আবরারকে নিয়ে পুরোনো পোস্ট শেয়ার দিয়ে যা বললেন সমন্বয়ক হাসনাত

আবরার ও  সমন্বয়ক হাসনাত
আবরার ও সমন্বয়ক হাসনাত  © সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ৫ বছর পূর্ণ হলো আজ। বুয়েটের শেরেবাংলা হলে নৃশংসভাবে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের একদল নেতাককর্মী। আবরারের মৃত্যুতে নিজের পুরোনো পোস্ট শেয়ার দিয়ে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন আমরা এই সিস্টেমটাকে ভেঙেছি, আবরার। 

সোমবার (৭ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে তিনি এ কথা লিখেন। 

২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ফেসবুক পেজে আবরার ফাহাদকে নিয়ে এক পোস্ট দেন সন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। নিজের পুরোনো পোস্টটি আবারও শেয়ার দিয়েছেন তিনি। পোষ্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো: 

আমি আবরার হত্যার আসামিদের ফাঁসি চাই না। আপনি যেদিন প্রথম হলে উঠবেন,ঘন্টাখানেকর মধ্যেই জানতে পারবেন, হালুয়া রুটি ভাগ হওয়ার মতো আপনিও বিভিন্ন দলে উপদলের নেতাদের মধ্যে ভাগ হয়ে গিয়েছেন। নতুন মৃত টাটকা লাশ কবরে শোয়ার জন্য যতটা জায়গা পায়, ঠিক ততটা  জায়গার জন্য আপনাকে সেদিন থেকে ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসেবে নিজের মেরুদণ্ড বিকিয়ে দিতে হবে। 

একটু শোয়ার জায়গার জন্য আপনাকে মধুতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হবে।আপনি যে উদ্দেশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন,অর্থ্যাৎ পড়াশোনা-মেধা-মননের বিকাশ,সেটি হয়ে যাবে গৌন; মূখ্য হয়ে যাবে,'নেতা তোমার ভয় নাই,রাজপথ ছাড়ি নাই'স্লোগান।যেখানে আপনি আপনার ক্যারিয়ারের ভ্যানগার্ড হওয়ার কথা,সেখানে আপনাকে  ভ্যানগার্ড হতে হবে পদপ্রত্যাশী নেতাদের প্রটৌকলের।তাদের নজরে পরার জন্য ক্লাস-লাইব্রেরি ফাঁকি দিয়ে হলেও প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক।

কোন কারনে প্রোগ্রাম মিস হলে শাস্তিস্বরুপ চার-পাঁচদিনের জন্য আপনাকে হারাতে হবে পাঁচফুট বাই দুইফুটের শোয়ার জায়গাটাও। এই একটা শোয়ার জায়গার দোহাই দিয়ে আপনাকে নিবেদিতে ছাত্র থেকে নিবেদিত পা-চাঁটা তেলবাজ চেতনাদারী হতে বাধ্য করা হবে। পড়াশোনা, ক্লাস,লাইব্রেরি সবকিছু ছাপিয়ে আপনি হবেন একটা কঙ্কালসাড় অন্তঃসারশূন্য চেতনাবাজ।

এই সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে আপনি যখন আবার সেকেন্ড ইয়ারে উঠবেন,বড় ভাই হবেন,তখন আবার এই চেতনার ঝান্ডা জুনিয়রদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার এজেন্ট হিসবে নিজে পৈশাচিক আনন্দ পাবেন।ফার্স্ট ইয়ারে নির্যাতিত হওয়া ছেলেটাই সেকেন্ড ইয়ারে উঠে নিপীড়কে ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।কারন,ফার্স্ট ইয়ারে তাঁদের মধ্যে তৈরি হয় ক্ষোভ, ঘৃণা, ক্রোধ।এই ক্রোধের আগুন তাঁরা সেকেন্ড ইয়ারে উঠে জুনিয়রদের সাথে মেটাতে থাকে।
এটা একটা নেভার এন্ডিং সাইকেল।

ফার্স্ট ইয়ারে আপনি নির্যাতিত,সেকেন্ড ইয়ারে আপনি নিপীড়ক। ক্যাম্পাসে কেউ নিপীড়ক হিসেবে আসে না।সবাই আসে আবরার হয়ে।সিস্টেম তাকে নিপীড়ক বানায়,সিস্টেম তাকে অনিক-অমিত-জিয়ন বানায়। যাকে মারা হলো এবং যারা মারলো তারা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের মেধাবীদের মধ্যে অন্যতম। যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেই তারা বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলো।তারা কেউই বুয়েটে আসার আগে ক্রিমিনাল একটিভিটিজের সাথে জড়িত ছিলো না।

আরও পড়ুন: আবরারের চলে যাওয়ার ৫ বছর, কী ঘটেছিল সেদিন

তাহলে কি কারনে আজকে তারা মেধাবী জিয়ন-অমিত-অনিক থেকে দন্ডপ্রাপ্ত খুনি জিয়ন-অমিত- অনিকে পরিণত হলো?

একটাই উত্তর,এই সিস্টেম। তাদের ফাঁসি দেওয়ার আগে আমাদের ফাঁসি দিতে হবে এই সিস্টেমের।ফাঁসি দিতে হবে তাঁদের,  যাঁদের দায়িত্ব ছিলো এই সিস্টেমটাকে ধ্বংস করার। ফাঁসি দিতে হবে তাঁদের, যাঁরা এই সিস্টেম তৈরি করেছে,পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। 
আমি অনিকদের ফাঁসি চাই না,আমি জিয়নের ফাঁসি চাই না, আমি ফাঁসি চাই যে সিস্টেম অনিক তৈরি করেছে, সেই সিস্টেমের। সিস্টেম বহাল রেখে হাজার অনিককে গন-ফাঁসি দিলেও কোন লাভ নেই।

যারা সিনিয়রটির উত্তাপে আরেক মায়ের ছেলের গায়ে হাত তুলতে বাঁধে না তারা এই ছবিটা মনোযোগ দিয়ে দেখেন।অনুধাবন করেন।অন্যায় বাপকেও ছাড়বে না।
এবার যাঁরা প্রথম বর্ষে ভর্তি হচ্ছো তোমাদের কাছে অনুরোধ, নিজের মেরুদণ্ড বিকিয়ে দিবে না,মাথা নত করবে না।ভাইয়ের হুকুমের গোলাম হবে না।ক্ষুদিরামের ভাষায় বলবো,'লড়ো।না লড়তে পারলে বলো ।না বলতে পারলে লেখো।না লিখতে পারলে সঙ্গ দাও।'

এই সিস্টেমটাকে ভাঙ্গো।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence