শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাউন্সেলিংসহ ১৪ দফা সুপারিশ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৮ PM , আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৮ PM

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাউন্সেলিংসহ ১৪ দফা সুপারিশ করেছে আঁচল ফাউন্ডেশন। আজ শনিবার (১৮ জানুয়ারি) আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সুপারিশ করা হয়। এ সময় জানানো হয়, ২০২৪ সালে দেশ ৩১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ৪৬.১ শতাংশই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী।
সংবাদ সম্মেলনের বিষয়বস্তু ছিল ‘২০২৪ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা: সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি’। এতে আত্মহত্যা প্রতিরোধে আঁচল ফাউন্ডেশন ১৪ দফা সুপারিশ করে। সেগুলো হলো:
১. মানসিক স্বাস্থ্য অ্যাম্বাসেডর প্রোগ্রাম: বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য ‘স্বেচ্ছাসেবী অ্যাম্বাসেডর’’ নিয়োগ করা। তারা তাদের সহপাঠীদের মানসিক চাপ, হতাশা বা উদ্বেগ চিহ্নিত করে সঠিক সহায়তার জন্য সহপাঠীদের কাউন্সেলিং সেন্টারে রেফার করবে।
২. ‘বন্ধু সহযোগিতা গ্রুপ’ গঠন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছোট ছোট সাপোর্ট গ্রুপ তৈরি করা, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের অভিজ্ঞতা, উদ্বেগ বা মানসিক চাপ নিয়ে আলোচনা করতে পারবে। এটি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয়তা রক্ষার পরিবেশ তৈরি করবে।
৩. ‘লাইফ স্কিলস ওয়ার্কশপ’ আয়োজন: শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য নিয়মিত কর্মশালা পরিচালনা করা।
৪. গেমিফিকেশন টেকনিক: আত্মহত্যা প্রতিরোধে ‘মেন্টাল হেলথ চ্যালেঞ্জ’ বা ‘জীবনের জন্য পয়েন্ট অর্জন’ নামে গেমিং অ্যাপ চালু করা, যেখানে শিক্ষার্থীরা মানসিক সুস্থতার জন্য ভালো অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে পয়েন্ট অর্জন করতে পারবে।
৫. ‘ফিলিংস অ্যালার্ম সিস্টেম’ চালু করা: শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মোবাইল অ্যাপ যা তাদের মেজাজের ওঠা-নামা পর্যবেক্ষণ করে এবং হতাশার লক্ষণ দেখা দিলে সতর্কবার্তা পাঠায়। এটি সরাসরি কাউন্সেলরের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারবে।
৬. পারিবারিক কাউন্সেলিং প্রোগ্রাম: অভিভাবকদের মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়াতে এবং কীভাবে সন্তানদের মানসিক চাপ ও হতাশা সামলাতে সাহায্য করা যায়, সে বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শদান প্রোগ্রাম চালু করা।
৭. সৃজনশীল থেরাপি ক্লাস: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর্ট, মিউজিক, ড্রামা বা ড্যান্স থেরাপি ক্লাস চালু করা। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের আবেগকে সৃজনশীল উপায়ে প্রকাশ করতে পারবে এবং মানসিক চাপ মুক্ত থাকবে।
৮. ডিজিটাল মেন্টাল হেলথ ক্যাম্পেইন: সোশ্যাল মিডিয়ায় #LifeMatters বা #TalkToUs এর মতো ক্যাম্পেইন চালু করে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনায় উৎসাহিত করা। এখানে বিশেষজ্ঞরাও অনলাইনে বিনামূল্যে পরামর্শ দিতে পারবেন।
৯. ‘রিভারসাইড হেলথ রিট্রিট’ পরিকল্পনা: মানসিক চাপ হ্রাসের জন্য শিক্ষার্থীদের গ্রুপভিত্তিক রিট্রিট প্রোগ্রামের আয়োজন। এখানে প্রকৃতির মাঝে ভিন্নধর্মী থেরাপি, মানসিক রিলাক্সেশন সেশন এবং সৃজনশীল কার্যক্রমের ব্যবস্থা থাকবে।
১০. আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির স্কলারশিপ: নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমাতে বিশেষ স্কলারশিপ চালু করা। এক্ষেত্রে আর্থিক নিশ্চয়তা তাদের মানসিক সুস্থতায় বড় ভূমিকা রাখে।
১১. আত্মহত্যা প্রতিরোধ গবেষণা তহবিল: আত্মহত্যার পেছনের কারণ বিশ্লেষণ এবং কার্যকর সমাধান উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা তহবিল তৈরি করা।
আরো পড়ুন: ২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, ৪৬ শতাংশই মাধ্যমিকের
১২. জীবন সংরক্ষণ প্রতিশ্রুতি দিবস: বছরে একদিন ‘জীবন সংরক্ষণ প্রতিশ্রুতি দিবস’ পালন করা। যেখানে সবাই মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের অঙ্গীকার করবে। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতার প্রসার ঘটাবে।
১৩. কৃতজ্ঞতা চর্চা সেশন: প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি সেশন যেখানে তারা তাদের জীবনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। এটি তাদের ইতিবাচক চিন্তাভাবনা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
১৪. মানসিক স্বাস্থ্যের ওপেন হেল্প লাইন: ২৪/৭ সেবা প্রদানকারী একটি হেল্প লাইন চালু যেখানে শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় তাদের সমস্যাগুলো শেয়ার করতে পারবে এবং তাৎক্ষণিক সান্ত্বনা পাবে।