ফেনীতে ছাত্র-জনতার উপর হামলা, ৫ মাসেও গ্রেপ্তার হয়নি অধিকাংশ অস্ত্রধারী
- এমএ আরাফাত ভূঞা, ফেনী প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৫৪ PM , আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:০২ PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় দায়েরকৃত ১৯ মামলায় পাঁচ মাসে ২৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে ৮টি হত্যা ও ১১টি হত্যাচেষ্টার মামলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৬৯ জন এজাহারনামীয় এবং ২১৬ জন সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে আটক করা হয়। এর মধ্যে ৫ জন দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
তবে, গত ৪ আগস্ট মহিপালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অধিকাংশ অস্ত্রধারী এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গুলি চালানোর কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিও ফুটেজে অন্তত ৩৩ জনকে অস্ত্রসহ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) ফেনী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, এখন পর্যন্ত অস্ত্রধারীদের মধ্যে ফেনী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি ওরফে লিটন ও ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সম্রাট গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের দুজনই দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
পুলিশ আরো জানায়, আন্দোলনে টমটম চালক জাফর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী রহিম উল্লাহ, এমপি নিজাম হাজারীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) ফরিদ মানিক, ফেনী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি লিটন ও ফেনী সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল হক রিফাতকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তারা কেউ আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়নি।
জাফর হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান তানিম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ মামলায় মোট ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৫ জন এজাহারনামীয় ও অন্যরা সন্দেহভাজন আসামি। এ মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য হাজী রহিম উল্লাহসহ পাঁচজনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তারা কেউ স্বীকারোক্তি দেয়নি।
ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ হত্যা মামলায় এজাহারনামীয় ১০ জন ও সন্দিগ্ধ ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ মামলায় ৮ জনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সম্রাট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
সরোয়ার জাহান মাসুদ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক বেলাল উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ফেনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আমির হোসেন বাহারসহ ১২ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর আবদুল্লাহ ও নাহিদ নামে দুই আসামি ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
জাকির হোসেন শাকিব হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ওলি আহাদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মামলায় মোট ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সম্রাটের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।
ওয়াকিল আহমেদ শিহাব হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোতাহের হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ মামলায় এজাহারনামীয় ৮ জন ও সন্দিগ্ধ ২৬ জনসহ মোট ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় মেজবাহ উদ্দিন মেজু, এনামুল হকসহ ৪ জনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ওসমান গণি লিটন ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
ছায়েদুল ইসলাম হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. মোজাম্মেল হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ মামলায় এজাহারনামীয় ৭ জন ও সন্দিগ্ধ ১৬ জনসহ মোট ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২ জনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মামলায় শর্শদি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সম্রাটের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সেদিন মহিপালে ৫০ গজের মধ্যে ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ ও ছায়েদুল ইসলাম হত্যার ঘটনা ঘটে। এ দুটি হত্যাকান্ডে সম্রাটের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে।
মাহবুবুল হাসান মাসুম হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. আলমগীর হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ হত্যা মামলায় এজাহারনামীয় ৭ জন ও সন্দিগ্ধ ১৬ জনসহ মোট ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৬ জনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেপ্তার মুরাদ হাসান বাবু আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
আন্দোলনে আফসার হোসেন হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. বেলাল উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ মামলায় ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
জানা যায়, ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গুলি চালানোর কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি জিয়াউদ্দিন বাবলু এবং ফেনী সদর উপজেলার কাজীরবাগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফের সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তদের অধিকাংশই বিভিন্ন উপায়ে দেশত্যাগ করেছেন।
অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে সম্রাট ও লিটন নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ওসি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে অস্ত্রধারীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। ফলে মামলার তদন্ত অনেকদূর এগিয়েছে।