প্রাণহানির ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  © টিডিসি ফটো

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণহানি ও সহিংসতার সুষ্ঠু তদন্তে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৪’ উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতিসংঘের কাছে আবেদন করেছি, আমরা আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন সংস্থা আছে বিশেষ করে বিদেশি, তাদের কাছেও আমরা সহযোগিতা চাই যে ঘটনা যথাযথ সুষ্ঠু তদন্ত এবং যারা এর সঙ্গে দোষী তাদের সাজার ব্যবস্থা (হয়)।

এই ঘটনায় সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা জুডিশিয়াল কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কারো দাবির অপেক্ষায় আমি থাকিনি। আগেই জুডিশিয়াল কমিটি করে দিয়ে, আজকে আবার আমরা নির্দেশ দিয়েছি আমরা একজন জজ সাহেবকে দিয়ে করেছি… সেটা আমি বলেছি আরও দুই জন জজ সাহেবকে দিয়ে, আরও দুই জন লোকবল বৃদ্ধি করে দিয়ে এবং তাদের তদন্তের পরিধি বাড়ানো।

আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীকে ছাড়াতে গিয়ে পুলিশের হাতে লাঞ্ছনার শিকার ঢাবি শিক্ষিকা

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গড়ে উঠা আন্দোলনে গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘাত হয় আন্দোলনকারীদের।

পরের দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় সংঘর্ষে এক ছাত্রলীগ কর্মী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, চট্টগ্রামে মুরাদনগরে ছাত্রদল নেতা, পথচারীসহ তিনজন এবং রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়।

আবু সাঈদ নামে ইংরেজি বিভাগের সেই ছাত্রকে পুলিশের গুলি করার ছবি ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ হয় ছাত্ররা। ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা আসে।

আরও পড়ুন: খুলনায় কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ

এই কর্মসূচি ঘোষণার দিন ১৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণে ছাত্রদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ছাত্ররা আদালতে ন্যায়বিচার পাবে বলে তার বিশ্বাস। প্রাণহানির তদন্তে বিচারবিভাগীয় কমিটি গঠন, আহত ও নিহতদের স্বজনদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণাও আসে।

তবে ১৮ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে ঢাকার বাড্ডা ও উত্তরায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। গুলিতে বেশ কয়েকজন ছাত্র নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন বিকেলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একযোগে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা হয়।

পরের দিনও ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, মহাখালী এলাকার পরিস্থিতি ছিল সংঘাতপূর্ণ। সেদিন মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ে। রাতে আসে কারফিউয়ের ঘোষণা।

আরও পড়ুন: আন্দোলনকারীদের পক্ষে কথা বলায় চবির ২ শিক্ষকের বাসার সামনে বোমা বিস্ফোরণ

কারফিউয়ের মধ্যেও সংঘর্ষ চলতে থাকে যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, মোহাম্মদপুরে। অবশেষে ২১ জুলাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

এই পাঁচ দিনের সংঘাতে সরকারের হিসাবে ১৫০ জনের প্রাণহানি হয়েছে, যদিও গণমাধ্যমে দুই শতাধিক মৃত্যুর কথা উঠে আসছে।

এসব ঘটনায় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্ত চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ৭৪ জন নাগরিক। সংঘাতে নিরাপত্তা বাহিনীর ‘অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সব ধরনের সহিংসতার ঘটনার ‘দ্রুত, স্বচ্ছ ও পক্ষপাতহীন’ তদন্ত এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: ক্যাম্পাসে থেকে সেতু ভবন পোড়ানোর মামলায় রিমান্ডে জাবির আরিফ

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিজের কোনো ঘাটতি ছিল না দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি বার বার আলোচনা, তাদের দাবি মানা…আর তাদের দাবি মানব কি, যেটা আমি করে দিয়েছি সেটাই তো, এটা তো আমারই করা (কোটা বাতিল করে পরিপুত্র), ইস্যুটা তো আমারই।

আপিল করা হয়েছে, অ্যাপিলেট ডিভিশনে, তারপর এই যে একটা ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে দেশকে পেছনে টেনে নেওয়ার এই চক্রান্তে যারা জড়িত, সেটা আপনাদের খুঁজে বের করা উচিত বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই একাত্তরে যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল, তাদের চক্রান্ত বার বার আমাদের দেশকে পিছিয়ে নিয়ে গেছে। এটা হচ্ছে সবচেয়ে কষ্টের, সবচেয়ে দুঃখের।

সরকার প্রধান বলেন, জানি না অপরাধটা কী ছিল আমার? যে ইস্যুটা নেই সেটা নিয়ে আন্দোলনের নামে এই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করে দেশের অর্জনকে নষ্ট করা, আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করাতে কে কী অর্জন করল সেটাই আমার প্রশ্ন? আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। সেই মর্যাদাকে কেন নষ্ট করা হল? এর বিচারের ভার দেশবাসীর কাছে দিলাম।

আরও পড়ুন: জাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ছয় বছর পর ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফেরার পর তাকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টার কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি তো জীবনের পরোয়া করিনি। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। দেশকে দারিদ্র মুক্ত করার পাশাপাশি ভূমিহীন-গৃহহীনকে বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়া, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে মানুষের জীবন যাপনকে আরো সহজ করে দেওয়াই আমার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু যেসব জিনিস মানুষকে সেবা দেয়, সেগুলোই হামলাকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হল।

নিজে স্বজন হারানোর কারণে স্বজন হারাবার বেদনা বোঝেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “তাই যারা আপনজন হারিয়েছেন তাদের প্রতি আমার সহমর্মিতা জানাচ্ছি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থাপনা যে ধ্বংস করেছে সেগুলো তো পুনর্গঠন করা যাবে, কিন্তু যে প্রাণগুলো ঝরে গেল সেগুলো তো আমরা আর ফিরে পাব না।


সর্বশেষ সংবাদ