সমন্বয়কদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ‘স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি’—যা বললেন ডিবির হারুন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪, ০৫:৪২ PM , আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৪, ০৫:৪২ PM
ডিবি হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের কাছ থেকে জোরপূর্বক বিবৃতি নেওয়ার বিষয়টি ‘গুজব’ বলে দাবি করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ডিবি কার্যালয়ের প্রধান ফটকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ দাবি করেন তিনি।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন বন্ধে জোরপূর্বক ছয় সমন্বয়কের কাছ থেকে বিবৃতি নেওয়ার অভিযোগটি গুজব। যারা এ গুজব ছড়িয়েছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ গুজব ছড়াবেন না।
ডিবি একটি আস্থার জায়গা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে (ডিবি) কাউকে আটকে রাখা হয় না। জোর করে বিবৃতি নেওয়া হয় না। তারা অনুভব করেছেন, সরকার তো সব দাবি মেনেই নিয়েছে। তারা আমাদের কাছে লিখিতভাবে বলেছেন। তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত বেড়ে ২১০
হারুন বলেন, আমরাও তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, ছাত্র ছিলাম। এ ছয় সমন্বয়ক যাদেরকে নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা এখানে এনেছি। তারা আমাদের সঙ্গে আছেন। তাদের ঘিরে অনেক গুজব চলছে। আমরা তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তাদের পরিবার ও সমন্বয়কদের নিরাপত্তাহীনতার কারণে আমরা নিয়ে এসেছিলাম।
তিনি বলেন, আজকে ডিবি হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়কের পরিবার কিন্তু বলেছে, তারা ভালো আছেন। তাদের পরিবার কিন্তু কাল রাতেও এসেছিল। আজও ডিবিতে এসেছে। পরিবারের সদস্যরা নিজেরাও দেখেছেন, তারা কেমন আছেন। তাদের পরিবারের লোকজন গণমাধ্যমে কথাও বলেছেন।
হারুন বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে আমরা মনে করি, যদি কোনো ব্যক্তি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেন, আমাদের কাছে আসেন, তাহলে আমাদের দায়িত্ব তাদের দেখভাল করা। সেটিই আমরা করছি।
আরও পড়ুন: কোটা আন্দোলনে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষতি ৩২ কোটি টাকা
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তারা (ছয় সমন্বয়ক) একটি বিবৃতি দিয়েছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে তারা আর নেই। গতকাল রাত থেকে আমরা গুজব ছড়াতে দেখছি, তারা স্বেচ্ছায় বিবৃতি দেননি। আমরা মনে করি, ডিবি কার্যালয় হলো মানুষের আস্থার জায়গা। মানুষকে হেনস্থা করা বা কারো প্রতি অন্যায় আচরণ করা, তা কখনোই ডিবি করে না, ভবিষ্যতেও করবে না।
গতকালও পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, দেখা করতে দেওয়া হয়নি। ডিবি হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়ককে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, এটি ঠিক নয়, গতকাল রাতেও পরিবারের লোকজন ডিবিতে এসে দেখা করেছেন। আজও দেখা করেছেন, কথা বলেছেন, সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তারা যে ভাল আছেন, সেজন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন।
এ অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আপনারা জানেন, এ কোটা বিরোধী আন্দোলনটা করেছিল কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তাদের ভেতরে ঢুকে জামায়াত-বিএনপি চক্র ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে। পুলিশ সদস্যকে ঝুলিয়ে হত্যা, মানুষ হত্যা করেছে। রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলোতে আগুন দিয়েছে। আমরা মনে করি, যদি আবার চক্রান্তকারীরা ঘোলা পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করে তাহলে, এ সমন্বয়কদের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হতে পারে। সেজন্য তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের দেখা দরকার।
আরও পড়ুন: ঢালাওভাবে মামলা-গ্রেপ্তার বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি সুজনের
আর কতদিন তাদের ডিবি হেফাজতে রাখা হবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তাদের এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছি। খুব শিগগির তারা পরিবারের কাছে চলে যাবেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশে এখন পর্যন্ত ২১০ জনেরও বেশি আন্দোলনকারী এবং শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের দাবি—এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনকারী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে। পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্য ও সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ এবং তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের হামলায় এসব আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলেও দাবি তাদের।
এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার বাতিল চেয়ে আন্দোলনে নামে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর আন্দোলন তীব্র হতে থাকলে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকার সমর্থকরা। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে মামলা হয়। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে।