ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ‍গুলিতে আহত কাজলকে পাঠানো হলো থাইল্যান্ড

পুলিশের গুলিতে আহত কাজল মিঞা
পুলিশের গুলিতে আহত কাজল মিঞা  © সংগৃহীত

জুলাইয়ের গণবিপ্লবে যাত্রাবাড়িতে পুলিশের গুলিতে আহত কাজল মিঞা (২৭) এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে থাইল্যান্ড পাঠানো হয়েছে। সেখানকার স্থানীয় বেজথানি হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেয়ার কথা রয়েছে।

রোববার (১৭ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে কাজলকে বিদায় জানান।

এসময় তিনি জানান, ৬৪ লাখ টাকা শুধু এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে খরচ হয়েছে কাজল মিঞার জন্য। এছাড়া আরও ২০ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে। তার মধ্যে ৭ জনকে পাঠানো হবে তুরস্কতে। এই ৭ জনের চিকিৎসার খরচ বহন করবে তুরস্ক।  

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে যোগদানের পর আমার প্রধান কাজ হলো আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এজন্য আহতদের সুচিকিৎসার জন্য বিদেশি চিকিৎসক দল আনার ব্যবস্থা করেছি।  আহতদের চিকিৎসার জন্য চায়না নেপাল, ফ্রান্স থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এসেছে। থাইল্যান্ড থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এসেছে। ৫০ জনের চোখের কর্নিয়া নেপাল রেডি করে রেখেছে, যাদের কর্নিয়া স্থাপন প্রয়োজন হবে তাদের জন্য। ইতোমধ্যে দুইজনের চোখে সফলভাবে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় যুক্তরাজ্য থেকে চিকিৎসকদের একটি টিম বাংলাদেশে এসেছে।’ 

এর আগে, গত তিন মাস ধরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (নিন্স) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন আন্দোলনে আহত কাজল।

ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু জানান, ধীরে ধীরে তার উন্নতি হতে থাকে। কিন্তু গত দুদিন আগে হঠাৎ ইনফেকশন হয়। বেশ কয়েকবার তার ডায়রিয়া হয়। এতে রক্তচাপ কমে শকে চলে যান তিনি। পরে নিন্সে বোর্ড করে চিকিৎসা দেওয়া হতে থাকে। আজকে সকাল থেকে অবস্থা খারাপ হতে থাকলে আজও বোর্ড মিটিং বসে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কাজলের সর্বশেষ অবস্থা স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমকে জানানো হলে তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নেন। তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে শনিবার (১৬ নভেম্বর) নিন্সে পাঠান। নাহিদ এসে চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেন। তাকে দ্রুত থাইল্যান্ডের বেজথানি হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। 

তবে শনিবার হওয়ায় ভিসা পাওয়া যায়নি। তথ্য উপদেষ্টা তার ভিসা ও খরচের ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন। দুই মন্ত্রণালয় থেকেই সবুজ সংকেত পান তিনি। পরে কাজলকে এয়ার এম্বুলেন্সে থাইল্যান্ড পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।

এর আগে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে গণবিপ্লবে আহত মুসাকে এয়ার এম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সে অভিজ্ঞতা থেকেই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সাথে সাথে সিএমএইচে যোগাযোগ করেন। পরে তিনি এয়ার এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেন।

জানা গেছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ বিভাগের ছাত্র কাজল মিয়া জুলাইয়ের শুরু থেকেই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। পুরো জুলাই মাস ও আগস্টের শুরুতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে অংশ নেন। 

কাজলের বড় ভাই রুবেলের বাসা যাত্রাবাড়ীতে। ৪ আগস্ট ভাইয়ের বিয়ের বর্ষপূর্তিতে অংশগ্রহণের জন্য বড়ভাই রুবেলের বাসায় আসেন। পরের দিন ডাক আসে 'লংমার্চ ফর ঢাকা'। ৫ আগস্ট ভোরেই আন্দোলনে যোগদানের জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন কাজল। যাত্রাবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দেন। সেখানে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। পুলিশের গুলির মুখে সবাই রাস্তা ছেড়ে দিলেও সাহসিকতার সাথে দাঁড়িয়ে থাকেন কাজল। রংপুরের আবু সাঈদের মতো দু'হাত প্রসারিত করে বুক পেতে তিনি। পুলিশ তার মাথায় গুলি চালালে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন তিনি।

পরে লোকজন উদ্ধার করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (নিন্স) হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার মাথায় অপারেশন হয়। গত প্রায় তিন মাস হাসপাতালের হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে তার উন্নতি হতে থাকে। কিন্তু বাম হাত-পা পুরোপুরি অচল হয়ে যায়। তার জন্য প্রয়োজন রোবটিক ফিজিওথেরাপি। কিন্তু দেশে সে ব্যবস্থা নেই। সেজন্য মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় তাকে বিদেশে পাঠানোর।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence