল বন্ধ ও পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় রানু বিশ্বাস।
এ ঘটনার জেরে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত তিনটার পর তিনটি মোটরসাইকেলে করে কয়েকজন এসে শংকরপুর গ্রামে দাঁড়িয়ে রাখা বাসে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত সটকে পড়ে। এ সময় প্রতিবেশী জাবুল প্রামাণিক, শাহীন প্রামাণিক বিষয়টি বুঝতে পেরে স্থানীয়দের ডাকাডাকি করলে আগুন নেভাতে এগিয়ে আসে। এ ঘটনায় আনুমানিক ৬ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর।
পুড়িয়ে দেওয়া তামিম ট্রাভেলসের মালিক এনামুল হক বলেন, দুইদিন আগে রানু বিশ্বাস আমার কাছে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। তখন আমি তাকে বলেছিলাম কী কারণে চাঁদা দেব। সে আমাকে বলছিল চাঁদা না দিলে বাস চলতে দেওয়া হবে না, পুড়িয়ে দেওয়া হবে। এরপর গত রাতে রানু বিশ্বাসের নেতৃত্বে আমার বাসটিকে পোড়ানো হয়েছে বলে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, পাবনা সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেহানুল ইসলাম বুলালের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে মালিগাছা ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় ৫ আগস্টের পর থেকে রানু বিশ্বাস, লিটন হোসেন, কালাম হুজুরসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি ও যুবদলের নেতারা চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সেজন্য একের পর এক অপকর্ম করে যাচ্ছে তারা। এদের পুলিশ আটক করলেও কতিপয় এসব নেতা থানায় গিয়ে আসামিকে মুক্ত করে আনেন।
পুড়িয়ে দেওয়া তামিম ট্রাভেলসের মালিক এনামুল হক বলেন, দুই দিন আগে রানু বিশ্বাস এসে আমার থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। এসময় আমি তাকে বলি যে কিসের জন্য চাঁদা দিতে হবে। সে আমাকে বলে চাঁদা না দিলে বাস চলতে দেওয়া হবে না। পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হবে। প্রতি মাসের শুরুতে চাঁদা দিতে হবে। এরপর গত রাতে রানু বিশ্বাসের নেতৃত্বে আমার বাসটি পুড়ানো হয়েছে। এ ঘটনায় আমি একদম শেষ হয়ে গেলাম। থানায় মামলা দায়ের করা হবে। যারা এ কাজ করেছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
মালিগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মুন্তাজ আলী বলেন, বাসটিকে পেট্রোল ঢেলে এমনভাবে পুড়ানো হয়েছে এটা বলার ভাষা নেই। আমি ঘটনাটি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সদরের ওসি ও ইউএনও স্যারকে অবগত করেছি। যারা এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মালিগাছা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রানু বিশ্বাস বলেন, ‘আমার অনুরোধ আপনারা সঠিকভাবে তদন্ত করে দেখেন। তদন্ত করতে যদি কিছু খরচ হয় আমি দেবো। ওসি স্যারকেও বলেছি তদন্ত করতে। যদি আমি ওই এলাকার আশেপাশে গিয়ে থাকি বা এ ঘটনার সাথে আমার কোনোরকম জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে আইন আমাকে যে শাস্তি দেয় মাথা পেতে নেবো।’
পাবনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় কুমার বলেন, ’আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। কে বা কারা আগুন দিয়েছে তাদের নাম পরিচয় এখনও জানা যায়নি। তবে ভুক্তভোগী বাস মালিক এনামুলকে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। তবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহারুল ইসলাম বলেন, ’আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আগে দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারপর সহায়তা দেওয়া যায় কিনা দেখা হবে।’