মাথায় হাতুড়ির আঘাতে শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্রীকে হত্যা, ঘাতককে গণধোলাই

ঘাতক ইলিয়াস হোসেন
ঘাতক ইলিয়াস হোসেন  © টিডিসি ফটো

বাড়ির সামনে দিয়ে ‘জোরে গান বাজিয়ে’ যাওয়ার অভিযোগে রোজিনা সুলতানা চুমকি নামে তৃতীয় শ্রেণির এক শারীরিক প্রতিবন্ধী তরুণীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাতক্ষীরায় সদরের লাবসা ইউনিয়নের থানাঘাটা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।। এসময় ক্ষুব্ধ জনতা ঘাতক ও তার মা-বাবাকে আটক করে করেছে।

নিহত প্রতিবন্ধীর নাম চুমকি খাতুন (২০)। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার থানাঘাটা গ্রামের রেজাউল ইসলামের মেয়ে ও সাতক্ষীরা সুইদ খাদিমুন্নেছা হানিফ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শ্রেণীর ছাত্রী।

ঘাতকের নাম ইলিয়াস হোসেন। তিনি একই গ্রামের আকরাম হোসেনের ছেলে। গণধোলাইয়ের শিকার ইলিয়াসকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শহীদুল ইসলামের স্ত্রী ছখিনা খাতুন জানান, থানাঘাটা এলাকার মাধব স্বর্ণকারের বাড়ির পাশে তিন রাস্তা মোড়ে শনিবার সকাল ৯টা থেকে মহফিল শুরুর কথা ছিল। সে কারণে সকাল পৌনে ৯টার দিকে তার মেয়ে ফাতেমাকে নিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী বোন চুমকি ওই মহফিল অনুষ্ঠানে খাবার কিনতে যাচ্ছিল।

সকাল ৯টার দিকে সে মাধব স্বর্ণকারের দোকানের সামনে পৌঁছাতেই পিছন দিক থেকে তার বাড়ির পাশের ইলিয়াস হোসেন হাতুড়ি দিয়ে বোন চুমকির মাথায় সজোরে আঘাত করে।

স্থানীয়রা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সাড়ে ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চুমকি মারা যায়। চুমকির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ইলিয়াস, তার বাবা আকরাম হোসেন, মা মনোয়ারা খাতুন, বোন নার্গিস ও ভগ্নিপতি লিটন, ভাগ্নে শান্ত ও শাওনকে আটক করে গণধোলাই দেয়। পরে র‌্যাব সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে।

ছখিনা খাতুন আরও জানান, ইলিয়াস একজন মাদকাসক্ত যুবক। তার বাবা একসময় ঢাকাগামী পরিবহনের চালক ছিল। ইলিয়াস সম্প্রতি পরিবহণ চালকের সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করত। মাদকাসক্তির কারণে ইলিয়াস ইতিপূর্বে নিজের মাকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছে। 

এমনকি তার (ছখিনা) ভাগ্নে আল আমিনসহ কয়েকজনের সাথে মারপিট করে ইলিয়াস। উৎপাত সহ্য করতে না পেরে পরিবারের লোকজন তাকে ধরে পুলিশের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। সম্প্রতি তার মা মনোয়ারা ও বোন নার্গিস তাকে জামিনে মুক্ত করে।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মমতাজ মুজিবর জানান, ভারী জিনিস দিয়ে চুমকির মাথায় আঘাতের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ জনিত কারণে সে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মারা গেছে।

সাতক্ষীরা সুইদ খাদিমুন্নেছা হানিফ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, চুমকি তার বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। ঘাতক ইলিয়াস একজন মাদকাসক্ত।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, আমি ঘটনাটি শুনেছেন। তারা কাউকে আটক করেননি। তবে র‌্যাব কাউকে আটক করতে পারে।

খুলনা র‌্যাব-৬ এর সাতক্ষীরা শাখার সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফয়সাল তারভির জানান, থানাঘাটায় এক শারীরিক প্রতিবন্ধীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসি ঘাতকসহ তার পরিবারের কয়েকজনকে ধরে রাখলে র‌্যাব গিয়ে তাদেরকে ক্যাম্পে নিয়ে আসে।


সর্বশেষ সংবাদ